শেষ বিচারের বিচারক হচ্ছেন মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ তায়ালা এবং তিনিই সকল কর্মের বিচার করবেন। এই দুনিয়াতে যেসব অপরাধ হচ্ছে তা বিচার করার জন্য রয়েছে আদালত। কথিত আছে, পৃথিবীতে বিচারকরা সৃষ্টিকর্তাকে প্রতিনিধিত্ব করেন। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের বিচার বিভাগের নামে একটি কলঙ্ক রয়েছে তা হল বিচারে বিলম্ব। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, Justice delayed is justice denied. অর্থাৎ, ‘বিলম্ব বিচার মানেই হচ্ছে বিচারে অস্বীকার’। অন্য যেকোনো অভিযোগের তুলনায় এই অভিযোগটি যথেষ্ট সত্য এবং অনস্বীকার্য। কিন্তু কেউ যদি সেই প্রথা ভেঙ্গে বিচারকার্য দ্রুত তথা যথাসময়ে নিষ্পত্তি করে, তবে তিনি শুধুই বিচার বিভাগের কলঙ্ক মুছতেই আসেননি, বরং বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে বিশ্বের দরবারে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরতে এসেছেন। আমাদের আজকের ফিচার রিপোর্টটি এমনি একজন বিচারককে নিয়ে যিনি মাত্র দুই বছরে ঢাকার সিএমএম কোর্টের বিচার পদ্ধতির যে রূপ দিয়েছেন তাতে ওনার হাত ধরে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ যে সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে তা বুঝতে আইনজ্ঞদের আর বুঝতে বাকি নেই।
এর আগে ১৯৯৮ সালে বাগেরহাট জেলায় তিনি বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে সহকারী জজ হিসেবে যোগদান করেন। অতঃপর যশোর ও বরগুনায় সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ কর্মজীবনের দক্ষতা ও একাগ্রতার ধারাবাহিকতা হিসেবে তাঁর এ পদে দায়িত্ব গ্রহন। দায়িত্ব গ্রহনের শুরু হতে অদ্যাবধি বিচার প্রার্থী জনগন তাঁর বিচারিক মানসের সর্বোচ্চ উৎকর্ষতার পরিচয় পেয়েছে। তিনি যেমন কাজ করেছেন ন্যায় বিচার প্রাপ্তির মৌলিক সূচক গুলোতে তেমনি সমান মনোযোগ দিয়েছেন বিচার প্রশাসনের পরিকাঠামোতে। তাঁর এ যুগোপযোগী পদক্ষেপে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন এবং ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বিচার প্রার্থীদের ভোগান্তি হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। মৌলিক বিচারিক কাজে যেমন তিনি তাঁর অধীনস্থ ম্যাজিষ্ট্রেটদের উৎসাহিত করেছেন, দিয়েছেন প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা, তেমনি বিচার প্রশাসন ব্যবস্থাপনা যেমন মালখানা, হাজতখানা, রেকর্ডরুম, নকলখানা ব্যবস্থাপনায় নিয়েছেন যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এসব পদক্ষেপে তিনি সবসময়ই থেকেছেন নৈর্ব্যক্তিক এবং সাবলীল।
মামলা নিস্পত্তি ঃ
গণপ্রাজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম অঙ্গীকার হচ্ছে জনগনের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। জনগনের প্রতি সংবিধানের সেই অঙ্গীকার রক্ষায় তিনি প্রথমেই নজর দেন দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরনে। ঢাকার সি.এম.এম হিসাবে তাঁর যোগদানের সময় বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ৩,০৩,৪১৮/ টি। মামলার শ্রেণী ও প্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে তিনি দ্রুত মামলা নিস্পত্তিতে পদক্ষেপ নেন। মোটরযান আইনে তৎকালীন বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১,৫৯,২৫০টি। মোটরযান আইনের প্রসিকিউশন রিপোর্ট সমূহ পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, সিংহভাগ প্রসিকিউশন রিপোর্ট আইনতঃ ত্রুটিপূর্ণ। আসামীর নাম, ঠিকানা, অভিযোগকারীর নাম, ঠিকানা, ঘটনাস্থলের বিবরণ, সাক্ষীদের নাম প্রসিকিউশন রিপোর্টে নেই। এ ধরনের মামলাগুলি তিনি আইনানুগ পথে নিস্পত্তির নির্দেশনা প্রদান করেন। তার দায়িত্ব প্রাপ্তির পর থেকে জুলাই ২০১৭ইং পর্যন্ত মোটরযান আইনের ২,১৭,৯৪০টি মামলা নিস্পত্তি করা হয়েছে। মামলা বিচারাধীন আছে ৪৯,২৮৪টি। যে সকল মামলা আইনানুগ পদ্ধতিতে দায়ের করা হয়েছে সে সকল মামলায় প্রসিকিউশন রিপোর্ট গ্রহন করে আসামীদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রসেস ইস্যু করা হয়েছে।
দায়িত্ব পাবার পরেই তিনি প্রতিটি আদালত থেকে মামলার পরিসংখ্যান তলব করেন। এর পরে মামলার শ্রেনীকরন করে পুরাতন মামলা (২০১০ইং এর পূর্বের দায়েরকৃত মামলা) অগ্রধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির নির্দেশনা প্রদান করেন। ফৌজদারী মামলার দীর্ঘসূত্রিতার ১টি অন্যতম কারন হচ্ছে পুলিশ কর্তৃক সঠিক সময়ে সাক্ষীকে আদালতে হাজির না করা। সি.এম.এম মহোদয় দায়িত্ব নেবার পর থেকেই এ সমস্যা নিরূপনে উদ্যোগ নেন। সাক্ষীর সমন, ডব্লিউ/ডব্লিউ, এনবি/ডব্লিউ ডব্লিউ সঠিকভাবে ইস্যু করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে সর্বেক্ষনিক তত্ত্বাবধায়ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালত গুলোকে নির্দেশনা দেন। পুলিশ কর্তৃক সাক্ষী সঠিক সময়ে উপস্থাপিত না হলে সাক্ষীর প্রতি ইস্যুকৃত প্রসেস পুলিশ কমিশনার ও আই.জিপির মাধ্যমে প্রেরনের নির্দেশ দেন। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৮৫এ ধারা প্রয়োগ করতে বলেন। অনেক সময় দেখা যায় যে একই ম্যাজিস্ট্রেট/ডাক্তার/তদন্তকারী কর্মকর্তা এক আদালতের অনেকগুলো মামলার সাক্ষী। সি.এম.এম মহোদায় এরূপ মামলা চিহ্নিত করে সে সকল মামলার তারিখ একই দিন ধার্য্য এবং একই দিনে যাতে তাদের সাক্ষ্য গ্রহন করা হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এরূপ নির্দেশনার ফলে মামলার দ্রুত নিস্পত্তি হয় এবং আদালতের কর্মঘন্টার অপচয় রোধ হয়। এসব উদ্যোগের ফলে নিস্পত্তির হার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ২০১৪ ইং সালে অর্থাৎ বর্তমান সি.এম.এম যোগদানের পূর্বের বছর সি.এম এম আদালত মোট নিস্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ছিল ১,০১,৪৪৯ টি। তাঁর যোগদানের পর ৬ই আগস্ট’ ২০১৫ ইং হতে ডিসে¤¦র’ ২০১৫ ইং পর্যন্ত নিষ্পত্তি করা হয় ১,৩৭,১৪৫টি মামলা। ২০১৬ ইং সালের নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ১,৬৮,৮৩৬টি এবং ২০১৭ ইং সালের জানুয়ারী হতে জুলাই পর্যন্ত নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ১,৩৭,০১৩টি। বর্তমান সি.এম.এম যোগদানের তারিখ হতে অর্থাৎ গত ০৬/০৮/১৫ ইং হতে জুলাই’২০১৭ ইং তারিখ পর্যন্ত নিষ্পত্তিকৃত মোট মামলার সংখ্যা ৪,৪২,৯৯৪ টি। বর্তমানে সি.এম.এম আদালতে ২,০৫,৫২৫ টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
প্রশাসনিক উদ্যোগঃ
জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করনে বর্তমান সি.এম.এম মহোদয় প্রতিদিন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটগণের রিমান্ড ও জামিন শুনানীর অধিক্ষেত্র পরির্বতন করেন। এ পরিবর্তনের ফলে বিচারে অহেতুক হস্তক্ষেপ ও দালাল টাউটদের দৌরত্মা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। উল্লেখ্য যে, পূর্বে রিমান্ড ও জামিন শুনানীর অধিক্ষেত্র সপ্তাহান্তে ১ বার পরিবর্তন করা হত। এছাড়া প্রতিটি আদালতের আদেশ প্রতিদিন প্রয়োজন মতে তিনি পর্যালোচনা করে থাকেন। কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। এছাড়া তিনি বিচারপ্রার্থী জনগণ সংশ্লিষ্ট সি.এম.এম মহোদয়ের বিভিন্ন আদেশ প্রকাশ্য নোটিশ বোর্ডে লটকিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া এ সমস্ত আদেশ সংশ্লিষ্ট বিচারক, জি.আর সেকশন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় শাখায় ইমেইল এর ম্যধ্যমে প্রেরন করা হয়ে থাকে। অতি সম্প্রতি তিনি বিচারপ্রার্থী জনগণের দূর্ভোগ লাঘব করতে ২টি হেল্পডেস্ক খোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। হেল্পডেক্স গুলো জনগণকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে। সি.এম.এম আদালতের মূল ভবনটি ১০ তলা। বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য লিফটের সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল। তিনি নতুন ১টি লিফট উদ্ভোধনের মাধ্যমে কিছুটা হলেও জনগণের কষ্ট লাঘব করতে সমর্থ হয়েছেন। বিচারিক কাজের পরিবেশ সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন করার জন্য তিনি আদালতে সৌন্দর্য বর্ধনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। এছাড়া দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বিচারক আইনজীবীরা জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মূল ভবনের সামনে মেটাল ডিটেক্টর স্থাপন করেছেন। সম্প্রতি সকল আদালতে অনলাইনে কজলিস্ট চালু হয়েছে। বিচারপ্রার্থী জনগন যে কোনো স্থান থেকে তাদের মামলার আদেশ ও পরবর্তী তারিখ মুহুর্তেই জানতে পারছে। অনেক টাউট দালাল ভুয়া ওয়ারেন্টর মাধ্যমে জনগনকে হয়রানি করে থাকে। বর্তমান সি.এম.এম মহোদয় দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই এ বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নেন। তিনি জড়িতদের সনাক্ত করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়েরের নির্দেশনা দেন। তার গৃহীত পদক্ষেপের ফলে সি.এম.এম আদালতে ভুয়া ওয়ারেন্টের সংখ্যা অনেকাংশে কমে গেছে। তার এসকল উদ্যোগ বিচার সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে স্বস্তি এসেছে।
ডিজিটাল হাজিরা পদ্ধতি উদ্ভাবনঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানের প্রতিশ্রুতি ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ০১/০২/২০১৭ ইং তারিখ সকাল ৯.০০ ঘটিকায় ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ডিজিটাল হাজিরার শুভ উদ্বোধন করা হয়। আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের সঠিক সময়ে আদালতে উপস্থিতি নিশ্চিত করণের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী জনসাধারনের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে “ডিজিটাল এটেনডেন্স মেশিন” স্থাপন করা হয়। উদ্বোধনকালে মাননীয় সি.এম.এম মহোদয় বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের স্বপ্নের সাথে অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্বিত। তিনি আশা প্রকাশ করেন ডিজিটাল হাজিরা পদ্ধতির মাধ্যমে অত্র আদালতের কর্মচারীদের সঠিক সময়ে আদালতে আগমন ও প্রস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। যার ফলশ্রুতিতে সাধারন বিচারপ্রার্থী জনগণ সর্ব্বোচ্চ সেবা পাবে।
অনুলিপি বিভাগঃ
ঢাকার সি.এম.এম আদালত প্রতিদিন অনুলিপির জন্য বিপুল সংখ্যক আবেদন দাখিল হয়। অল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে এ বিপুল সংখ্যক আবেদন নিস্পত্তিতে আনেক সময়েই জটিলতা তৈরী হয়। তিনি সি.এম.এম হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর নকলখানা পরিদর্শন করে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন। অনেক সময় দেখা যায় যে, নকলের আবেদন পাবার পর সংশ্লিষ্ট আদালতকে অবগত করানো হয়না এবং নথি প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা যায়। সি.এম.এম মহোদয় নকলের আবেদন প্রাপ্তির সাথে সাথে দ্রুত সংশ্লিষ্ট আদালতকে অবগত করানোর নির্দেশনা প্রদান করেন। গত ২৭/১১/২০১৬ ইং তারিখের স্বারক নং ১৮৮ মূলে নকলখানার স্টাফ ব্যতিত স্টেনোগ্রাফার ও স্টেনো-টাইপিস্ট দ্বারা নকল প্রস্তুত করে সরবরাহের আদেশ প্রদান করেন। তাঁর এ দিক নির্দেশনার ফলে নকল প্রদানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। গত ০৬/০৮/১৫ইং তারিখ হতে জুলাই ২০১৭ সাল পর্যন্ত মোট ৫৬,২৬৪/টি আবেদনের বিপরীতে মোট ৫,৭৪,৯৮২ পৃষ্ঠা নকল সরবরাহ করা হয়েছে।
রেকর্ড রুমঃ
২০০৮ ইং সালের পরে দীর্ঘদিন ধরে সি.এম.এম আদালতের রেকর্ডরুমের নথি অবিন্যস্ত অবস্থায় ছিল। বর্তমান সি.এম.এম দায়িত্ব নেবার পর থেকে রেকর্ডরুমের আধুনিকায়নে হাত দেন। বর্তমানে সি.এম.এম কোর্টের রেকর্ডরুমে রেকর্ডের সংখ্যা ১০ লক্ষাধিক। সি.এম.এম মহোদয় এ বিপুল সংখ্যক রেকর্ড ব্যবস্থাপনার যুগোপযোগী উদ্যোগ গ্রহন করেন। একটি জনবান্ধব সফটওয়্যার তৈরী করেন। যাতে মুহুর্তেই কম্পিউটারের মাধ্যমে ১টি রেকর্ডের অবস্থান সঠিকভাবে নিরুপিত হয়। সফটওয়্যারে ইতমধ্যে ডাটা-এন্ট্রি দেওয়া শুরু হয়েছে এবং আগামী কিছু দিনের মধ্যে রেকর্ডরুমের একটি ই-আর্কাইভ তৈরী করা সম্ভব হবে। ৯৮৮০ টি রেকর্ড ধ্বংসযোগ্য হওয়ায় সম্প্রতি তালিকা প্রস্তুত করত সংশ্লিষ্ট সকলকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
হাজতখানাঃ
সি.এম.এম আদালতের হাজতখানায় প্রতিদিন প্রায় ৬০০ আসামী আসে। অনেক সময় আসামীর সংখ্যা বেড়ে যায় এবং হাজতখানায় স্থান সংকুলান হয় না। শিশু ও মহিলাদের জন্য পৃথক কক্ষ প্রয়োজন। চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় ইতোমধ্যে কয়েকবার হাজতখানা পরিদর্শন করেছেন। তিনি কয়েদীদের জন্য নিরাপদ পানি এবং শিশুদের মাতৃদুদ্ধ পানকক্ষ নির্মাণ হাজতীদের পরিছন্ন বাথরুম সুবিধা নিশ্চিত করেছেন। এছাড়াও ১০টি নতুন ফ্যান সংযোজন ও পুরাতন ফ্যান মেরামত করা হয়েছে।
মালখানাঃ
মামলার আলামত মালখানায় সংরক্ষণ করা হয়। নতুন ভবনে ৪টি মালখানা অবস্থিত। সেখানে ইং ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অনিস্পত্তিকৃত ১,১৭,৮৭২ টি সাধারন আলামত, ৮,১৪৯ টি অস্ত্র, ৪০,৮১০ টি গুলি, ৫৩৬ টি গুলির খোসা, ২৩৫ টি অস্ত্রের আলাদা ব্যারেল, ৬০টি ব্যায়নেট, ২৯৮ টি ম্যাগজিন, ইনভেন্টরি অস্ত্র ১৮২০টি ও ৩০৩ টি এ.আর অস্ত্র রয়েছে। সাধারন আলামত ২৮,০৩৩টি এবং অস্ত্র ১,২১৯টি নিষ্পত্তি করা হয়। বিপুল সংখ্যক আলামতের কারনে মালখানায় নতুন আলামতের স্থান সংকুলান হয় না। অনেক সময়ই আলমত থানায় রাখতে হয়। সাক্ষীকে পরীক্ষা করার সময় দেখা যায় যে, উক্ত আলামত আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। তখন সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবী রাখতে হয়। এছাড়া অনেক আলামতের কোনো এম.আর নম্বর নেই। সি.এম.এম হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পর জনাব শেখ হাফিজুর রহমান এ সমস্যগুলো সমাধানে পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি কর্তৃপক্ষকে সমস্যাগুলি লিখিতভাবে অবগত করেছেন এবং মালখানা রেজিষ্টারগুলো হালনাগাদ ও পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। পুর্ণাঙ্গ রেজিষ্ট্রার তৈরীর কাজ ইতিমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে। মালখানা রেজিষ্টারগুলো পুর্ণাঙ্গরূপে তৈরী হওয়াতে মামলার বিচার ও কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
আলামত ধ্বংসঃ
ঢাকা সি.এম.এম আদালতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ আলামত বিধি মোতাবেক ধ্বংস করা হয়ে থাকে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সুষ্ঠু না হওয়ায় অনেক সময় ধ্বংসকৃত আলামত উপচিয়ে পাশের রাস্তায় চলে যায় এবং পথচারীদের চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ সমস্যা দূরীকরনে সি.এম.এম মহোদয় Waste incinerator স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন। Waste incinerator এর অবকাঠামোর প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে এবং Waste incinerator এর কাজ সমপূর্ণভাবে শেষ হলে আলামত ধ্বংসের ফলে উদ্বুত সম্যসার সমাধান হবে বলে সবাই আশাবাদী।
জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরনে ও বিচার প্রশাসনে গতি বৃদ্ধি করার জন্য তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সভা, সেমিনারে গঠনমূলক মতামত প্রদান করেন। ২০১৫ ও ২০১৬ ইং সালে অনুষ্ঠিত ২টি জাতীয় বিচার বিভাগীয় সমে¥লনে দেশের সমস্ত বিচারকের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতির সম্মুকে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এছাড়া অন্যান্য আরো বিভিন্ন সভা সেমিনার তিনি আইনের বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরে সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
একজন মানুষের কর্ম তাঁর মৌলিক পরিচয় তৈরী করে। বিচার বিভাগ ও বিচারপ্রার্থী জনগনের জন্য ঢাকার সি.এম.এম জনাব শেখ হাফিজুর রহমান নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই তার কর্ম পদ্ধতি রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছে।যে দক্ষতা দেখিয়েছেন তাতে এটা স্পষ্ট যে অতি শীঘ্রই ঢাকার সিএমএম আদালত
এর মামলার জট অতীত ইতিহাস হয়ে যাবে এবং পারিবারিক ও ব্যক্তিজীবনের সীমাবদ্ধতার গন্ডি পেরিয়ে একজন মানুষের সত্যিকারের কর্মী নেতা হয়ে ওঠার গল্প হচ্ছেন জনাব শেখ হাফিজুর রহমা ন। আমরা আশা করি জনাব শেখ হাফিজুর রহমানকে আমরা উচ্চ আদালতেও দেখতে পাবো শখে হাফজিুর রহমানকে আমরা উচ্চ আদালতওে দখেতে পাবো এবং তাঁর এ বিশাল কর্মযজ্ঞ অব্যাহত থাকবে এ প্রত্যাশা বিচার বিভাগ ও বিচার প্রত্যাশী সকলের।
লেখকঃ এ.বি.এম. শাহজাহান আকন্দ, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
সম্পাদক, বিডি‘ল’নিউজ.কম
ফিচার সম্পাদক, আইন পাতা, দৈনিক বাংলাদেশ টুডে।
ইমেইলঃ law.abm@gmail.com
Discussion about this post