আমি অনেক কষ্টে এগুলো নিয়ে কথা বলেছি । তাকে আমার বোঝাতে হয়েছে দুর্নীতি আর নীতির পার্থক্য । আগেকালের দিনে নীতি দিয়ে উদাহরণ টেনে বোঝানো হত দুর্নীতি আর নীতির পার্থক্য আর এখন ঠিক তার উল্টোটি !
ছোটবেলায় দেখতাম মা বাবা আমাদের সামনে তাদের ব্যক্তিগত আলাপগুলোও করতো না । প্রেম কথাটাও অনেক লজ্জার বিষয় ছিল । এখনও কিছু কিছু জিনিস মানুষ সন্তানদের কাছ থেকে আড়ালে রাখে আর সেগুলোকে লজ্জার বিষয় হিবে ধরা হয় । কনডম, স্যানিটারি ন্যাপকিন এই আড়ালে রাখা গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নতুন পেপারের গন্ধ নিয়ে পড়তে শুরু করা আমিই আমার সন্তানকে শিখিয়েছিলাম । বাসে তরুণী ধর্ষনের খবরটি ছাপা হয় আজ । আমার মেয়ে ঘুম থেকে উঠেই পেপার হাতে নেবে এবং যথারীতি এ কথাটি জিজ্ঞেস করতে পারে ভেবেই রাতে যখন পত্রিকা রিভিশন দিয়েছি তখন থেকেই ভেবেছি সকালে সবার ওঠার আগে পত্রিকা লুকোতে হবে!
কি আশ্চর্য আমি সকাল হওয়ার আগেই উঠে বসে প্রস্তুতি নিচ্ছি পত্রিকা সরানোর! যে পত্রিকা দিয়ে বিশ্ব জানার দরজা খোলার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হত সেই পত্রিকা এখন লুকোনোর জিনিস হয়ে যাচ্ছে । শুধু শিশুরাই নয় বড় যেকোন মানুষই যদি ঘুম থেকে উঠে ধর্ষনের পর ঘাড় মটকে তরুণীকে মেরে ফেলা হয়েছে এমন সংবাদ দেখে তবে সে আর নিজেকে স্বাভাবিক মানুষ ভাবতে পারবেনা ।
তবে কি সত্যিই আমরা অমানবিক হতে চলেছি ? যদি বিদ্যার মাধ্যমকে লুকিয়ে রাখা শিখতে হয় তবে যে দহন মনে সৃষ্টি তা কি বোধের দেয়ালকে একটুও ক্ষত বিক্ষত করেনা ?
একটি একটি দিন যাচ্ছে আর মানবতা যেন শেকড় সহ উপড়ে পড়ছে আমাদের চোখের সামনে । তবে কি সঠিক বিচারহীনতার উপরই এই দায় গিয়ে পড়তে পারে ?
কালকের ঘটনাটিতে দেখলাম ধর্ষন করার পরের দিনও গাড়ির স্টাফরা খুব স্বাভাবিকভাবেই গাড়ি চালিয়েছে ও অন্যান্য কাজ করেছে । তারমানে তারা নিজেরা এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখেনি । মনে মনে ভেবেই নিয়েছে এটা স্বাভাবিক !
সামাজিক কোন অবস্থাতে পৌছলে পৃথিবীর জঘন্যতম অপরাধকেও স্বাভাবিক ভাবে নেওয়া যায়! আমরা প্রতিনিয়তই একটি ঘোরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি । যদি কোন কাজকে আপনি চিহ্নিত করতে যান দেখবেন সে কাজটিও এখন পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে হচ্ছে এবং যা পরিমাপ যোগ্যতার চেয়েও বেশী । আমাদের দেশের দিকে তাকালেও স্পষ্ট হবে এই ধারনাটিতে । বেশিরভাগ অপরাধগুলোর ক্ষেত্রে এই ব্যপারটি স্পষ্ট । সব ধরনের অপরাধ হচ্ছে এখন কিন্তু দায়ী কে এর পেছনে ?
প্রশ্নের উত্তর নেই কিন্তু সন্তানদের শেখানোর ক্ষেত্রে! আমরা যে দিন দিনই পলায়ন শিখছি তাতে কি কোন লাভ হচ্ছে ? সামাজিক স্তর বিন্যাসে অপরাধের যে স্তর বাড়ছে তার সঠিক কারণ কি ? বিচার হীনতাকে বেশী দায়ী করবেন নাকি অনৈতিকতাকে ?
আমি সত্যিই আমার শিশুর সামনে থেকে সংবাদপত্র কেড়ে নিতে চাইনা । তাকে বলতে চাই এ পৃথিবীর সব মানুষই ভালো । আমি শেখাতে চাই অপরাধ যারা করে তারা মানুষ নয় অন্য কোন জাত বিশেষ । কিন্তু কি করে তা সম্ভব ?
শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নামের লিষ্ট ধরিয়ে দিয়ে সন্তানকে তাদের ইতিহাস জানাই এবং পর মুহূর্তেই বার্মার ঘটনা দেখে যদি সে জিজ্ঞেস করে বাবা এই সূচিই কি নোবেল পেয়েছিলেন শান্তিতে তখন তাকে কি জবাব দিয়ে সঠিক উত্তর দেওয়া হবে বলে মনে করেন আপনি ?
সন্তানের কান পর্যন্ত শিক্ষা পৌছে দেওয়া ও আমাদের আচরণের ফারাগ অনেক বেশী হয়ে যাচ্ছে । সমাজের অনৈতিক চরিত্রগুলো যত বাড়বে ততই এই ফারাগ আর পলায়ন বাড়বে । এ থেকে বের হতে হলে শক্ত ও দ্রুত অপরাধের বিচারিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবেই । রাষ্ট্রকেই এ দায়িত্ব নিতে হবে । প্রতিটি সকাল শিশুদের সামনে একটি সুন্দর সকাল হিসেবে দিতে চাইলে দেশের নৈতিক অবক্ষয়গুলো বন্ধে দ্রুত কাজ করতে হবে । আসুন সভ্যতার পথে নিজেরাই কাজে নামি দ্রুত আর রাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ প্রমানিত অপরাধের সাজা যেন এক মাসের মধ্যে শেষ করা হয় ।
Discussion about this post