খুব ছোটবেলায় যখন বাবার সাথে বিকেলে ঘুরতে যেতাম তখন একদিন কমলাপুর রেল স্টেশনের সামনে কয়েকজন পুলিশের সাথে দেখা হয়ে যায় । বাবাকে বলি বাবা পুলিশের রাইফেলটা কাছ থেকে দেখবো । বাবা আমাকে নিয়ে যান । সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই এক পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে কোলে তুলে নেন । জিজ্ঞেস করেন আমার দিকে আঙ্গুল তুলে কি দেখাচ্ছিলে বাবা তোমার বাবাকে । আমি বলি আমি দেখাচ্ছিলাম আপনার রাইফেলটাকে । তখন তিনি আমাকে ওটা দেখান আর বলেন এটা হচ্ছে দেশ রক্ষার হাতিয়ার । যখন পোষাক পড়ি তখন মনে হয় আমি দেশের জন্য ভালো একটি কাজ করার উদ্দ্যেশ্যে পোষাক পড়ছি । প্রতিটি সকালই এমন হয় । তিনি আরো বললেন তুমিও কি দেশ সেবা করতে চাও ? আমি মাথা নেড়ে স্বীকার করেছিলাম । তিনি আমাকে বললেন তো ঠিক আছে বড় হয়ে তুমিও পুলিশ হবে তবেই দেশের মানুষকে শান্তিতে রাখতে পারবে ।
খুব মনে পড়ে সেই দিনটার কথা । সেদিন থেকে পুলিশের প্রতি আমার আলাদা একটা শ্রদ্ধার জায়গা তৈরী হয়ে আছে । এখনও প্রায়ই দেখি এবং আমার শিশুকে দেখাই রাস্তায় পুলিশ বাহিনীর অবিরাম কষ্টের চিত্রগুলো । এই তো গত বছরের কথা আমি রাজার বাগ পুলিশ লাইন হয়ে মালিবাগের দিকে আসছিলাম । ফ্লাই ওভার নির্মাণের কারণে প্রচুর ধুলোর কারণে দাঁড়াতেই পারছিলাম না । আর সেখানে দেখলাম কয়েক জন পুলিশের অবিরাম জ্যাম কমানোর প্রচেষ্টা । তারা সারাদিন ধরে এভাবে ডিউটি পালন করে যাচ্ছেন । যেখানে আমি এ মুহূর্ত থাকার সময় নাক ধরে আসছি সেখানে একজন পুলিশের সারাদিন অতিবাহিত করা কেমন স্বাস্থ্য ঝুকির ব্যপার হতে পারে !
অবাক হয়েছিলাম কিছুদিন আগের একটি ঘটনায় । পুলিশ নিজে একজন শিশুকে উদ্ধার করে জীবন রক্ষা করে দুর্ঘটনা কবলিত একটি বাস থেকে । সেই ছবিটা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে আমরা প্রচন্ড আবেগ তাড়িত হয়ে পড়ি ।
২০০৭-০৮ সালের কথা মনে পড়ে খুব । হঠাৎ গাজীপুরের শ্রীপুরে ডাকাতের উপদ্রব বেড়ে যায় । গ্রামে পাহাড়ার ব্যবস্থা করে জনসাধারণ । এর কয়েকদিন পরই তৎকালিন আমাদের শ্রীপুর থানার ওসি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করার জন্য টহল শুরু করেন । ডাকাতি কমে আসে এবং আমরা স্বস্তি পাই । তখন পুলিশের পক্ষ থেকে ঐ নিরাপত্তা টুকু হাফ ছেড়ে বাঁচার জন্য আমাদের বিশ্বাস জোগায় ।
কিন্তু বর্তমানে এসে কেমন যেন ভিন্নভাবে দেখা যাচ্ছে পুলিশ বাহিনীর কর্মকান্ডগুলো । কিছুদিন আগেও গাজীপুরে ডিবি পুলিশের চাঁদাবাজির কথা উঠে আসে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় । আমরা শুণে সত্যিই খুব কষ্ট পাই তবুও যেন কিছুই করার নেই । কিন্তু গতকালের ব্যপারটি সত্যিই সহ্যের সীমাকে ও বিশ্বাসের দেয়ালকে ভাঙ্গতে যথেষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে । সাতজন ডিবি পুলিশ সেনাবাহিনীর কাছে আটক হলেন মুক্তিপনের টাকা সহ!
আমরা আসলে এভাবে দেখতে চাইনা । পুলিশের নাম অথবা পুলিশের পোষাক আমাদের কাছে স্বজনের মত, নির্ভরতার প্রতীকের মত, নিজেকে নিরাপদ ভাবার অবলম্বনের মত ।
পুলিশ কেন দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়ছে তার কারণ খুঁজে বের করা দরকার । একজন পুলিশ দুর্নীতি করার কারণে সমগ্র আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর তার দায়ভার চলে যাওয়াকে আমরা ভালোভাবে নিতে পারিনা । আমরা চাই নির্ভতার প্রতীক সকল আইন শৃঙ্ক্ষলা বাহিনী আমাদের কাছে শ্রদ্ধার প্রতীক হয়ে থাক । শিশুরা খুব করে অনুসরন করে একজন পুলিশ পোষাক পড়া কোন মানুষকে । যারা এত অনুসরনীয় মানুষ তাদের পেশার সাথে কলঙ্ক যুক্ত হলে আমরা আসলে কাদের উপর ভরসা রাখবো ?
এজন্য যারা দোষী তাদের শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি যারা ভালো অবদান রাখছে তাদের পুরুস্কারের ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল করতে হবে । আমাদের সবচেয়ে বড় স্বজন পুলিশ আমাদের নির্ভতার প্রতীক হয়ে আমাদের পাশে থাকবে এটাই সবচেয়ে বড় চাওয়া একজন সাধারণ জনগণ হিসেবে ।
Discussion about this post