আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিচারকদের জন্যে ডিসিপ্লিন রুলস শীঘ্রই হয়ে যাবে। তবে আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিচারবিভাগের স্বাধীনতার জন্যে কোনো স্বাধীন সচিবালয় দরকার আছে বলে মনে হয় না। মনে হয় না এটার খুব প্রয়োজন। তাদের জন্য যে ডিসিপ্লিন বা রুলস শীঘ্রই হয়ে যাবে। তবে স্বাধীনতার জন্য একটা সচিবালয় দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না। আর ইনডিপেনডেন্ট প্রসিকিউশন সার্ভিসের দিকেও কিন্তু আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এখন যদি শতভাগ ইনডিপেনডেন্ট প্রসিকিউশন করি এটা কিন্তু গ্রহণযোগ্য হবে না। বর্তমানে এধরনের ইনডিপেনডেন্ট প্রসিকিউশন আমরা তিরিশভাগ চাইছি এবং ধারাবাহিকভাবে তা সফলতার সাথে শতভাগে গিয়ে দাঁড়াবে।
দেশের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ রায়ের ১০ বছর পূর্তি হয়েছে। তবে দেশের সিনিয়র আইনজীবীরা মনে করছেন এই পৃথকীরণ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন হয়নি আজও। আর এজন্য তারা দায়ী করছেন দেশের রাজনৈতিক সরকারের অনীহাকে। এ ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয় যথাযথ ভূমিকা নেয়নি বলেও অভিযোগ করছেন তারা।
সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলছেন, কাগজে কলমে পৃথক হলেও ১০ বছর পর এসেও প্রকৃত অর্থে পৃথক হতে পারেনি বিচার বিভাগ। সুপ্রিম কোর্টকে প্রয়োজনীয় লোকবল ও অবকাঠামো দেওয়া হয়নি। পৃথক সচিবালয় হয়নি। নিম্ন আদালতের কার্যক্রম সুপ্রিম কোর্ট যাতে তদারকি করতে পারে সে জন্যে এধরনের সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। একটা নীতিমালার মধ্যে দিয়ে নিম্ন ও উচ্চ আদালতের বিচারকদের নিয়োগ করার কথা ছিল, তাও হয়নি। সরকারি উকিলদের রাজনীতির উর্ধ্বে রেখে একটি ভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়নি। যে আশা আকাঙ্খা নিয়ে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ হয়েছিল তা বাস্তবায়ন হয়নি।
১০ বছর আগে বিচারবিভাগ পৃথকীকরণ করা হলেও, এরপর এবিষয়টি নিয়ে নানান সময়ে নির্দেশনা এসেছে আপিল বিভাগ থেকে। কখনো কখনো যা গণমাধ্যেমেরও শিরোনাম হয়েছে। সিনিয়র আইনজীবী আমিরুল ইসলাম বলেন, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ কার্যকর করতে আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিমকোর্টকে এক যোগে কাজ করা উচিত। ষোল অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ও সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শের জায়গায় আইন মন্ত্রণালয়ের এসে যাওয়াটা সঠিক বাস্তবায়ন নয়। আইন মন্ত্রণালয়ের সচেতনতা থাকা জরুরি যে রুল স্পিকিংএর ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আলোচনায় একটা প্রাইভেসির মধ্যে দিয়ে অনুমোদন আসবে আইনমন্ত্রণালয়ে।
বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ করতে আইন মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছেন আমিরুল ইসলাম তা মানতে রাজি নন আইনমন্ত্রী। সুপ্রিম কোর্টের স্বতন্ত্র সচিবালয়, নিম্ন আদালতের বিচারক শৃঙ্খলা বিধি বা স্বাধীন প্রসিকিউশন এসব ব্যাপারে সিনিয়র আইনজীবীরা বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন।
নিজেদের নানা বঞ্চনা নিয়ে নব্বই দশকে হাইকোর্টে একটি রিট করে ছিলেন দেশের নিম্ন আদালতের বিচারকেরা। পরে এটি যায় আপিল বিভাগে। সেখান থেকে ১৯৯৯ সালের শেষ দিকে যে রায় আসে তাতে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করতে দেওয়া হয় ১২ দফা নির্দেশনা। এরপর নানা রাজনৈতিক বিতর্কের পর বিচার বিভাগ আনুষ্ঠানিক ভাবে পৃথক হয় ২০০৭ সালের পহেলা নভেম্বর। আর তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা সমর্থিত এক তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
Discussion about this post