দণ্ডাদেশের ক্ষেত্রে ‘যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাবাস’ সংক্রান্ত আপিল বিভাগের দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ দায়ের করা হয়েছে।
আজ রোববার (৫ নভেম্বর) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিভিউ দায়ের করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
এর আগে গত ২৪ এপ্রিল সাভারের এক হত্যা মামলায় আপিল বিভাগের ৯২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণাকালে ‘যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাবাস’ বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
ওই হত্যা মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বলেছেন, যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু (ন্যাচারাল লাইফ) কারাবাস। তখনই আমি এর প্রতিবাদ করেছি। আমি বলেছি, দণ্ডবিধির ৫৭ ধারায় যাবজ্জীবন দণ্ড অর্থ ৩০ বছর কারাবাস। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা কারাগারে রেয়াত পেলে দণ্ড আরও কমে আসে।’
ওই সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সাভারের ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে যাবজ্জীবন দণ্ড দেন আদালত। তবে আদেশে বলেছেন, যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর নয়, আমৃত্যু কারাদণ্ড।’
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে সাভারে জামান নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ২০০৩ সালে দ্রুত বিচার আদালত তিন জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। হাইকোর্টে আপিলের পর বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল থাকে। আপিলের পর চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনজনের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
রায়ে বলা হয়, দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় কোনো অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া একটি ব্যতিক্রম। কমানোর মতো বিশেষ পরিস্থিতি থাকলে আদালত মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই কারণ উল্লেখ থাকতে হবে।
রায়ের অভিমতে বলা হয়, দণ্ডবিধির ৫৩ ধারার সঙ্গে ৪৫ ধারা মিলিয়ে পড়লে যাবজ্জীবন অর্থ দণ্ডিত ব্যক্তির বাকি জীবন কারাবাস। আপিল বিভাগ অথবা হাইকোর্ট বিভাগ যদি কোনো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন এবং নির্দেশ দেন কয়েদিকে বাকি জীবন (ন্যাচারাল লাইফ) ভোগ করতে হবে, এমন মামলায় রেয়াত (কারাভোগে রেয়াত) সুবিধার আবেদন বাইরে থাকবে।
অভিমতে আরও বলা হয়, যদি কোনো অপরাধী বিচারের প্রাথমিক পর্যায়ে দোষ স্বীকার করেন, সে ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো শাস্তিযোগ্য অপরাধে আদালত বা ট্রাইব্যুনাল দণ্ড প্রদানে নমনীয় দৃষ্টি দেখাতে পারেন। তবে এ ধরনের মামলার ক্ষেত্রে আদালতকে নিশ্চিত হতে হবে যে অপরাধী কোন অপরাধে নিজেকে দোষী বলে স্বীকার করছেন, তা যাতে সে বুঝতে পারে। আপিল বিভাগ বা হাইকোর্টের দণ্ড কমানোর পরও সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি কোনো দণ্ড মার্জনা, স্থগিত করতে ও কমাতে পারেন।
Discussion about this post