টাঙ্গাইলে জাকিয়া সুলতানা রুপাকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর হত্যা মামলায় আজ তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। সোমবার সকালে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক আবুল মনসুর মিয়া মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।
মামলার আসামিরা হলো, ছোঁয়া পরিবহনের সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) এবং চালক হাবিবুর (৪৫) ও সুপারভাইজার সফর আলী (৫৫)। ।টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতের বিশেষ পিপি একেএম নাসিমুল আক্তার ও বাদীপক্ষের আইনজীবী এস আকবর খান জানান, সোমবার সকালে গ্রেফতারকৃত আসামিদের আদালতে উপস্থিত করা হয়। তাদের উপস্থিতিতে চাঞ্চল্যকর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।মামলার তৃতীয় দিন যে চারজন সাক্ষ্য দেন তারা হলেন- এম এ রৌফ, হাসমত আলী, লাল মিয়া, ইমাম হোসেন। পরে আদালত মামলার পরবর্তী তারিখ মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) ধার্য করেন। গত রবিবার মামলার দ্বিতীয় দিন যে (৭ জানুয়ারি) চার জন স্বাক্ষ্য দেন তারা হলেন- রশীদ মিয়া, প্রবীর এম কুমার, আবুল হোসেন ও রহিজ উদ্দিন।গত বুধবার (৩ জানুয়ারি) মামলার বাদী মধুপুর অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ নেওয়া হয়। এ নিয়ে মোট নয় জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, চার্জশিটে আসামিদের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের (সংশোধিত ২০০৩) ৯ এর তিন ধারায় গণধর্ষণের অভিযোগ এবং দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় হত্যার অভিযোগ, ২০১ ধারায় লাশ গুমের অভিযোগ এবং ৩৪ ধারায় সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে। চার্জশিটে ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পুলিশ ও চিকিৎসকসহ পাঁচ/ছয়জন সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন।উল্লেখ্য ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রুপাকে চলন্ত বাসে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্ষণ করে। পরে তাকে হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে রেখে যায়। পুলিশ ওই রাতেই তার লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।রুপার ভাই গত ২৮ আগস্ট মধুপুর থানায় এসে লাশের ছবি দেখে রুপাকে সনাক্ত করেন। পরে পুলিশ ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর (৪৫), সুপারভাইজার সফর আলী (৫৫) এবং সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীরকে (১৯) গ্রেফতার করে। পুলিশের কাছে তারা রুপাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে। গত ২৯ আগস্ট বাসের তিন সহকারী শামীম, আকরাম, জাহাঙ্গীর এবং গত (৩০ আগস্ট) চালক হাবিবুর এবং সুপারভাইজার সফর আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বর্তমানে আসামিরা সবাই টাঙ্গাইল কারাগারে আছে।
গত ৩১ আগস্ট কবর থেকে রুপার লাশ উঠিয়ে তার ভাইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তাকে সিরাজগঞ্জের তারাস উপজেলার নিজ গ্রাম আসানবাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়। (১২ সেপ্টেম্বর) ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সাইফুর রহমান খান ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা দেন। এতে মাথায় আঘাত জনিত কারণে রুপার মৃত্যু হয় হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। মৃত্যু আগে রুপাকে ধর্ষণ করা হয় বলেও লেখা হয়।
Discussion about this post