রংপুর প্রতিনিধি: রংপুরের বিশেষ আদালতের পিপি ও জঙ্গি মামলার সরকার পক্ষের প্রধান আইনজীবী রথিশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা নিখোঁজ হওয়ার চার দিন পেরিয়ে গেলেও তার কোনও সন্ধান পায়নি পুলিশ।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আজ সোমবার (২ এপ্রিল) দুপুরে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াত- শিবিরের পাঁচ নেতাকর্মীসহ ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, এ নিখোঁজের ঘটনায় তিনটি ক্লু পেয়েছে তারা। এর সূত্র ধরে চলছে তদন্ত।
তবে পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, বাবু সোনাকে কেউ অপহরণ করেনি, তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। এ ছাড়াও এ ঘটনার সঙ্গে জঙ্গিদের সংপৃক্ততার বিষয়টিও আমলে নিচ্ছে না পুলিশ, বরং নিখোঁজ বাবু সোনার ব্যক্তিগত, পারিবারিক আর দেবোত্তর সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব- এই তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছে পুলিশ।
সূত্র আরও জানিয়েছে, গত শুক্রবার (৩০ মার্চ) সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর থেকে কেন তার দুটি মোবাইল ফোনই বন্ধ ছিল, সেটি গোয়েন্দাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এমনকি তিনি বাসা থেকে বের হওয়ার আগে লাল রঙের একটি মোটর সাইকেল নিয়ে পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তি বাসার গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকার বিষয়টিকেও আমলে নিচ্ছে না পুলিশ। কারণ, তার স্ত্রী দীপা ভৌমিক এবং একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী নিশ্চিত করে বলতে পারেননি, ওই মোটর সাইকেলে করেই তিনি বাসা থেকে বের হয়েছেন কিনা।
পুলিশ বলছে, ওই এলাকার সিটি টিভির ফুটেজ পরীক্ষা করে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ছাড়া তিনি কোন পথ দিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছেন, তা-ও সিসি টিভি ফুটেজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
পুলিশের আইটি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাবু সোনা নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন রাতে সর্বশেষ এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন। পুলিশ তাকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ নেয়ার জন্য তিনি ফোন করেছিলেন। এ ছাড়া, পুলিশ এ পর্যন্ত বাবু সোনার সঙ্গে কথা হয়েছে এমন অন্তত ৩৫ জনকে থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে কোতয়ালী থানা সূত্রে জানা গেছে। বাবু সোনার চেম্বারের কয়েকজন জুনিয়র আইনজীবীসহ সেখানে সব সময় তার সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাবু সোনা নগরীতে কার কার বাসায় যাতায়াত করতেন, সেসব বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে পুলিশ।
পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, গত দুদিন ধরে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন বাবু সোনার স্ত্রী কন্যাসহ স্বজনদের সঙ্গে একটি বিষয় নিয়ে দফায় দফায় কথা বলেছে। সেইসঙ্গে তার পাসপোর্টের সন্ধান করেছে পুলিশ। কী বিষয় নিয়ে পুলিশ এত কথা বলছে, তা জানাতে অবশ্য ওই সূত্র রাজি হয়নি।
এদিকে পুলিশ বলছে, যে তিনটি বিষয় নিয়ে তারা তদন্ত করছে তা হলো- যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলায় বাবু সোনা যুদ্ধপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। ফলে জামায়াত-শিবিরের এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা। দ্বিতীয়ত, বাবু সোনার দেবোত্তর সম্পত্তি নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে যে দ্বন্দ্ব রয়েছে, তারা জড়িত কিনা এবং তৃতীয় বিষয় হচ্ছে, পারিবারিক ও তার ব্যক্তিগত বিষয়। তবে পুলিশ তৃতীয় বিষয়টির ওপরই জোর দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
দুদিন আগে নিখোঁজ বাবু সোনার বাসায় গিয়েছিলেন রংপুর রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুখ। তিনি তার স্ত্রীসহ স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বাবু সোনা অপহৃত হননি, এটা তারা নিশ্চিত হয়েছেন। তবে তিনি নিখোঁজ বলা যেতে পারে। তার নিখোঁজ হওয়ার পেছনে জঙ্গি সম্পৃক্ততা, পারিবারিক ও ব্যক্তিগতসহ অন্য বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে। আশা করি ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ ঘটনায় জামায়াত-শিবিরে পাঁচ নেতাকর্মীসহ তার সঙ্গে মামলা রয়েছে এমন চার জনসহ ৯ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে আজ সোমবারও বাবু সোনার সন্ধান পাওয়ার দাবিতে রংপুর আইনজীবী সমিতি, আইনজীবী সহকারী সমিতি, ক্ষত্রিয় সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।
Discussion about this post