ডেস্ক রিপোর্ট: কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন।
আজ সোমবার (৯ এপ্রিল) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন করে ঢাকা-আরিচা সড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, শাটল ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, রাজশাহী-নাটোর সড়ক অবরোধ ও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করছেন। এ ছাড়া কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকাল পৌনে ১০টার দিকে এ অবরোধ শুরু করেন।
এ সময় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ‘শাহবাগে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘ছাত্রলীগের হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘শেখ হাসিনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই,’ ‘আমাদের দাবি আমাদের দাবি, মানতে হবে মেনে নাও,’ ‘কোটা দিয়ে কামলা নয়, মেধা দিয়ে আমলা চাই,’ ‘১০%-এর বেশি কোটা নয়’ এসব স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে আনতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আন্দোলনকারীদের দুপাশে অবস্থান করছে দুই শতাধিক সশস্ত্র পুলিশ।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। পুলিশ হামলা করলে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। আমরা কোনোরূপ বিশৃঙ্খলা চাই না।
এর আগে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পদক্ষিণ করে মহাসড়ক অবরোধ করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে প্রধান ফটকের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা সেখানে বিক্ষোভ করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ এখনো আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে যাননি।
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছেন। সকাল থেকে শুরু হওয়া ওই বিক্ষোভ মিছিল পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করছে। বিভিন্ন বিভাগ ও হল থেকে ছাত্রছাত্রীরা বের হয়ে মিছিলে যোগ দিচ্ছেন। আজ বেশির ভাগ বিভাগেই ক্লাস–পরীক্ষা হয়নি। তবে প্রক্টর মাহবুবর রহমান দাবি করেন, ক্যাম্পাসে ক্লাস পরীক্ষা স্বাভাবিক রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, সকাল নয়টা থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা সবাই এই যৌক্তিক আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। এ জন্য কোনো ক্লাস হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ফেসবুকে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ছবি দেখে খুবই খারাপ লাগছে। মেধার মূল্য বোঝা উচিত সবার। তা না হলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব না। তাই আমিও আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি।’
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর মাহবুবর রহমান বলেন, ‘ক্যাম্পাসে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আমি প্রধান ফটকের সামনে আছি। আশা করছি, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এই ক্যাম্পাসে ঘটবে না।’
কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ক্লাস বর্জন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। এই কোটা সংস্কার দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তারা তাদের এ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলেও জানান।
এদিকে ক্লাস বর্জনের পাশাপাশি নগরীর ষোলশহর এলাকায় জড়ো হয়ে ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ষোলশহর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, আন্দোলনরত প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী কোটা সংস্কার দাবিতে শাটল ট্রেন অবরোধ করে রেখেছেন। সকালের সব ট্রেন ছেড়ে গেলেও অবরোধের কারণে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের বিশ্ববিদ্যালয়গামী ট্রেনটি ষোলশহর স্টেশনে অবস্থান করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিপুল পরিমাণ পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী এনামুল হক বলেন, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বিপুল সংখ্যক মহিলা পুলিশ দেখতে পাই। এছাড়া ট্রেনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা একেবারে নেই বললেই চলে।
অপরদিকে সকালে বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখে চারটি ট্রেন ছেড়ে গেলেও তাতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় কম ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থী শূন্য শ্রেনীকক্ষও। কেউ কেউ ক্লাস করতে এলেও, সহপাঠীদের অনুরোধে তারাও ক্লাস বর্জন করছেন। তবে ক্লাস বর্জন হলেও বিভিন্ন বিভাগের পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আজকের পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষাও বর্জন করছেন।
এদিকে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ।
আন্দোলনকারীরা সকাল ৭টায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেয় এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে থাকে। পৌনে ৮টার দিকে শাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রধান ফটকে এসে তাদেরকে গেট অবরোধ না করার অনুরোধ করেন। পরে শিক্ষার্থীরা গেটের পাশেই অবস্থান করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। কোনো ধরনের বৈষম্যের সাথে আপোষ করবেন না তারা।
শাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান বলেন, ‘অহিংস আন্দোলন করার গণতান্ত্রিক অধিকার এই দেশে সকলেরই রয়েছে। আমরা তাদেরকে বলেছি আপনারা অহিংস আন্দোলন করতে পারেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে নয়।’
এদিকে আন্দোলনকে বানচাল করতে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। শাহপরাণ হল থেকে আন্দোলনে আসার সময় শাবি ও সিলেট বিভাগীয় সম্বন্বয়ক মো. নাসির উদ্দিনের ফোন কেড়ে নিয়ে হলে দেড় ঘণ্টা আটকিয়ে রাখে শাখা ছাত্রলীগ। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ইমরান খানের উপস্থিতিতে ঘটানো হয়েছে বলে জানা গেছে। পরবর্তীকালে বিষয়টি জানাজানি হলে নাসিরের ফোন দিয়ে দেওয়া হয়।
আটকিয়ে রাখার কথা স্বীকার করে শাবি ও সিলেট বিভাগীয় সম্বন্বয়ক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, `হল থেকে আসার সময় মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে আমাকে শাহপরাণ হলের গেস্ট রুমে দেড় ঘণ্টা আটকিয়ে রাখা হয়। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের আন্দোলন চলবে।`
এদিকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, এমসি কলেজ, সরকারি কলেজ, মদন মোহন কলেজেও শিক্ষাথীরা ধর্মঘট পালন করছেন। দুপুরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মিছিল নিয়ে নগরীর চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেবেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে সড়ক অবরোধও করবেন তারা।
কোটা পদ্ধতির সংস্কারের পাঁচ দফা দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সকাল থেকে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি চললেও দুপুর সাড়ে ১১টা থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে শুরু করেছেন বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। এতে বরিশাল থেকে ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনা রুটসহ নগরীর উত্তর প্রান্তের সড়কগুলোতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
বরিশাল-পটুয়াখালী মিনি বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকেই কীর্তনখোলা নদীর ওপরে শহীদ আব্দুর রব সেনিয়াবাত সেতুসংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। আর তখন থেকেই চলছে তাদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ। এতে করে রাস্তার দুই প্রান্তে অসংখ্য যানবাহন আটকে রয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘কোটা পদ্ধতির সংস্কারের পাঁচ দফা দাবিতে আমরা শিক্ষার্থীরা আজ সোমবার সকাল থেকেই এখানে অবস্থান নিয়েছি। সেই সাথে মধ্যরাতে রাজধানী ঢাকায় আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
একই দাবিতে বরিশাল বিএম কলেজের সামনে বিক্ষোভসহ সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
পৃথক দুই স্থানেই বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রয়েছে বলে জানান বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এস এম রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোগান্তি হয় এমন কোনো আন্দোলন করা যাবে না। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করলে পুলিশ বাধা দেবে না। পরিস্থিতি বুঝে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে ও শাহবাগে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গোপালগঞ্জে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়ক অবরোধ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
পরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সদর উপজেলার ঘোনাপাড়ায় গিয়ে অবস্থায় নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বাঁশ, ব্লক ও ইট দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়ক অবরোধ করেন। তারা কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
অবরোধের কারণে সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় সড়কের দুই পাশেই অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘অবরোধ তুলে দেওয়ার জন্য কাজ করা হচ্ছে।’
Discussion about this post