বিডি ল নিউজঃ রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় হাত হারানো তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজিব হাসান চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার ঘটনায় তার দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল আবেদনের (লিভ টু আপিল) শুনানি শেষে হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী সোমবার (২১ মে) দিন নির্ধারণ করেছেন আপিল বিভাগ। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ওই আবেদনের শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার (১৭ মে) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ আদেশের এই দিন নির্ধারণ করেন। আদালতে বিটিআরসি’র পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এবিএম বায়েজীদ। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান। রাজীবের পরিবারের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘হাইকোর্ট থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেওয়া হয়েছে। সে আদেশে আমাদের (বিটিআরসি) ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়। কিন্তু কার কতটুকু দায় তা পরিমাপ না করে কিংবা তদন্ত না করে ক্ষতিপূরণের এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ ধরণের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হয়। এছাড়া বিআরটিসি সরকারের টাকায় চলে। তারা কীভাবে ক্ষতিপূরণ দেবে? এসব কারণে হাইকোর্টের আদেশের বিআরটিসি’র অংশ স্থগিত চেয়ে আমরা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছি। সে বিষয়ে আপিল বিভাগ আগামী ২১ মে আদেশ দেবেন।’
গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার (১০ মে) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় বিআরটিসির আইনজীবী ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামানের প্রতিনিধিত্বে দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের মালিককে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। কেন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান বলেন, কার কতটুকু দায় সেটা পরিমাপ কিংবা তদন্ত না করে ক্ষতিপূরণের আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর এ ধরনের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হয়। এছাড়া বিআরটিসি সরকারের টাকায় চলে। তারা কীভাবে ক্ষতিপূরণ দেবে? এসব কারণে হাইকোর্টের আদেশের বিআরটিসির অংশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। যেখানে একমাসের মধ্যে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ ছিল।
আবেদনে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হয়েছেন মো. জহিরুল ইসলাম। বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার (৮ মে) ওই আদেশ দিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার আদেশের পর বিআরটিসির আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় বিআরটিসি বাসটির অবহেলাজনিত দায় ছিল কিনা সেটি মূল্যায়ন করা জরুরি। বিআরটিসি যে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দিতে প্রস্তুত, যদি তা সঠিক প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, মোটর ভেহিকল অর্ডিন্যান্সের ১২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করতে হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তারেক মাসুদের পরিবারের করা ক্ষতিপূরণের মামলায় সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে ক্ষতিপূরণের আদেশ হয়েছে। তাই আমি মনে করি এই মামলায় আজকের আদেশটি অনাকাঙ্ক্ষিত। আদেশটি বিআরটিসি কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। নির্দেশনা পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে আমি মনে করি আদেশটি আপিলযোগ্য।
আদেশের পর আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, রাজীবের খালা জাহানারা পারভীন ও রাজীবের গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদের ছেলে কাস্টমস কর্মকর্তা ওমর ফারুকের নামে সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় একটি যৌথ হিসাব খোলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ওই হিসাবে একমাসের মধ্যে দুই বাস কর্তৃপক্ষ ২৫ লাখ করে মোট ৫০ লাখ টাকা জমা দেবেন। টাকা জমা দেওয়ার পর আগামী ২৫ জুনের মধ্যে আদালতকে দুই কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করবেন।
২৫ জুন এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ওই দিন বাকি ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশ আসতে পারে বলেও জানান ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে হাত কাটা পড়ে রাজীবের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
হাইকোর্ট এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুল জারিসহ রাজীবের চিকিৎসার খরচ দুই বাস মালিক বিআরটিসি এবং স্বজন পরিবহনকে বহনের নির্দেশ দেন। রুলে তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক কোটি টাকা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইন সংশোধন বা নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
এ রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৬ এপ্রিল (সোমবার) দিনগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব হোসেন।
এরপর ৬ মে (রোববার) বিষয়টি আদালতকে অবহিত করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এরপর আদালত অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে রাজীবের দুই ভাইয়ের জন্য ক্ষতিপূরণের জন্য এ আদেশ দেন।




Discussion about this post