নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষার্থীদের স্নেহ-মমতা দিয়ে রাজপথ থেকে ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশিত সমন্বিত উদ্যোগে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও অভিভাবকদের যৌথ প্রচেষ্টা এবং শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কারণে দেশের সব স্কুল-কলেজে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসতে শুরু করেছে।
সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গতকাল রবিবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে রাজধানীর সকল স্কুল-কলেজ প্রধানদের জরুরি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে কোনো শিক্ষার্থীই যেন ক্লাসের বাইরে অবস্থান না করে তা নিশ্চিত করতে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে যৌথভাবে উদ্যোগী হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়। যেসব শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত থাকবে না তাদের তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়।
এ নির্দেশনার আলোকে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে সোমবারের শিক্ষার্থী উপস্থিতিবিষয়ক তথ্য যথারীতি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরে পাঠিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য বিন্যাস করে আগামী দুয়েকদিনের মধ্যেই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে জানিয়েছেন মাউশির কর্মকর্তারা। কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার স্বাভাবিক পাওয়া না গেলে তা খতিয়ে দেখবে মন্ত্রণালয়।
মহানগরীর সকল কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ এবং মাধ্যমিকের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের মতবিনিময়ের পর থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মধ্যে এ তৎপরতা দেখা গেছে।
মাউশির কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনার পরই শিক্ষক, অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানরা উদ্যোগী হয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিয়ে আসা নিশ্চিত করছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক যৌথভাবে রাজপথেও নজরদারি করেছেন, যেন কোনো শিক্ষার্থীই ক্লাস ছেড়ে বাইরে যেতে না পারে। তবে সোমবার আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো কম।
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল শতকরা ৭০ ভাগের কাছাকাছি। বৃষ্টির কারণে উপস্থিতি কিছুটা কম বলে জানালেন অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস। তিনি বললেন, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে ও শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ রক্ষার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
বৃষ্টির কারণে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মর্নিং শিফটে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে গেলেও ডে শিফটে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল সালাম। তবে খারাপ আবহাওয়ায় উপস্থিতি এমনই থাকে বলে তিনি দাবি করলেন। শুধু বৃষ্টির কারণেই গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল খালেক।
তবে কয়েকজন অভিভাবক জানালেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শেষের দিকে কিছুটা ভয় আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ জন্য সন্তানদের আর বাইরে যেতে দেননি। শিক্ষামন্ত্রীর উদ্যোগে ক্লাসে ফেরায় সন্তানদের আগ্রহ বেড়েছে। তবে রাস্তায় গণপরিবহনের সংকট রয়েছে।
সেগুনবাগিচায় বসবাসকারী আরজুমান নামে এক অভিভাবক বললেন, একদিকে রাস্তায় যানবাহন নেই। আরেকদিকে কিছু আতঙ্ক রয়েই গেছে। তারপরও সন্তানদের পড়ালেখা ক্ষতি যেন না হয় সে জন্য স্কুলে পাঠাতেই হচ্ছে।
এদিকে সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)-এর নগরভবনে ‘নিরাপদ সড়ক ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক মুক্ত আলোচনায় এ ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে দক্ষিণ সিটির ৪২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘সোনামনিদের নিরাপদে বেড়ে উঠা আমরা দেখতে চাই। তোমরা ক্লাসে ফিরে যাও, তোমাদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে আমাদের যতটুক করণীয় সেটা করবো।’
অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত আলোচনায় আজিমপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঐশান্তি দাস বলে, ‘আমাদের নয় দফা আন্দোলনের প্রধান স্লোগান ছিল “নিরাপদ সড়ক চাই”। আমরা প্রতীকী কর্মসূচি করে সে দাবি সরকারের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। সরকার আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে। এখন আমরা রাজপথ ছেড়ে ক্লাসে ফিরতে চাই। তবে সরকারকে আমাদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে নতুন কোনো দুর্ঘটনায় আর কোনো শিক্ষার্থী বা সাধারণ মানুষ প্রাণ না হারায়।’




Discussion about this post