নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয়েছে শোকরানা মাহফিল। এর আগেই আলেমদের সমাগমে এক প্রকার জনসমুদ্রে পরিণত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
আজ রবিবার সকাল নয়টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে মাহফিল শুরু হয়।
কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির স্বীকৃতি দিয়ে সংসদে আইন পাস হওয়ায় এই ‘শোকরানা মাহফিল’-এর আয়োজন করেছে কওমি মাদরাসাগুলোর ছয় বোর্ডের সমন্বিত সংস্থা আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়্যাহ বাংলাদেশ।
গায়ে পাঞ্জাবি-পায়জামা আর মাথায় টুপি পরে স্রোতের মতো টিএসসি ও মাজার গেট দিয়ে মাহফিল স্থানে প্রবেশ করছেন সারাদেশ থেকে আসা বিভিন্ন মাদরাসারর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান শাইখুল হাদিস আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ আগেই ঘোষণা দিয়েছেন শোকরানা মাহফিলে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ উপস্থিতির জন্য প্রস্তুতি রয়েছে।
রাজধানীতে এ বড় সমাবেশ সামনে রেখে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছে। আজকের পূর্বনির্ধারিত জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ৯ নভেম্বর সকাল ৯টায় ওই পরীক্ষা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম ছায়েফউল্যা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনার স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান শনিবার দুপুরে পরিদর্শন করেন জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও জমিয়াতুল উলামার চেয়ারম্যান শাইখুল হাদিস আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি নির্বাচনী সমাবেশ নয়; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসার জন্য নজিরবিহীন একটি কাজ করেছেন, যা এর আগে কেউ-ই করেনি। আমরা তাকে শুকরিয়া জানাতেই একত্র হচ্ছি।
হেফাজতে ইসলাম একসময় সরকারের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল, এখন পক্ষে চলে এসেছে কীভাবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে আল্লামা মাসউদ বলেন, হেফাজতে ইসলাম সরকারের বিরুদ্ধে ছিল না।
তারা শাপলা চত্বরে তাদের দাবি সরকারের কাছে পেশ করেছিল। আর এখন তো অনেক বড় একটি কাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করে দিয়েছেন। কওমি মাদ্রাসা স্বীকৃতি, আইন পাস করানো ছোট কোনো বিষয় নয়। এটি নজিরবিহীন।
আলেমদের এ সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনো দাবি রাখা হবে কিনা জানতে চাইলে মাসউদ বলেন, সে রকম কোনো বিষয়ে সম্মিলিত পরামর্শ হয়নি। তবে জামায়াত নিষিদ্ধকরণ, কাদিয়ানিদের মিথ্যাচার প্রচারের বিরুদ্ধে আলোচনা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়েও ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সহসভাপতি মাওলানা ইয়াহয়া মাহমুদ, মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ইমদাদুল্লাহ কাসেমী, বাংলাদেশ জমিয়াতুল উলামার মহাসচিব মাওলানা আবদুর রহিম কাসেমী, অভিভাবক পরিষদ সদস্য মাওলানা আইয়ুব আনসারী, ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা মাসউদুল কাদির প্রমুখ। সারা দেশে ১৩ হাজার ৯০২টি কওমি মাদ্রাসায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী আছে।
এদিকে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। থানা পুলিশ, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ ছাড়াও আয়োজক আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবীরা নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর চারপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও এপিবিএনের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। শাহবাগ ও টিএসসি মোড়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে পুলিশের সাঁজোয়া যান। ইউনিফর্মের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।
সরেজমিন শাহবাগ, মৎস্যভবন, হাইকোর্টের সামনের এলাকা, দোয়েল চত্ত্বর, টিএসসি থেকে সোহরাওয়র্দী উদ্যানের প্রতিটি প্রবেশ পথে সতর্ক অবস্থা দেখা গেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের। এ ছাড়া প্রতিটি প্রবেশপথে বসানো হয়েছে আর্চওয়ে। মেটাল ডিটেক্টর ও হাতে তল্লাশীর মধ্য দিয়ে সভাস্থলে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের কারণে রাজধানীর শাহবাগ মোড়, মৎসভবন, দোয়েল চত্বর এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে সবধরনের যানবাহন প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে ভেতরে সীমিত আকারে যানচলাচল করছে।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, জনসভায় বিপুল জনসমাগমের কথা মাথায় রেখে পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নেয়া হয়েছে।




Discussion about this post