
নিজস্ব প্রতিবেদক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ভরাডুবির’ পর দল পুনর্গঠনের দাবি উঠেছে বিএনপিতে। মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন চাইছেন দলের নেতারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নির্বাচনের পর আমাদের নেতাকর্মীদের হতাশা তৈরি হয়েছে, দল বিপর্যস্ত। এসবের দায় দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির নেতারা এড়াতে পারেন না। তাছাড়া শোনা যাচ্ছে, মহাসচিব সংসদে যোগ দেয়ার জন্য বিদেশি কূটনীতিকদের মাধ্যমে তারেক রহমানের ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছেন। কেউ বা তাদের ব্যবসা ধরে রাখার ফায়দা আঁটছেন। সার্বিক বিষয় বিবেচনা রেখে দল পুনর্গঠন হওয়া দরকার। তবে অসম্মানজনকভাবে কাউকে বিদায় দেয়া উচিত হবে না। আগামী মার্চে কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে চলেছে। আগামী জুন-জুলাইতে কাউন্সিলের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে এসব পরিবর্তন আনলে দলকে গতিশীল করা সম্ভব হবে।
জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে প্রায় একযুগ আগে বহিষ্কৃত হন শাজাহান মিয়া সম্রাট। তারপরও বিএনপির সভা-সমাবেশ- প্রেস কনফারেন্সে সক্রিয় তিনি। গত ৯ জানুয়ারি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্রাটের সঙ্গে কথা হয় আমাদের প্রতিবেদকের।
নির্বাচনের পর বিএনপি নেতাকর্মীদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সরকার নির্বাচনের নামে তাদের ক্ষমতা নবায়ন করেছে। আমাদের নীতি নির্ধারকরা কৌশলগতভাবে ফেল করেছে। আমাদের নেতাকর্মীদের অবস্থা ভালো নেই। এখন আমাদের দলের মহাসচিব পরিবর্তন হওয়া দরকার। একজন শক্ত সাংগঠনিক লোককে মহাসচিব করা দরকার। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলের নীতি নির্ধারক পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত পুনর্গঠন হওয়া দরকার। তিনি বলেন, আমি ৪০ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। গত একযুগ ধরে বহিষ্কৃত। আশা করি দল পুনর্গঠন হলে আমি কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হব।
দল পুনর্গঠন প্রশ্নে বিএনপি নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের খপ্পরে পড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিএনপি। দল পুনর্গঠনের জন্য যে পরিবেশ দরকার সে পরিবেশ এখন দেশে বিদ্যমান নেই। পুনর্গঠন আমরা কাদের দিয়ে করব? নেতাকর্মীরা তো এলাকা ছাড়া। মিথ্যা মামলায় তারা ফেরারি হয়ে ঘুরছে। ঢাকায় ঘুরছে কিন্তু জামিন হচ্ছে না। তাদের যদি আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে না পারি তাহলে কীভাবে আমরা দল পুনর্গঠন করব। আমাদের দল পুনর্গঠন তো তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দিয়েই করতে হবে। তারাই যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে না পারে তাহলে কাদের দিয়ে করব? দল পুনর্গঠনে সবার আগে আমাদের প্রয়োজন নেতাকর্মীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা। জামিনের ব্যবস্থা করা, এলকায় অবাধ বিচরনের সুযোগ সৃষ্টি করা।
এবিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, আমি মনে করি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল পুনর্গঠন হবে। দল শক্তিশালী করতে হলে শক্তিশালী মানুষ দরকার।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান বলেন, ‘দলের সব পর্যায়ে পুনর্গঠন সব সময়ই হয়, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। গত দশ বছরে অত্যাচার, নির্যাতন, গুম, খুন, হামলা-মামলায় নেতাকর্মীরা বিপর্যস্ত। একটা গণতান্ত্রিক দেশে এ রকম দেখা যায় না। এটা ইতিহাসে বিরল। এরমধ্যে দলের পুনর্গঠন জরুরি। আমরা সব সময় মনে করি বিএনপি জনগণের দল, জনগণের সুখে-দুখে বিএনপি পাশে থাকবে, পাশে ছিল, পাশে আছে। অতএব ভবিষ্যতেও জনগণের পাশে থাকতে হলে, জনগণের কাছে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে হলে, জনগণের কাছে রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হলে এবং জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হলে, জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে সে অবস্থাটা ফিরিয়ে আনতে হলে বিএনপিকে শক্তিশালী দল হিসেবে সক্রিয় থাকতে হবে। তার জন্য আমরা মনে করি এ মুহূর্তে আমাদের প্রথম কাজ হলো দল পুনর্গঠন।
তবে দল পুনর্গঠনে নতুন পুরাতনের সমন্বয় থাকা উচিত। অভিজ্ঞ এবং নবীনদের সমন্বয় থাকা উচিত। শুধু যদি অভিজ্ঞরা থাকে বা পুরাতনরা থাকে তাহলে যেমন চলে না। আবার শুধু নতুনদের দিয়েও চলে না। অভিজ্ঞ এবং নতুনদের সমন্বয় রেখেই চলতে হয়। যখনই পুনর্গঠন হয় তখনই কিন্তু পুরাতনদের সঙ্গে নতুনদের জায়গা হয়। আজ শুধু স্থায়ী কমিটি না; সব কমিটিই নতুন পুরনোদের সমন্বয়ে গঠিত হওয়া উচিত। এর মধ্য দিয়েই দলটাকে শক্তিশালী করতে হবে আগামী দিনে জনগণের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য।
দল পুনর্গঠন প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহাবুবুর রহমান বলেন, হ্যা, দল পুনর্গঠন হওয়া উচিত। আমিও তাই মনে করি। আমি মনে করি, একেবারে গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে গ্রাসরুট থেকে টপ পর্যন্ত যাদের জনসম্পৃক্ততা আছে তাদের নিয়ে পুনর্গঠন হওয়া উচিত। কারণ জনসম্পৃক্ততা গুরুত্বপূর্ণ।
Discussion about this post