নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে দগ্ধ শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮) হত্যাচেষ্টার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় চারজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।
সোমবার দুপুর সাড়ে ৩টায় সোনাগাজী থানায় এই মামলা দায়ের করেন শিক্ষার্থী নুসরাতের ভাই। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, হত্যার উদ্দেশে নুসরাত জাহানের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় অজ্ঞাতপরিচয় চার আসামি ও তাদের সঙ্গীরা। এই মামলায় মুখোশধারী ৪ জন ও তাদের সহযোগীদের আসামি করা হয়।
এছাড়া মাদ্রাসাছাত্রীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন- মোস্তফা কামাল, আশরাফ, নুরুল আমিন, আরিফ, সাইফুল, আলাউদ্দিন ও জসীম।
এদিকে সোমবার সকালে সেই ছাত্রীকে দেখে এসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন গণমাধ্যমকে বলেন, ওই ছাত্রীর অবস্থা ভালো নয়। গত দিনের চেয়ে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পরবর্তিতে বেলা ১২টার দিকে নুসরাত জাহানকে বার্ন ইউনিটের লাইফসাপোর্টে নেয়া হয়।
ওই ছাত্রীর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, ওই ছাত্রীর অবস্থা গুরুতর। যেকোনো সময় পরিস্থিতি যেকোনো দিকে মোড় নিতে পারে। তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। মানুষের শরীরে চামড়ায় ৭টি লেয়ার থাকে, ওই ছাত্রীর সব লেয়ার পুড়ে গেছে। শ্বাসনালিও পুড়ে গেছে। পাশাপাশি দগ্ধ হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে তাকে বার্ন ইউনিটে আনা হয়নি, সময়ক্ষেপণ হয়েছে। এতেও তার অবস্থার অবনতি হয়েছে।
এর আগে রবিবার সকালে বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল বলেন, তার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। শরীরের তিন-চতুর্থাংশ পুড়ে গেছে। শ্বাসনালিও পুড়ে গেছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি জানান, মেয়েটির শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা ক্রিটিক্যাল। তার ব্যাপারে চিকিৎসকরা এখনও কিছু বলতে পারছেন না। মেয়েটির চিকিৎসা চলছে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। তখন তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী ওই ছাত্রীর সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছেন। ছাত্রীর চিকিৎসা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। তার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।
প্রসঙ্গত, ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতর ওই ছাত্রীর (১৮) গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। শনিবার সকালে সোনাগাজী পৌর এলাকার ইসলামিয়া সিনিয়ার ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রী ওই মাদ্রাসা থেকেই আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে কয়েকজন বোরকা পরা নারী পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা। তারা জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে না নেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ তথ্য ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় পুলিশকেও জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় এদিন বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ১০২ নম্বর কক্ষে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।
Discussion about this post