নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মামলা করার বিষয়ে সবুজ সংকেত মিলেছে মক্কায় ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) শীর্ষ সম্মেলনে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্র হিসেবে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ওআইসির পক্ষ থেকে গাম্বিয়ার নেতৃত্বে অ্যাডহক কমিটিকে ওই মামলা করতে বলা হয়েছে।
শনিবার শেষ হওয়া চতুর্দশ ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের ‘মক্কা ঘোষণা’য় রোহিঙ্গা শব্দটির সরাসরি উল্লেখ না থাকলেও সম্মেলনের আলোচিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঘোষিত ইশতেহারে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ এসেছে।
ইশতেহারের ৪৭তম দফায় মিয়ানমারে শিশুদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন এবং যৌন সহিংসতাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের আন্তর্জাতিক, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি অপরাধের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নিপীড়নের হোতাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনবিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের অ্যাডহক কমিটিকে সম্মেলন থেকে সমর্থন জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সম্মেলন থেকে গাম্বিয়ার নেতৃত্বে মন্ত্রী পর্যায়ের অ্যাডহক কমিটিকে আইসিজেতে দ্রুত মামলা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের কাছে অবাধে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর উদ্যোগ নিতেও আহ্বান জানানো হয়েছে।
৪৮তম দফায় বলা হয়েছে, সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য সীমান্ত ও হৃদয় খুলে দেওয়ায় সম্মেলন থেকে সরকারসহ প্রশংসা করা হয়েছে বাংলাদেশের জনগণ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, মক্কা ঘোষণা ও ইশতেহার—এগুলো ‘নন-বাইন্ডিং’ (মেনে চলা বাধ্যতামূলক নয়) সমঝোতা। ওআইসির ভূমিকা এখনো কাগজেই সীমাবদ্ধ আছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার মধ্যে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
১০২ দফা ইশতেহারের মধ্যে অন্তত পাঁচটি দফায় রোহিঙ্গা ইস্যু স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ৪৫তম দফায় বলা হয়েছে, ওআইসির শীর্ষ সম্মেলন থেকে রোহিঙ্গা মুসলমান সম্প্রদায়ের অমানবিক পরিস্থিতির নিন্দা জানানো হয়েছে। এ ছাড়া এ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সব ধরনের বৈষম্যের অবসান ঘটানোর পাশাপাশি সব ধরনের সহিংসতা ও বর্বর আচরণ বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। মিয়ানমার সরকারকে তার নাগরিকদের সুরক্ষার পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়া এবং রাখাইন রাজ্যে অবিলম্বে সামরিক শক্তির ব্যবহার বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
৪৬তম দফায় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান ও পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা, সম্মান এবং নাগরিকত্বসহ ফেরার সুযোগ নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
Discussion about this post