নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানোর মামলায় গ্রেফতার ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আজ সোমবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ আগামী ৩০ জুন নির্ধারণ করেন আদালত। মামলার বাদী ব্যারিস্টার সাইদুল হক সুমন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম শামীম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে আসামি পক্ষে আইনজীবী কাজী শাহানারা আক্তার ও সালমা আক্তার এই জামিন আবেদন করেছেন। আর শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ।
মামলার বাদী সায়েদুল হক সুমন আদালতে বলেন, ‘আসামি যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতো, তাহলে সে কেন এতদিন আত্মগোপনে ছিল? সে পুলিশ বিভাগের কলঙ্ক।’ তিনি জামিনের বিরোধিতা করেন।
অন্যদিকে আসামির পক্ষে আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, আত্মসমর্পণ করতে আসার মতো নিরাপত্তা বা পরিবেশ ছিল না। ওসি মোয়াজ্জেম বের হলেই মিডিয়া ও বিভিন্ন লোকজন তাকে উত্ত্যক্ত করতো। তার ফলে তিনি উচ্চ আদালতে গেছেন এবং সেখানেই গ্রেফতার হয়েছেন। সে বিচার বিভাগকে অবজ্ঞা করেনি।
এদিকে জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম শামীম আদালতকে বলেন, ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে আইনের শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটিয়ে অপরাধ করায় তার জামিন নামঞ্জুর করা হোক।
এর আগে সোমবার দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে আসামি মোয়াজ্জেমকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। গ্রেফতার পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর রবিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানার পুলিশ।
গত মার্চ মাসে নুসরাত যখন তার মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছিলেন তখন সোনাগাজী থানার ওসি ছিলেন মোয়াজ্জেম। অভিযোগ আছে, নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার কয়েকদিন আগে ২৭ মার্চ তাকে আপত্তিকর প্রশ্ন এবং তা ভিডিওতে ধারণ করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে তিনি তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। মামলায় আদালতের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে ২৭ মে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেদিনই তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে ১০ এপ্রিল নুসরাতের মৃত্যুর রাতেই সোনাগাজী থানা থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রত্যাহার করা হয়। ৮ মে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে ১২ মে রংপুর রেঞ্জে ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। আর গ্রেফতারি পরোয়ানাটি ৩ জুন ফেনী ও পরবর্তী সময়ে রংপুর রেঞ্জ অফিসে পৌঁছায়। আর এই সুযোগে ওসি মোয়াজ্জেম চলে যান আত্মগোপনে। গতকাল রবিবার হাইকোর্টে জামিন করাতে এসে কদম ফোয়ারার সামনে থেকে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন মোয়াজ্জেম।
Discussion about this post