সিলেট প্রতিনিধি: সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্ত:নগর ‘উপবন এক্সপ্রেস’ এর ৫ টি বগি লাইনচ্যূত হয়েছে। এরমধ্যে ৩টি বগি কালভার্ট ভেঙে খালে পড়েছে। রবিবার (২৩ জুন) রাত ১২টার দিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল স্টেশন থেকে ২০০ মিটার দুরে কালা মিয়া বাজার সংলগ্ন একটি ব্রিজে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ৭ জনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে , আহত হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সোমবার সকাল ৯টার দিকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, কমিটির প্রধান করা হয়েছে রেলওয়ের চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (পূর্বাঞ্চল) মো. মিজানুর রহমানকে। এই কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- চিপ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জলিল, চিফ পিএসপি মইনুল ইসলাম, চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (সিওপিএস) চিফ সুজিপ কুমার।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন আরও বলেন, সাতটি বগির মধ্যে দুটো ব্রিজের নিচে পড়েছে, লাইন থেকে ছিটকে পড়েছে দুটি; আর তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। আখাউড়া থেকে উদ্ধারকারী দল ইতোমধ্যে কুলাউড়া এসে পৌঁছেছে।
ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয়রা উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্থানীয় মসজিদে মাইকিং করে উদ্ধারকাজে নামেন এলাকাবাসী। মাইকিং শুনে ঘর ছেড়ে ঘুম ভেঙে উদ্ধারকাজে নামেন নারী-পুরুষ উভয়ে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুল হক সাতজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনাস্থল থেকে কুলাউড়া উপজেলার চেয়ারম্যান এ এক এম সফি আহমদ (সলমান) জানান, আমরা চারজনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। এর মধ্যে তিনজন নারী ও একজন পুরুষ রয়েছেন। নিহত একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি কুলাউড়ার সাবেক পৌর মেয়রের ভাই আবদুল বারীর স্ত্রী বলে জানা গেছে। বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সাংবাদিকরা বলেন, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল স্টেশন থেকে ২০০ মিটার দূরে কালামিয়া বাজারসংলগ্ন একটি ব্রিজে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দা সৌরভ চৌধুরী বলেন, আমি তখন ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে বিকট শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে যায়। বের হয়ে দেখি মানুষজন চিৎকার করছেন আর একটি ট্রেন থামানো। দৌড়ে এসে দেখি উপবনের দুটি বগি ব্রিজ ভেঙে পড়ে আছে। দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের আমরা বগি থেকে বের করে আনার কাজে নেমে পড়ি। ৫-১০ মিনিটের মাথায় স্থানীয় অর্ধশতাধিক মানুষ এসে উদ্ধারকাজে নামেন। এ সময় দেখি স্থানীয় নারীরাও উদ্ধারকাজে নেমেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা বরমচাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক হুমায়ুন কবির জানান, কুলাউড়ার বরমচাল স্টেশনসংলগ্ন একটি ব্রিজে হঠাৎ ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে খালে পড়ে যায় এবং একটি বগি উল্টে যায়।
এতে ঘটনাস্থলে দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং লাইনচ্যুত বগির যাত্রী ছাড়াও মারাত্মক ঝাঁকুনিতে অন্তত ২৫০ যাত্রী আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
ট্রেনের যাত্রী ইয়াসিন আহমেদ যুগান্তরকে জানান, কুলাউড়ার বরমচাল স্টেশনসংলগ্ন একটি ব্রিজে হঠাৎ লাইন ছিঁড়ে ট্রেনের পাঁচটি বগি খালে পড়ে যায় এবং একটি বগি উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে এবং লাইনচ্যুত বগির যাত্রী ছাড়াও মারাত্মক ঝাঁকুনিতে অন্তত ২৫০ যাত্রী আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে ভারী যানচলাচল বন্ধ থাকায় ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন ঢাকাগামী যাত্রীরা। ফলে ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রচুর যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি সিলেট থেকে ছেড়ে যায়।
কুলাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি আবদুল মালেক যুগান্তরকে বলেন, নিহতের কোনো খবর পাইনি। শুনেছি তিনজন লোক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আহতের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, অনেক লোক আহত হয়েছেন।
তিনি জানান, স্থানীয় জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও রেলওয়ে পুলিশ প্রাথমিক উদ্ধারকাজ শুরু করেছে।
খবর পেয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম ও পুলিশ সুপার শাহজালাল ঘটনাস্থল এবং হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া ঘটনাস্থলেও বিজিবিও রয়েছে।
এ/কে
Discussion about this post