নিজস্ব প্রতিবেদক: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা (আরপি সাহা) ও তার ছেলেসহ সাতজনকে হত্যা মামলার আসামি মাহবুবুর রহমানকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। টাঙ্গাইলের মো. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ ও গণহত্যার তিনটি অভিযোগ আনা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত আর আসামি মাহবুবুর রহমানের পক্ষে ছিলেন- আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক ২৩৫ পৃষ্টার এই রায় পড়েন।
গত ২৪ এপ্রিল আসামি ও বাদীপক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল।
এ বিষয়ে প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি অভিযোগই আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তদন্ত কর্মকর্তাসহ এ মামলায় ১৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।’
আদালত আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) প্রদান করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন গাজী এম এইচ তামিম।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, ৭০ বছর বয়সী আসামি মাহবুবুর মুক্তিযুদ্ধের সময় টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলেন। মাহবুবুর ও তার ভাই আবদুল মান্নান সে সময় রাজাকার বাহিনীতে ছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতায় আসামিরা হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতনসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন। স্বাধীনতার পর মান্নান মারা যান।
গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি আসামি মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে ২৮ মার্চ অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটির তদন্ত শুরুর পর ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা জারির পর একই বছরের নভেম্বরে মাহবুবুরকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্ত সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, একাত্তরের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় অভিযান চালানো হয়। তারা রণদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা (রবি), রণদা প্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলবসহ সাতজনকে তুলে নিয়ে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়।
কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা রণদা প্রসাদ সাহার পৈতৃক নিবাস টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে হলেও পাটের ব্যবসার জন্য ৭১ সালে নারায়ণগঞ্জে ছিলেন। ওই বাড়ি থেকেই তাকে, তার ছেলে ও অন্যদের ধরে নিয়ে যায় আসামি মাহবুবুর রহমান ও তার সহযোগীরা।




Discussion about this post