বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় নিত্য নতুন তথ্য সামনে আসছে। সম্প্রতি এ ঘটনায় অভিযুক্তদের ফেসবুকে কথোপকথন প্রকাশ্যে এসেছে। রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়েও সেখানে কথা হয়। হত্যাকাণ্ডে অংশ নিতে সেখানে অস্ত্র নিয়ে আসার বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া হয়।
ফেসবুকের ওই গ্রুপটির নাম ‘007’। ধারণা করা হচ্ছে হলিউডের জনপ্রিয় থ্রিলার মুভি জেমস বন্ড সিরিজের কোড ‘007’ এর সাথে মিল রেখে গ্রুপটি তৈরি করা হয়। গ্রুপের প্রোফাইলেও সাম্প্রতিক জেমস বন্ড খ্যাত ব্রিটিশ অভিনেতা ডেনিয়েল ক্রেগের ছবিও আছে। এই গ্রুপের প্রধান নয়ন বন্ড। আর সেকেন্ড ইন কমান্ড রিফাত ফরাজী। ফেসবুক গ্রুপে পরিকল্পনাকারীদের কথোপকথনের কিছু স্ক্রিনশটে লেখা ছিল:
রিফাত ফরাজী: ‘007’ এর সবাইরে কলেজে দেখতে চাই।
মোহাম্মদ: কোথায়?
(কথোপকথনের এই পর্যায়ে সাগর যোগ দেন এবং রিফাত ফরাজীর প্রস্তাবে ‘বিজয় চিহ্ন’র ইমো দেন)
মোহাম্মদ: কোথায় ভাই, রিফাত ফরাজী?
রিফাত ফরাজী: (দায়ের ছবি দিয়ে) পারলে এইটা সহ।
মোহাম্মদ: দা নিয়া আমুনে।
তবে, স্থানীয়দের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেলেও পুলিশ বলছে, বিষয়টি নিয়ে এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না। বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন এ সম্পর্কে বলেন, মেসেঞ্জারের বিষয়টা ঠিক আছে। তবে এ নিয়ে আমি এখন কিছু বলব না।
জানা যায়, যে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় সেটির নাম ‘বন্ড ০০৭’। এই গ্রুপের নামকরণ হয়েছে জেমস বন্ডের কোড নম্বর ‘জিরো জিরো সেভেন’ এর সাথে মিল রেখে। গ্রুপের নেতা রিফাত হত্যার হোতা নয়ন বন্ড, যাকে পুলিশ দুই দিনেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
নয়নের পারিবারিক নাম সাব্বির আহম্মেদ, ডাক নাম নয়ন। ২৫ বছর বয়সী এই যুবক নিজেকে জেমস বন্ড ভাবতে ভালোবাসতেন। এ কারনেই ডাক নামের সাথে বন্ড যোগ করে হয়েছেন নয়ন বন্ড। এ নামেই তাকে সবাই চিনে। তার মোটর সাইকেলে, বাড়ির দেয়ালে- নানা জায়গায় লেখা রয়েছে বন্ডের সেই 007 কোড নামটি।
বরগুনা সদর থানার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন জানান, পৌর শহরের বিকেবি রোডের ধানসিঁড়ি এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকীর ছেলে নয়নের বিরুদ্ধে মাদক কেনাবেচা, চুরি, ছিনতাই, হামলা, সন্ত্রাস সৃষ্টিসহ নানা অভিযোগে অন্তত আটটি মামলা রয়েছে। নয়নের গড়ে তোলা গ্যাং 007 শহরের কলেজ রোড, ডিকেপি, দীঘির পাড়, কেজিস্কুল ও ধানসিঁড়ি এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ চালিয়ে আসছিল বলে স্থানীয়দের ভাষ্য। তারা বলছেন, ওই গ্রুপে নয়নের প্রধান সহযোগী হলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে রিফাত ফরাজী।
রিফাত ফরজীর পাশাপাশি তার ভাই রিশান ফরাজীকেও পুলিশ খুঁজছে বলে ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন জানান।
ওই মেসেঞ্জার গ্রুপের কথোপকথনের স্ক্রিনশটে দেখা যায়, রিফাত নামে একজন লিখেছেন-‘007এর সবাইরে কলেজে দেখতে চাই’। সাগর নামের একটি আইডি থেকে ওই পোস্ট কপি করে ‘ভিক্টরি’ ইমোটিকন দেখানো হয়। রিফাত ফরাজীকে ট্যাগ করে মোহাম্মদ নামের একটি আইডি থেকে জানতে চাওয়া হয়- কখন কলেজে থাকতে হবে। রিফাত উত্তর দেন- ৯টার দিকে। পরে রিফাত একটি রামদায়ের ছবি পোস্ট করে সেটি নিয়ে আসতে বলেন।
উত্তরে মোহাম্মদ সেটি নিয়ে আসবেন বলে জানান। পরে হকিস্টিক আনা এবং কালো শার্ট পরে কলেজে যাওয়ার বিষয়েও কথা হয় সেখানে।
আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি না জানতে চাইলে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, ‘আমি শুধু এটুকু বলব, আমরা অপারেশনে আছি।’
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহরের কলেজ রোডে রিফাত শরীফকে (২৩) স্ত্রীর সামনেই কুপিয়ে জখম করে একদল যুবক। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে রিফাতের মৃত্যু হয়।
রিফাতের ওপর হামলার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা। সেখানে দেখা যায়, দুই যুবক রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করে চলেছে। আর তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।
বরগুনার সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্রী মিন্নি হামলাকারী সবাইকে চিনতে না পারার কথা জানালেও নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর নাম বলেছেন।




Discussion about this post