বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনায় সাবেক এমপি ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, প্রয়োজন হলে আমার বৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি করে রিফাত হত্যার আসামিদের ধরবো। একইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডের প্রধান দুই অভিযুক্ত সাব্বির আহমেদ নয়ন (নয়ন বন্ড) এবং নিজের ভায়রার ছেলে রিফাত ফরাজীর মৃত্যুদণ্ডও কামনা করেছেন।
রিফাত হত্যার পর থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ ওঠে, দেলোয়ার হোসেনের ক্ষমতার অপব্যবহার করে রিফাত ফরাজী ও তার ভাই রিশান ফরাজী তাদের অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করতো। এ কারণেই এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন দোলোয়ার হোসেন।
শুক্রবার (২৮ জুন) রাতে বরগুনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমি পাঁচ পাঁচবার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছি। রুট লেভেল থেকে শুরু করে পার্লামেন্ট পর্যন্ত আল্লাহ আমাকে নিয়েছেন। কিন্তু কোনোদিন আমি অন্যায়, সন্ত্রাস ও মাদককে প্রশ্রয় দেইনি। এখন ওরা বৈবাহিক সূত্রে আমার আত্মীয় বলে আমাকে জড়িয়ে যে নোংরা খেলা শুরু হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি পরিষ্কারভাবে আপনাদের মাধ্যমে সবাইকে জানাতে চাই, এই সন্ত্রাসী মাদকসেবী খুনীর সঙ্গে আমার বহু বছর ধরে কোনো সম্পর্ক নেই এবং কোনোদিন সম্পর্ক হবেও না। প্রয়োজনে রাজনীতি ছেড়ে দেবো, কিন্তু দুর্নাম নিয়ে ঘরে ফিরে যেতে পারবো না। প্রয়োজন হলে আমার বৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি করে রিফাত হত্যার আসামিদের ধরবো।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বরগুনার কলেজ রোড এলাকায় যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে এটি মর্মান্তিক ও একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় জড়িতদের আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এখানে বিভিন্নভাবে ফেসবুকে দেখি আমাকে নিয়ে একটা নোংরা খেলা শুরু হয়েছে, কারণ রিফাত ফরাজি আমার আত্মীয়। আসলে ওদের সঙ্গে আমার কোনও রক্তের সম্পর্ক নেই। ওরা আমার ছেলেও না, ভাইও না, ভাইয়ের ছেলেও না, বোনের ছেলেও না, কিচ্ছু না। বৈবাহিক সূত্রে রিফাত আমার আত্মীয়। এধরনের বৈবাহিক সূত্রে অনেক আত্মীয় থাকে। তারা কেউ ভালো হয়, কেউ খারাপ হয়, কেউ চোর হয়, কেউ সন্ত্রাসী হয়, ডাকাত হয়। সুতরাং সেখানে আমার ওপর এতোটা দোষ চাপিয়ে দেওয়ার কারণটা কী আমি ঠিক বুঝতে পারি না। আমি এদের কোনোদিন প্রশ্রয় দেইনি। আর নয়ন বন্ডকে আমি জীবনে কোনোদিন দেখছি বলে আমার মনে পড়ে না। এবং রিফাত হলো মাদকসেবী। যে দিন আমি শুনেছি ও মাদকসেবী ওর বাবাকে আমি ফোন করে বলেছি, তোমার ছেলে মাদক সেবন করে, অতএব তুমি তাকে সংশোধন করো। কিন্তু ওর বাবা পারে নাই, ব্যর্থ হয়েছে অথবা চেষ্টা করে নাই। সুতরাং যখন দেখলাম একটার পর একটা ঘটনা চলছে তখন আমি তাদের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছেদ করে ফেলেছি। আমি আমার স্ত্রীকে বলেছি ওদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখা যাবে না। কারণ মাদক, সন্ত্রাস এগুলো মানা যায় না।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নি লড়াই হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের ফেরাতে পারেননি। একাধারে রিফাতকে কুপিয়ে বীরদর্পে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে হামলাকারীরা। তারা চেহারা লুকানোরও কোনও চেষ্টা করেনি। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এই ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ। মামলার প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন। দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী ও তিন নম্বর আসামি রিশান ফরাজী।




Discussion about this post