নিজস্ব প্রতিবেদক: রূপপুর বালিশকাণ্ড ভোলার আগেই এবার বালিশ কাণ্ডের চেয়েও ভয়ঙ্কর স্ক্যান্ডাল ঘটালো স্বাস্থ্য অধিদফতর। বইয়ের দাম সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। স্বাস্থ্য অধিদফতর কিনেছে সাড়ে ৮৫ হাজার টাকায়।
জানা গেছে, মেডিকেল কলেজের সার্জারির ছাত্র ও শিক্ষানবিশদের জন্য দরকারি টেক্সট বইগুলোর একটি হচ্ছে ‘প্রিন্সিপাল অ্যান্ড প্র্যাকটিস অব সার্জারি’। আর এই বই তিন থেকে ১৫গুণ পর্যন্ত বেশি টাকা দিয়ে বই কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের জন্য এই বইয়ের ১০টি কপি কেনার ঘটনায় এ তথ্য বের হয়ে আসে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বইটির বাজারমূল্য সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা হলেও স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রতিটি বই কিনেছে ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা করে। সেই হিসাবে ১০ কপি বইয়ের মোট দাম পরিশোধ করা হয়েছে ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, বাজার দামের তুলনায় ৮ লাখ টাকা বেশি খরচ করে এ বই কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এছাড়া আরো জানা যায়, শুধু এই একটি আইটেমের বই-ই নয়, দুটি টেন্ডারে ৪৭৯টি আইটেমের ৭ হাজার ৯৫০টি বই কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এসব বইয়ের মূল্য বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৬ কোটি ৮৯ লাখ ৩৪ হাজার ২৪৩ টাকা। এ বছরের ১৯ জুন টেন্ডার দুটির ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হাক্কানী পাবলিশার্স। তারাই বাজার থেকে বইগুলো কিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে সরবরাহ করেছে।
রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজের জন্য ৩১৭টি আইটেমের ২৪৫৪টি বই ২ কোটি ৫০ লাখ ৯১ হাজার ২৮৫ টাকায় কেনা হয়েছে। এছাড়া, সারা দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের জন্য ১৬২টি আইটেমের ৫৪৯৬টি বই কেনা হয়েছে ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪২ হাজার ৯৫৮ টাকায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ২৬ ও ২৭ মে বই কেনার জন্য পৃথক দুটি টেন্ডার আহ্বান করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। প্রথম টেন্ডারের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় পাঁচ কোটি টাকা ও দ্বিতীয়টির প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪২ হাজার ৯৫৮ টাকায় প্রথম টেন্ডারের ওয়ার্ক অর্ডার পায় হাক্কানী পাবলিশার্স। আর ২ কোটি ৫০ লাখ ৯১ হাজার ২৮৫ টাকায় দ্বিতীয় টেন্ডারের ওয়ার্ক অর্ডারও পায় একই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
৪৭৯টি আইটেমের বইয়ের মধ্যে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে অন্তত ৩০টি বইয়ের বাজার দাম যাচাই করে দেখা গেছে, বইগুলো দ্বিগুণ, তিনগুণ কোনো ক্ষেত্রে ১৫গুণ বেশি দামে কেনা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারণের আগে সব বইয়ের দাম নিজেই যাচাই-বাছাই করেছেন বলে জানান ডা. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করেই মূল্য নির্ধারণ করেছি। স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা কেনাকাটার প্রতিটি নিয়ম মেনেই বইগুলো কিনেছি। তবে কোনো বইয়ের দামে যদি ব্যবধান থেকে থাকে, তাহলে আমরা যাচাই করে দেখবো।
আর উপপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) ডা. শেখ মো. মনজুর রহমান বলেন, ‘বইয়ের দামে এত ব্যবধান হওয়ার কথা না।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. হাবিবুর রহমান খান বলেছেন, এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তা তদন্ত করে দেখা হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষে এসব বই কেনার দায়িত্বে ছিলেন উপপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) ডা. শেখ মো. মনজুর রহমান, শিক্ষা চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন।




Discussion about this post