কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নিহত শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন বলেছেন, এমন শান্তশিষ্ট ছেলের কোনো শত্রু থাকতে পারে এ কথা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছি না। তাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক। আবরার ফাহাদ শিবিরের কর্মী বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এটা বানোয়াট, আবরার একজন উদারমনা ও প্রগতিশীল ছেলে। হানিফ সাহেবের সব প্রোগ্রাম আমরা যাই। তবে আবরার তাবলিগে যেত। বুয়েটে ভর্তির পরও দুই তিনবার সে তাবলিগে গিয়েছিল। ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
আজ সোমবার সকালে নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শোকের মাতম চলছে। পরিবারের সদস্যরা বুঝে উঠতে পারছেন না এত মেধাবী ও শান্তশিষ্ট ছেলেটিকে কারা কী কারণে হত্যা করল।
লের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে মা রোকেয়া খাতুন বলেন, রবিবার সকালে আমি তাকে নিজে ঘুম থেকে ডেকে তুলি। সে ঢাকায় রওনা দেয়। মাঝে তিন থেকে চারবার ছেলের সঙ্গে মুঠোফোনে আমার কথা হয়। বিকেল ৫টায় হলে পৌঁছে ছেলে আমাকে ফোন দেয়। এরপর আর কথা হয়নি। রাতে অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম, ও আর ফোন ধরেনি।
ছোট ভাই আবরার ফায়াজ বলেন, ফোন না ধরায় আমি ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ভাইয়াকে নক করি। ভাইয়া সে সময়ও ফেসবুকে অ্যাকটিভ ছিল, তবে সাড়া দেয়নি।
চাচা মিজানুর রহমান বলেন, আবরার ফাহাদ শিবিরের কর্মী বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এটা বানোয়াট, আবরার একজন উদারমনা ও প্রগতিশীল ছেলে। আমরা গোটা পরিবার আওয়ামী লীগের সমর্থক। হানিফ সাহেবের সব প্রোগ্রাম আমরা যাই। তবে আবরার তাবলিগে যেত। বুয়েটে ভর্তির পরও দুই তিনবার সে তাবলিগে গিয়েছিল। এর আগে গত ৫ অক্টোবর এবং ৩০ সেপ্টেম্বর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে নিজের ফেসবুকে দুটি সমালোচনামূলক পোস্ট দেন আবরার।
বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ওই হলের নিচতলা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
আবরারের বাবার নাম বরকতুল্লাহ। তিনি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের নিরীক্ষক কর্মকর্তা ছিলেন। মা রোকেয়া খাতুন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক। দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার ফাহাদ বড়। ছোট ভাই আবরার ফায়াজ ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেও ঢাকা কলেজের হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। বুয়েটের শেরে বাংলা হলের কাছেই তার হোস্টেল। কুষ্টিয়ার পিটিআই সড়কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাসার পাশেই তাদের বাড়ি।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১০ দিন আগে ছুটিতে দুই ভাই বাড়িতে এসেছিলেন। এ মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত বাড়িতে থাকতে চেয়েছিলেন আবরার। তবে সামনে পরীক্ষা, তাই পড়াশোনার চাপ আছে একথা বলে রবিবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন আবরার। ছোট বেলা থেকেই আবরার ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ২০১৫ সালে কুষ্টিয়া জিলা স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করেন আবরার। এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হন আবরার। চান্স পেয়েছিলেন মেডিকেল কলেজেও।




Discussion about this post