আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সৌদি আরবের ক্ষমতাধর ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) তিন দেশটির রাজপরিবারের তিন সিনিয়র সদস্যকে আটক করেছেন। তিনি পথের কাঁটা বিবেচিত সবাইকে সরিয়ে দেয়ার পদক্ষেপ হিসেবে এই নির্দেশ দেন। গ্রেফতারের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি। তবে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসষাগতকতার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে খবরে বলা হয়েছে।
দি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, বাদশাহ সালমানের ছোট ভাই প্রিন্স আহমদ বিন আবদুল আজিজ, বাদশাহর ভাতিজা প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে শুক্রবার সকালে গ্রেফতার করা হয়। এই দুই ব্যক্তি ছিলেন সিংহাসনের একসময়ের দাবিদার। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসষাগতকতার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে খবরে বলা হয়েছে। এটি প্রমান হলে এখন তারা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড পেতে পারেন।
প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন নায়েফকে ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান। এবার তাকে গৃহবন্দিদশা থেকে বের করে সোজা কারাগারে নিক্ষেপ করা হলো। শুক্রবার সকালে রাজ দরবারের গার্ডরা কালো পোশাক ও মুখে মাস্ক পরা অবস্থায় তিন প্রিন্সকে আটক করে এবং তাদের বাসভবনে তল্লাশি চালায়।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতা সুসংহত করার ক্ষেত্রে শাসক রাজপরিবারের বেশ কয়েকটি বিখ্যাত শাখায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালের অক্টোবরে ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে বিখ্যাত সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশ পরিচালনায় যুবরাজের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
সূত্র জানায়, ক্ষমতার ধারায় পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন রাজপরিবারের সদস্যরা। বাদশাহ সালমানের একমাত্র জীবিত ভাই প্রিন্স আহমেদকেই সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য পছন্দ হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজপরিবার, নিরাপত্তা সংস্থা ও কিছু পশ্চিমা শক্তির সমর্থনও রয়েছে তার ওপর।
কিন্তু ৮৪ বছর বয়সী বাদশাহ জীবিত থাকাবস্থায় কার্যত শাসক যুবরাজের বিরোধিতা অসম্ভব বলেই মনে করছেন পশ্চিমা কূটনীতিকরা। আর বাদশাহ নিজেও কখনো তার প্রিয়পুত্রের বিরুদ্ধে যাবেন না।
নিজের শাসনের অধিকাংশ দায়িত্ব ছেলের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন বাদশাহ। কেবল মন্ত্রিসভার বৈঠকের সভাপতিত্ব ও বিদেশি অতিথিদের অভ্যর্থনার দায়িত্বই তিনি পালন করছেন।
বছর দুয়েকের মতো দেশের বাইরে থাকার পর ২০১৮ সালের অক্টোবরে রিয়াদে ফেরেন প্রিন্স আহমেদ। এরপর তিনি নিম্নপদের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক র্যান্ড কর্পোরেশনের নীতিবিশ্লেষক বেকা ওয়াসের বলেন, যুবরাজ মোহাম্মদ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। তার উত্থানের ক্ষেত্রে সব হুমকি ইতিমধ্যে তিনি সরিয়ে দিয়েছেন। পাল্টা প্রতিক্রিয়া ছাড়াই তার সমালোচকদের হত্যা করছেন।
‘আর ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে এটা তার আরও বড় পদক্ষেপ। তাকে যাতে অতিক্রম করার চেষ্টা করা না হয়, রাজপরিবারের সদস্যদের তিনি সেই বার্তা দিতে চেয়েছেন নতুন এই ধরপাকড়ের মাধ্যমে,’ বললেন এই বিশ্লেষক।
Discussion about this post