নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি বাড়িতে দুই শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন আখতারুন্নেসা পপি (২৮) নামের এক গৃহবধূ। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার দেহের ১৮ শতাংশের মতো পুড়ে গেছে।
খবর পেয়ে পুলিশ দক্ষিণ গোড়ানের একটি বাড়ি থেকে ওই নারীর দুই সন্তান আলফি (১১) ও জান্নাতুলের (৭) লাশ উদ্ধার করেছে। তবে ওই ঘরে আগুন ধরা কিংবা চুরি-ডাকাতির কোনো চিহ্ন পায়নি পুলিশ।
শনিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান, বাবা-মার দাম্পত্য কলহের জেরেই প্রাণ হারাতে হয় এ দুই শিশুকে।
তিনি বলেন, রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মোল্লা ভবনের ৪ তলার একটি ফ্ল্যাটে বাবা-মার সঙ্গে থাকতো ছোট্ট দুই শিশু মেহজাবিন ও জান্নাতুল। তবে বাবা-মার আদর স্নেহের চেয়ে দু’জনের ঝগড়া আর মনোমালিন্যই বেশি দেখতে হতো ১১ বছর বয়সী মেহজাবিন ও তার ৭ বছর বয়সী বোন জান্নাতুলকে। মেহজাবিন ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজে চতুর্থ আর জান্নাতুল প্রথম শ্রেণিতে পড়তো।
নিহত দুই শিশুর স্বজন ও প্রতিবেশীদের অভিযোগ, বাবা বিপ্লব পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ায় এবং যৌতুকের টাকা চাওয়ায় সংসারে অশান্তি লেগেই থাকতো। সবশেষ শুক্রবার রাতেও বিপ্লব ১০ লাখ টাকা না দেওয়া হলে আবারও বিয়ে ও সন্তানদের কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেন স্ত্রীকে।
তবে পপির বাবা আবু তালেব ঢাকা মেডিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, তার মেয়ে ও জামাতার মধ্যে কলহ ছিল। তার মেয়ে বিয়ের পর নয় বছর তার সঙ্গে থাকলেও কিছু দিন আগে আলাদা বাসা নিয়েছিলেন। জামাতা মোজাম্মেল প্রতি সপ্তাহে ঢাকা আসতেন, তবে গত সপ্তাহে আসেননি।
তালেবের ধারণা, স্বামীর সঙ্গে কলহ থেকে পপি গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন।
পপির মা হেলেনা জানান, স্বামীর নির্যাতনের কারণে পপি তার দুই মেয়েকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।একটি গণমাধ্যমকে হেলেনা জানিয়েছেন, তাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। ১৩ বছর আগে পপির বিয়ে হয়। তার স্বামী মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের বাজারে ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসা করেন। বিয়ের পর থেকে পপি গোড়ানে তার বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকতো। পরে সেখানেই বাসা ভাড়া নেয় তার স্বামী। তাদের দুই মেয়ে আলফি ও জান্নাতুল। তারা দুজনেই ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলে পড়তো। আলফি চতুর্থ শ্রেণিতে ও জান্নাতুল প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
হেলেনা জানান, পপির স্বামী মোজাম্মেল মুন্সীগঞ্জে থেকে ব্যবসা করেন। মাঝে মাঝে গোড়ানে পরিবারের কাছে আসেন। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে তিনি এসেছিলেন। শুক্রবার রাতে মোজাম্মেল শ্বশুর আবু তালেবকে ফোন দিয়ে দোকানে মাল তোলার জন্য ১০ লাখ টাকা চায়। টাকা না দিলে দুই মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে বলে, ‘আমি আমার দুই মেয়েকে নিয়ে যাব, আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে যাবেন।
এরপর সকালে পপির বাবা পপিকে ফোন দিয়ে সাড়া না পেয়ে বাসায় গেলে পপি নিজেই দরজা খুলে দেন। এ সময় পপির শরীরের নিচের অংশ দগ্ধ অবস্থায় লেপ মোড়ানো ছিল। আর পাশের রুমে দুই মেয়ের গলা কাটা ও কিছুটা পুড়ে যাওয়া লাশ পড়ে ছিল। তিনি বলেন, যেহেতু স্বামী দুই মেয়েকে নিয়ে যেতে চেয়েছে, তাই সে তার মেয়েদের হত্যা করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। এ ঘটনার জন্য তার স্বামীই দায়ী।
ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ। এবং নিহত দুই শিশুর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
Discussion about this post