প্রায় দুই মাস দেশের সমস্ত আদালত বন্ধ।ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলেও এই পদ্ধতিতে শিক্ষানবিশদের কাজ করার সুযোগ নাই বললেই চলে।এমতাবস্থায় আশ্চর্যজনক হলেও সত্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অস্বচ্ছল আইনজীবীদের জন্য ৪ কোটি টাকা সাহায্য প্রদান,১ কোটি টাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য তহবিলে দান,দেশের বিভিন্ন জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে আইনজীবীদের জন্য বিনা সুদে লোনের ব্যবস্থা করলেও;শিক্ষানবিশদের জন্য ন্যূনতম কোন ব্যবস্থা গ্রহন করার প্রয়োজন মনে করেণি!
দেশের সমস্ত জেলা বারে যেসব শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের প্রতিনিয়ত প্রাকটিস করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাদের করোনা মহামারীতে দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকাকালীন সময় এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও জেলা বার আইনজীবী সমিতি থেকে তাদের প্রতি কোন অভিভাবক সুলভ আচরণ না করার কারণে তারা আজকে সম্পূর্ণভাবে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে।শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা মহামারীর এই পরিস্থিতিতে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্ভোগের সাথে তাদের সামাজিক মর্যাদা নিয়েও চরম হীনমন্যতায় দিন কাটছে।আইনে স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে ইন্টিমেশন জমা দিয়ে দিনের পর দিন পরীক্ষার প্রহর গুনতে হয়।বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে গেলে বিগত ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এনরোলমেন্ট পরীক্ষা নিতে পারেণি।দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এনরোলমেন্ট পরীক্ষার প্রথম ধাপ এম সি কিউ পরীক্ষা দিতে পারে শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা এবং তাতে মাত্র ১৭% শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা কৃতকার্য হয়। এনরোলমেন্ট পরীক্ষার পরবর্তী ধাপ লিখিত পরীক্ষা বৈশ্বিক এই মহামারীর কারণে সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।রিটেন পরীক্ষা কবে হবে আর কবে এই এনরোলমেন্ট প্রসেস সম্পূর্ণ শেষ হবে তার কোন নিশ্চয়তা পাচ্ছেনা শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা।২০১৪ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বনাম দারুল ইহসান মামলার আপীলেট ডিভিশনের পূর্নাঙ্গ রায় আসে ২০১৭ সালে।সেই রায়ের ১২ টি নির্দেশনার সর্বশেষ নির্দেশনা ছিলো “প্রতি ক্যালেন্ডার ইয়ারে এনরোলমেন্ট পরীক্ষার সম্পূর্ণ প্রসেস সম্পন্ন করা”। আপীলেট ডিভিশনের পূর্নাঙ্গ রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বার কাউন্সিল এনরোলমেন্ট পরীক্ষা নিতে পুরোপুরি ব্যর্থ অথচ উপর্যুক্ত মামলার পূর্নাঙ্গ রায়ের ৭ নাম্বার নির্দেশনা না মানার দরুণ ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এম সি কিউ পরীক্ষার পূর্বে বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন কার্ড দেয়নি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল যার ফলশ্রুতিতে ভুক্তভোগী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বার কাউন্সিলের বিপক্ষে রিট পিটিশন দায়ের করে এবং সর্বশেষ আপীল বিভাগ ভুক্তভোগী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা প্রদানের শর্তে বার কাউন্সিল কে রেজিষ্ট্রেশন কার্ড প্রদানের অনুমতি দেন।
“করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা কেমন আছেন এবং এনরোলমেন্ট পরীক্ষার জটিলতা “, এই বিষয়ে বাংলাদেশ শিক্ষানবিশ আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক এবং আমাদের আইন জগৎ অনলাইন প্রোগামের পরিচালক আইনুল ইসলাম বিশালের সাথে যোগাযোগ করে হলে তিনি বলেন, “দেশের করোনা মহামারীতে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং মানসিক দিক দিয়ে চরম সংকটে দিন কাটছে। তার উপর লিখিত পরীক্ষা কবে হবে সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। ২০১৭ সালের এনরোলমেন্ট পরীক্ষার যারা লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারেণি তারা প্রায় চার বছর হয়ে গেছে ইতোমধ্যে কোন লিখিত পরীক্ষা পায়নি। ২৮ ফেব্রুয়ারিত এম সি কিউ পরীক্ষা শেষ হলে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস আসে কিন্তু তা এখন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত তার উপরে ২০১৭ সালের লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য প্রায় ৩৫০০ শিক্ষার্থী আছে তাদের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য পূনরায় রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে।দেশের বিচার বিভাগ সহ গুরুত্বপূর্ণ সব অরগানের কাজ যদি ভ্যার্চুয়াল পদ্ধতিতে চলতে পারে সেক্ষেত্রে বার কাউন্সিলের বিজ্ঞ এনরোলমেন্ট কমিটি আন্তরিক হলে অনলাইনের মাধ্যমে এই ৩৫০০ শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করে ফেলতে পারত।আমরা চাই বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বৈশ্বিক এই মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনা করে ২০২০ সালের ভিতরেই আপীলেট ডিভিশনের পূর্নাঙ্গ রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এনরোলমেন্ট পরীক্ষার সম্পূর্ণ প্রসেস সম্পন্ন করবে।দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা আমাদের নায্য দাবী নিয়ে বার কাউন্সিলের কাছে যাব এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যেহেতু আইনের ছাত্র ছিলেন সেহেতু মুজিব বর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের জট নিরসনের জন্য আমরা এই নায্য দাবী তুলে ধরব।
একই বিষয় সম্পর্কে ঢাকা জেলা বারের শিক্ষানবিশ আইনজীবী মহিউদ্দিন মামুন বলেন, ” শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের দুর্ভোগের শেষ নাই। সুপ্রিম কোর্টের আপীলেট ডিভিশনের পূর্নাঙ্গ রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা চাই ২০২০ সাল থেকেই সেই রায় বাস্তবায়ন করতে হবে। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের ভিতরেই এনরোলমেন্ট প্রসেস সম্পন্ন করে সনদ চাই।মাস্টার্স পাশ করে আজকে ৩ বছর অপেক্ষা করেছি একটা পরীক্ষার জন্য। সকল শিক্ষানবিশদের স্বপ্ন আইনজীবী হবে।এভাবে দীর্ঘদিন পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে হলে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অনেক মেধাবী ই আইন পেশা থেকে ঝরে যাবে।এরকম পরীক্ষার নামে প্রহসন চলতে থাকলে দেশের আইনাঙ্গনের জন্য তা কোনোভাবেই সুখকর খবর নয়।”
Discussion about this post