বর্তমান এই করোনা সৃষ্ট মহামারীর সময় নিয়মিত আদালত খুলুক খুব একটা চাই নি এবং বিশ্বাস করি বিজ্ঞ আইনজীবীগণ যদি ভার্চুয়াল আদালতকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজে ও সম্পুর্ন ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে আইনগত সেবা প্রদান করতে পারতেন তাহলে কেহই বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিয়মিত আদালত চালু সমর্থন করতেন না। ভার্চুয়াল আদালত যেটা কিছুদিনের জন্য আমরা দেখেছি সেটা কিছু মামলার ক্ষেত্রে কাজ করলেও মামলার ধরন ও বিচারাধীন আদালতের ভিন্নতার প্রেক্ষিতে আইনগত অধিকার লাভের ক্ষেত্রে বৈষম্য নিজেই সৃষ্টি করে দিল যেটা আদালতের নিকট কাহারো কাম্য নয়। ভার্চুয়াল আদালত প্রতিষ্ঠা খুব কঠিন কিছু বলে কখনো আমার মনে হয় নি, বিশেষত প্রযুক্তির এই যুগে এসব সাধন করা চন্দ্রাভিযানের মতো কঠিন কিছু নয় যদিও চন্দ্রাভিযান বহু পুরাতন সফলতা এবং মানুষের জন্য এটা খুব সহজ বৈকি।
অথচ এই ভার্চুয়াল আদালতও সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য হতে পারতো-
১। যদি প্রতিটি ফাইলিং বা আবেদনের বিপরীতে ই ফাইলিং নাম্বার বা আবেদন নাম্বার সয়ংক্রিয়ভাবে ফাইলিং বা আবেদন করার সাথে সাথেই পাওয়া যেতো।
২। যদি প্রতিটি আদালতের কার্যতালিকায় সেই নাম্বার অনুযায়ী কজলিস্ট হতো এবং সিরিয়াল ব্রেক করে মেনশন / তদবির কোন নামেই কেউ আগে শুনানি করতে না পারতো।
৩। যদি উচ্চ আদালতের প্রতিটি ব্যাঞ্চে পূর্বে দাখিলকৃত আবেদনসমূহ এই শুনানির আওতায় নিয়ে আসা যেতো।
৪। যদি দিন ভিত্তিক মোশন, রুল(৪৯৮), আপিল(আদেশের বিরুদ্ধে জামিন) সহ জামিন প্রাসঙ্গিক মামলা সমূহ , রিট (মোশন) শুনানি গ্রহণ সম্ভব হতো।
৫। যদি উচ্চ আদালতের প্রতিটি আদেশ সরবরাহও আবেদন বা ফাইলিং নাম্বার ক্রমানুসারে ভিন্ন অন্য কোন তদবির গ্রহণযোগ্য না হতো।
৫। যদি নিম্ন আদালতের প্রতিটি আদালতের (অতিরিক্ত, যুগ্ম দায়রা, ট্রাইব্যুনাল) বিচারাধীন মামলার জামিন শুনানি সম্ভব হতো।
৬। যদি প্রতিটি আদালতের মামলার ফটো সার্টিফাইড কপি সরবরাহ প্রক্রিয়া সফটওয়ার ভিত্তিক করা যেতো।
৭। যদি মামলা সংক্রান্তে আদায় যোগ্য ধার্য্যকৃত সকল ফি মোবাইল ব্যাংকিং তথা নগদ/বিকাশের মাধ্যমেই আদায় সম্ভব হতো।
৮। যদি থার্ড পার্টি এপ্স বাদ দিয়ে নিজস্ব ভিডিও এপ্স/সাইট তৈরী করে ভিডিও শুনানি করা যেতো।
যদি এবং যেতো দিয়েই শেষ করতে হলো বিধায়ই হয়তো ভার্চুয়াল আদালত গৃহবন্দী দিনেও আলোর মুখ দেখলো না এবং তাই প্রশ্ন থেকেই গেলো ভবিষ্যতে কি ভার্চুয়াল আদালত নিয়ে ভাবনা সম্ভব। নিজস্ব অনুর্বর মস্তিষ্কের বিশ্লেষণে মনে হচ্ছে এই সকল কার্যক্রমের বাস্তবিক প্রয়োগ ও সফলতা ৩ টি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল।
১। স্বদিচ্ছা।
২। স্বদিচ্ছা ও
৩। সর্ব সাকুল্যে ৪ টি এপ্স/সাইট ডেভেলপ। যথা-
ক) নিম্ন আদালতে মামলা ফাইলিং বা আবেদনের জন্য একটি এপ্স/সাইট যাহাতে সয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিটি ফাইলিং/আবেদনের বিপরীতে সতন্ত্র ফাইলিং বা আবেদন নাম্বার প্রদান করা হবে। এবং সেই নাম্বার ক্রমানুসারে বিভিন্ন আদালতের কার্যতালিকা সয়ংক্রিয়ভাবে তৈরী হবে।
খ) উচ্চ আদালতের ফাইলিং বা আবেদনের জন্য একটি এপ্স/সাইট যাহাতে সয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিটি ফাইলিং/আবেদনের বিপরীতে সতন্ত্র ফাইলিং বা আবেদন নাম্বার প্রদান করা হবে। এবং সেই নাম্বার ক্রমানুসারে বিভিন্ন আদালতের কার্যতালিকা সয়ংক্রিয়ভাবে তৈরী হবে।
গ) সকল প্রকার ফটো সার্টিফাইড কপি প্রদানের জন্য একটি পৃথক এপ্স/সাইট যাহাতেও আবেদনের সাথে সাথে পৃথক আবেদন নাম্বার এবং প্রস্তুত ও সরবরাহের ক্ষেত্রেও সেই নাম্বার ক্রম অনুসরণ করতে হবে।
ঘ) একটি ভিডিও কলিং এপ্স/সাইট যাহা শুধুমাত্র বিচার বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যাক্তি-আইনজীবীগণ ভিন্ন কাহারো কাজে আসবে না। (প্রাথমিকভাবে না হলেও হয়)।
স্বদিচ্ছা দু বার লিখার কারণ- প্রথমত, সৎভাবে, সত্যিকারের কিছু করতে চাওয়ার ইচ্ছা। দ্বিতীয়ত, কিছু করার ইচ্ছায় সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিকতা(ট্রেনিং গ্রহণ, সমর্থন, সহযোগিতা ইত্যাদি)।
একই ভাবে দেওয়ানী, রিট বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভার্চুয়াল আদালতে সন্নিবেশ করা খুব কঠিন কিছু বলে মনে হয় না।
এই লিখাটিতে শুধুমাত্র জরুরী বিবেচনায় গ্রহনযোগ্য প্রক্রিয়ায় ভার্চুয়াল আদালত কি করে চালু করা যেতো তার বিশ্লেষণের চেষ্টা করলাম। অনুপ্রেরণা পেলে উচ্চ ও নিম্ন আদালতে মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভার্চুয়াল আদালতের সুযোগ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলাদা করে লেখার চেষ্টা করবো যদিও আগামীকাল ফুল কোর্ট সভার সিদ্ধান্ত থেকে ভার্চুয়াল আদালত হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।
আমি বিশ্বাস করি প্রযুক্তিগত ধারণা রাখেন এমন বিচারক, আইনজীবী সমন্বয়ে গঠিত কমিটি-উপদেষ্টা কমিটি ও যথাযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিলে সর্বোচ্চ ১ মাসের মধ্যে এমন এপ্স/সাইট তৈরী করার সক্ষমতা রাখা আইটি প্রতিষ্ঠান এই দেশেই রয়েছে আর যদি সেটা নেই বলেন তাহলে বলবো – আজ থেকে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” শব্দটাকে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হওক।
মোঃএমদাদুল হানিফ (এমদাদ)
এডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
মোবাইলঃ ০১৬১১-৯০৭৪০০
ইমেইলঃ emdadulhanif@yahoo.com
Discussion about this post