বগুড়া জেলা আদালত প্রতিবেদকঃ বৈশ্বিক মহামারীর কারণে সারাদেশের মত বগুড়া জেলা জজ আদালতসহ বগুড়ার অন্যান্য আদালতে বন্ধ রয়েছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। শুধুমাত্র সীমিত আকারে চলছে ভার্চুয়াল কোর্ট। এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন বগুড়া বারের অধিকাংশ আইনজীবীগণ। বন্ধ হয়ে গেছে তাদের আয়ের উৎস।
বগুড়া জেলা জজ আদালতে যেখানে সর্বদা লোকে লোকারণ্য থাকত করোনাকালীন মহামারীতে সেখানে ভীড় এখন অনেকটাই কম। শুধুমাত্র জামিন শুনানির জন্য ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টগুলোতে কিছুটা ভীড় দেখা যায়।
উত্তরবঙ্গের দ্বার বগুড়ায় আইনজীবীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাতশ। মহামারীর কারণে তাদের অধিকাংশের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা এখন আর্থিক সংকটের মধ্যে আছেন। তবে এ সময়ে বগুড়া আইনজীবী সমিতি আইনজীবীদের জন্য আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। এ বিষয়ে বগুড়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় নয় মাস আমরা কষ্ট করেছি। করোনাকালীন সময় অনেকটা যুদ্ধের মত। এসময়ে সব পেশাজীবীদের মত আইনজীবীরাও ক্ষতিগ্রস্ত। তবে আমরা বগুড়া আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে সকল আইনজীবীকে ১০ হাজার টাকা করে মোট সাড়ে ৭৬ লক্ষ টাকা প্রদান করেছি।”
তিনি আরো জানান মে মাসের ১৩ তারিখ থেকে আমাদের ভার্চুয়াল কোর্ট চালু হয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণে সামজিক দুরত্ব মেনে আইনজীবীগণ তাদের ভার্চুয়াল কোর্টের কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট মোঃ ফেরদৌস আলম ভার্চুয়াল কোর্টের কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, “মহামান্য হাইকোর্টের আদেশে বগুড়া জেলায় ভার্চুয়াল আদালত চালু আছে। তবে সাধারণ আইনজীবীদের জন্য শুধুমাত্র ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র জামিন শুনানি যেহেতু ভার্চুয়াল আদালতে মাধ্যমে নিষ্পত্তি হচ্ছে তাই সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমার মতে, যেহেতু সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সব সরকারি অফিস চালু করা হয়েছে সেহেতু শুধুমাত্র আইনজীবীদের নিয়ে আদালত সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে খুলে দেওয়া সম্ভব। এতে করে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা উপকৃত হবেন।”
করোনার ফলে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম কতদিন বন্ধ থাকবে তা কারো জানা নেই। জুনিয়র আইনজীবীদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় অ্যাডভোকেট এ আই সুরমার সাথে। তিনি বলেন, “আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমরা এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছি। কোর্টে কাজ নেই, বাসায় বসে আছি, ক্লাইন্ট ফোন দিলে কবে কোর্ট খুলবে তাও বলতে পারিনা। সাধারণ বিচারপ্রার্থীরাও অসুবিধার মধ্যে আছে। ভার্চুয়াল কোর্ট চালু থাকলেও অধিকাংশই এ বিষয়ে অনভিজ্ঞ।”
শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা কেমন অবস্থায় আছেন? কথা হয় বাংলাদেশ অধিকার বঞ্চিত শিক্ষানবিশ আইনজীবী ফোরামের প্রতিনিধি মোঃ চান মিয়ার সাথে, “আমরা দীর্ঘদিন হল পরীক্ষার জন্য আটকে আছি। আমি অন্য কোন পেশায় জড়িত নেই। শুধুমাত্র কোর্টের উপার্জনেই আমার পরিবার চলে। সেখানে কোর্ট বন্ধ, আমার দিকটা ভাববার কেউ নেই।” শিক্ষানবিশ আইনজীবী রাজু মণ্ডল বলেন, “বগুড়া বারে শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা আর্থিক অনটনে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এমতাবস্থায় শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের জন্য কোন কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করেন নি যা অত্যন্ত দুঃখ জনক।” আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের সহযোগিতায় অন্যান্য পেশার সাথে জড়িত আছে প্রায় আরো কয়েক হাজার। করোনাকালীন সময়ে তারাও আর্থিক অনটনে আছেন।
কথা হয় মুহুরী মোঃ আবু জাফরের সাথে, তিনি বলেন, “এমনিতেই আমরা খুব সামান্য উপার্জন করি। তার মধ্যে কোর্ট বন্ধ, কোন উপার্জন নাই। এর মধ্যে দিন পার করাই কঠিন হয়ে পরেছে।” বগুড়া বারের অধিকাংশ আইনজীবী মনে করেন খুব তাড়াতাড়ি মহামারী শেষ হবার সম্ভাবনা নেই। ভার্চুয়াল আদালতেও সব ধরণের বিচার করা সম্ভব নয়। তাই সরকারি নির্দেশনা মেনে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বগুড়ার অধিকাংশ আইনজীবী কোর্ট করতে আগ্রহী। এভাবে চলতে থাকলে আইন পেশার সাথে অনেকেই দীর্ঘমেয়াদিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলেও তারা মনে করেন। তাই তারা সরকারের পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন।
বগুড়া জেলা আদালত প্রতিবেদকঃ মাহবুবুন নূর। ইমেইলঃ noorlawbd@gmail.com মোবাইলঃ ০১৯১২ ৮১৬১১২
Discussion about this post