নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা মামলার চার্জশিট নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আদালতে জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই কথা বলেন তিনি।
আবরার হত্যার ঘটনায় করা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে আব্দুল বাতেন বলেন, বুয়েটে আবরারকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় আমরা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অভিযোগপত্র দেয়ার কথা বলেছিলাম। এই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করচ্ছি। আমাদের তদন্ত কাজ প্রায় সম্পন্ন; নির্ধারিত সময়ে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হবে।
হত্যাকাণ্ডের মোটিভের বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, মোটিভ যাই থাকুক; কাউকে হত্যা করার অধিকার কারো নেই। আমরা এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি; শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদকে মারধর করা হয়েছিলো।
জড়িতদের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার এজাহারভুক্ত ১৯ আসামির মধ্যে এই পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এজাহার বহির্ভূত আরো ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ২১ জনের মধ্যে ৭ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলত জবানবন্দি দিয়েছেন।
গ্রেফতার ২১ জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আবরার ফাহাদের হত্যায় বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ক্যান্টিন বয়, শিক্ষক, গার্ডসহ কয়েকজন ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। মামলার বস্তুগত সাক্ষ্য ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। মামলার তদন্তে যে সমস্ত প্রক্রিয়া অবলম্বন করা দরকার; তা সম্পন্ন করা হয়েছে। গ্রেফতার ২১ জনের বিরুদ্ধেই প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাদের নাম উল্লেখ করেই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার (৬ অক্টোবর) বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রবিবার (৭ অক্টোবর) রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা। তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।
হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলেট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতার আসামিরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, অনীক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশারেফ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীর, মোহাজিদুর রহমান, শামসুল আরেফিন, মনিরুজ্জামান ও আকাশ হোসেন, মিজানুর রহমান (আবরারের রুমমেট), ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা, হোসেন মোহাম্মদ তোহা ও নাজমুস সাদাত।
Discussion about this post