অঙ্কিত নিয়ে আগুনের মাঝেই এখন নতুন আতঙ্ক ময়দানে

3
VIEWS
eden

বিডি ল নিউজঃ অঙ্কিতের চিকিৎসা শনিবার থেকে বন্ধ করে দিয়েছিল এই হাসপাতাল। ডাক্তাররাই শেষ করে দিল ওকে।

কোনও রিপোর্টই দেখানো হয়নি। আমরির ডাক্তারদের যত বার জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, ওঁরা বলতেন ভাল আছে। অঙ্কিতের রিস্‌ক বন্ডে পরিবারের কেউ সই করিনি। ইস্টবেঙ্গল থেকে বলা হল, হাসপাতাল পাল্টাতে হবে। বন্ড সই করানোর কথা কিছু হয়নি।পাশাপাশি দু’টো চেয়ারে বসে বাবা-ছেলে। রাজকুমার কেশরী এবং দীপক কেশরী। বাঁশদ্রোণীর বাড়িটা ভিড়ে ঠাসা। মিডিয়া, আত্মীয়, পাড়ার লোক সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ছে একের পর এক। এককোণে মা নির্মলা দেবীকে আনা হয়েছে কোনও মতে। পরিবার এখনও কাঁদতে-কাঁদতে ভাবছে, অঙ্কিত হয়তো প্র্যাকটিসে গিয়েছে। পরমুহূর্তে মনে পড়ছে, সেটা তো আর সম্ভব নয়। মনে পড়ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ। উপরের লাইনগুলো! উপরের অভিযোগগুলো। যা এ দিন মিডিয়ার সামনে করল অঙ্কিতের পরিবার। অঙ্কিত কেশরীর মৃত্যুকে ঘিরে গত কাল থেকে অশান্তির মেঘ জমছিল বঙ্গ ক্রিকেটমহলে। মঙ্গলবার বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাত শুরু হল। যেখানে আদরের অঙ্কিতের মৃত্যুর ‘দায়’ সরাসরি আমরি ডাক্তারদের উপর চাপিয়ে দিল অঙ্কিত পরিবার। ইস্টবেঙ্গল বা সিএবি— তারাও নিষ্কৃতি পেল না। আর এখানেই শেষ নয়। অঙ্কিত-পরিবারের বিস্ফোরণের কাছাকাছি সময়ে নতুন করে ‘অঙ্কিত-আতঙ্ক’ তাড়া করতে শুরু করল বঙ্গ ক্রিকেটকে। আবার এক দুর্ঘটনা, আবার ফিল্ডিং করতে গিয়ে ক্রিকেটারের মাথায় চোট, আবার মাথায় ‘ব্লাড ক্লট’ খুঁজে পাওয়া, আবার হাসপাতালে ভর্তি। এ বারে ক্রিকেটারের নাম— রাহুল ঘোষ। এ দিন ভিডিওকন মাঠে কলকাতা পুলিশ বনাম বিজয় স্পোর্টস ম্যাচে খেলছিলেন। কভারে ফিল্ডিং করার সময় আচমকাই বল লাফিয়ে মাথার পাশে রগে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নাইটিঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে ঠিক করে ফেলা হয়, অন্তত সাত থেকে দশ দিন রাহুলকে রাখা হবে পর্যবেক্ষণে। রাতের দিকে শোনা গেল, রাহুলের অবস্থা এখনও পর্যন্ত স্থিতিশীল। ডাক্তাররা নাকি মনে করছেন, মাথায় যে ‘ক্লট’ পাওয়া গিয়েছে তা ওষুধেই সেরে যাওয়া উচিত।

কিন্তু অঙ্কিতকে ঘিরে যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়ে থাকল গোটা দিন, তার প্রশমনে তো কোনও বিশল্যকরণীর সন্ধান এখনও নেই। রিস্‌ক বন্ডে সই করা ব্যক্তি হিসেবে আচমকাই উঠে এসেছে ইস্টবেঙ্গল কর্তা সদানন্দ মুখোপাধ্যায়ের নাম এবং পিছু পিছু প্রশ্ন— কোন যুক্তিতে তিনি অঙ্কিতের পরিবারকে অজ্ঞাতে রেখে রিস্‌ক বন্ড সই করলেন? মিডিয়ার আক্রমণে বিপর্যস্ত সিএবি পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে আমরিকে। বলছে, অঙ্কিতকে ওখানে তিন দিন ফেলে রাখা হয়েছিল। চিকিৎসা হয়নি। সব শুনে আমরি বলছে, যদি অঙ্কিতকে ফেলেই রাখা হয় তিন দিন, তা হলে তিনি গত শনিবার উঠে বসলেন কী করে? খাওয়াদাওয়া করলেন কী করে?

অঙ্কিত-কাণ্ডে সবচেয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা উঠছে তা হল, মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত পাওয়া অঙ্কিতকে কোন যুক্তিতে এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে পাঠানো হল? সোমবার পর্যন্ত বলা হচ্ছিল, অঙ্কিতের দাদা দীপক সইটা করেছেন। কিন্তু অঙ্কিতের দাদার বক্তব্য হল, ‘‘আমাদের বলা হয়েছিল, হাসপাতাল পাল্টাতে হবে। আমরা বলেছিলাম, যা ভাল বুঝবেন করুন। শুধু দেখবেন, ও যেন সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু রিস্‌ক বন্ডে সই আমরা কেউ করিনি।’’ যার পর তুমুল খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে যায় বন্ডে সইকারীকে নিয়ে। আমরি থেকে বলে দেওয়া হয়, ইস্টবেঙ্গলের সদানন্দ মুখোপাধ্যায় সই করে নিয়ে গিয়েছেন। সদানন্দকে ধরা হলে তিনি বললেন, ‘‘আমি দু’টো ব্যাপার পরিষ্কার করতে চাই। এক, টাকাপয়সার জন্য অঙ্কিতকে আমরি থেকে সরানো হয়নি। আর দুই, আমরির ডাক্তাররা অনুমতি দিয়েছিলেন বলেই আমি সই করে ওকে নিয়ে আসি।’’ যা শোনামাত্র পত্রপাঠ ওড়াল আমরি কর্তৃপক্ষ। সিইও রূপক বড়ুয়া বললেন, ‘‘আমরা বলেছিলাম, সরানো ঠিক হবে না। তিন জন ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে রেখেছিলাম অঙ্কিতকে।’’

সিএবি— তারাও নানাবিধ প্রশ্নের মুখে পড়ছে। যেমন, কোন ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে অঙ্কিতের হাসপাতাল পরিবর্তন করেছিল সিএবি? কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে বললেন, ‘‘আমরি এবং নাইটিঙ্গল দু’টো হাসপাতালের ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে তবেই পাল্টানো হয়েছে।’’ যা আমরি ওড়াচ্ছে। বলছে, কোনও কথাই হয়নি তাদের সঙ্গে। যার মানে, এক পক্ষের সঙ্গে আর এক পক্ষের বক্তব্য মিলছে না। বরং কেউ কেউ মনে করছেন, এই ঘটনায় ময়দানি অদক্ষতাই বেশি করে উঠে এল।

এক নয়। একসঙ্গে জোড়া ঘূর্ণিঝড়ের মুখে এখন দাঁড়িয়ে বঙ্গ ক্রিকেট।

সৌজন্যে আনন্দবাজার পত্রিকা

Next Post

Discussion about this post

নিউজ আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.