বিডি ল নিউজঃ
অপরিকল্পিত আন্দোলনে এবারো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। দেশব্যাপী ২০ দলীয় জোটের সোমবার দ্বিতীয় হরতাল কর্মসূচিতে
বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা কম-বেশি অংশগ্রহণ করলেও ঢাকা মহানগর বিএনপি ছিল অধরা। দলের গুরুত্বপূর্ণ এই সংগঠনের পাশাপাশি মহানগর অঙ্গ
সংগঠনগুলোও ছিল অগোচরে। আন্দোলন সফল করতে সমন্বিত কোনো উদ্যোগ ছিল না তাদের মধ্যে। যার কারণে হরতালের মতো কর্মসূচিতেও রাজধানী
ঢাকা ছিল নিরুত্তাপ। এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়ার প্রতিবাদে সারাদেশে প্রথম সকাল-সন্ধ্যা হরতাল
কর্মসূচি পালন করে জোট। ওই হরতাল কর্মসূচিতেও মহানগর বিএনপির অংশগ্রহণ ছিল শূন্যের কোঠায়।
এসব বিষয়ে নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, গত বছরের আন্দোলনের সময়েও রাজধানী ঢাকাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সীমাহীন ব্যর্থতার কারণে
আন্দোলনের ফসল ঘরে তোলা যায়নি। এ ব্যর্থতার কারণে খোকা-সালাম কমিটিকে বাদ দিয়ে গত জুলাই মাসে ৫২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা
হয়। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে এ কমিটি দেয়া
হয়। এ সময়ে তাদের এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হলেও তা দিতে পারেননি। যদিও দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন,
মহানগর কমিটির প্রায় নব্বই শতাংশ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন শুধু ঘোষণা দেয়ার পালা। কিন্তু আদতে কোনো কাজ করা হয়েছে কিনা তা নিয়ে এখন
সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ দলের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে গতকালকের হরতালের কর্মসূচিতে সদস্য সচিব ব্যতীত কোনো নেতাকে রাজপথে দেখা যায়নি।
এমনকি ওই সব নেতার খোঁজ পর্যন্ত জানেন না তারা। এছাড়া তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ পেয়েছেন কর্মীরা। যার কারণে সংগঠনের টপ টু বটম
সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি হয়েছে।
নেতাকর্মীরা জানান, কেন্দ্রের শক্তির মহড়ায় শক্তি বাড়ে তৃণমূলে। বিগত দিনে কেন্দ্রের দুর্বলতায় সরকারপতন আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। তবে আর ব্যর্থতা নয়,
চাই সফলতা। সরকারপতন করেই ঘরে ফেরা হবে এবার। তবে সেজন্য আগে মাঠ জমাতে হবে কেন্দ্রকে। এমনটাই মনে করছেন বিএনপির তৃণমূল
নেতাকর্মীরা। এছাড়া আন্দোলন-পরিকল্পনায় বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ারও প্রধান টার্গেট এবার ঢাকা। এ জন্য প্রায় প্রতিটি জনসভাতেই তিনি
ভবিষ্যতে ঢাকার আন্দোলন নিয়ে তার প্রত্যাশার কথা বলেছেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকার রাজপথ খালি থাকবে না বলে ছাত্র কনভেনশনে প্রত্যয়
ব্যক্ত করেন তিনি। গুলি, বন্দুক, কাঁদানে গ্যাস উপেক্ষা করে সবাইকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বানও জানান বিএনপিপ্রধান।
খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন-পূর্ববর্তী সময়ে শুধু ঢাকার আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণেই ফসল ঘরে তুলতে পারেনি
বিএনপি। তাই এবার আন্দোলনে ঢাকাকে প্রধান টার্গেট করে আন্দোলনের রূপরেখা সাজান বিএনপিপ্রধান। এ লক্ষ্যে মহানগর নেতাদের সঙ্গে নির্দিষ্ট বিরতিতে
একের পর এক বৈঠক করেছেন তিনি। কিন্তু তার কোনো পরিকল্পনাই আলোর মুখ দেখেনি। রাজধানী ঢাকাতে কোনো নেতাকর্মীকে রাজপথে নামাতে পারেনি মহানগর বিএনপি।
তবে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে মহানগর বিএনপির এক নেতা জানান, সরকার প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে
তল্লাশির নামে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। গত চারদিন ধরে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলছে দেশব্যাপী। আইনশৃক্সখলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে
দেশের বিভিন্ন জেলায় গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত কয়েক শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে। তল্লাশি চালানো হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা
মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, যুবদল ঢাকা
মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীর, পল্লবী থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ, শ্যামপুর থানা বিএনপির সাধারণ
সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, রূপনগর থানা বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমানসহ প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাসায়। এ পরিস্থিতিতে
নেতাকর্মীদের আন্দোলনমুখী করতে একটু সময় নিচ্ছে। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারব।
ঢাকায় অতীতের আন্দোলনের পুনরাবৃত্তি হবে না জানিয়ে একটি আলোচনা সভায় ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা
আব্বাস ভবিষ্যতে ঢাকায় জোরদার আন্দোলনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি বলেন, স্বীকার করতে দ্বিধা নেই সারাদেশে যেভাবে আন্দোলন হয়েছে তার
ক্ষুদ্র অংশও ঢাকায় হলে সরকার দাঁড়াতে পারত না। এটি কারো একার নয়, সবার দোষ রয়েছে। তবে এবার সারাদেশে আন্দোলন না হলেও ঢাকায় আন্দোলন
হবে। তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন যে বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে দায়িত্ব দিয়েছেন তা পূরণ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মহানগর পুনর্গঠনের কাজ ভালো
এগিয়েছে। সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছি। এবার ঢাকায় নেতাকর্মীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনে নামবেন।
কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচি বাস্তবায়নে তার কোনো প্রতিফলন হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে দলের মহানগর অঙ্গসংগঠনের এক
দায়িত্বশীল নেতা জানান, মির্জা আব্বাস দায়িত্ব গ্রহণ করার পর মহানগরের অঙ্গ-সংগঠনগুলোকে নিয়ে কোনো সমন্বয় কমিটির বৈঠক করেননি। আর তার
চারপাশে নিরাপত্তা বলয় থাকার কারণে কোনো সময় কোনো নেতাকর্মী সাক্ষাৎ পান না। ফলে আন্দোলনমুখী কোনো পরিকল্পনা ও দায়িত্ব বণ্টনের মতো
গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এখনো নিতে পারেনি মহানগর বিএনপি।
এছাড়া সম্প্রতি ২০ দলীয় জোটের মহানগর পর্যায়ের নেতাদের এক বৈঠকে রাজধানী ঢাকাতে প্রত্যেক থানায় সংগ্রাম কমিটি গঠনের দাবি উত্থাপন করা
হয়েছিল। কিন্তু সেই দাবি বাস্তবায়ন করে জোটের সঙ্গে সমন্বয় করে কোনো কমিটি গঠনের উদ্যোগ পর্যন্ত নেয়া হয়নি। এ কমিটি গঠন করা হলে জোটের মধ্যে
একধরনের বোঝাপাড়া সম্পন্ন করা যেত। এমনকি যার যার দায়িত্ব পালনেরও ক্ষেত্র তৈরি হতো। মূলত এসব কারণেই রাজধানী ঢাকাতে কোনো আন্দোলন
গড়ে তুলতে পারছে না জোট।
আন্দোলনের বিষয়ে জোটের সিনিয়র নেতাদের উদ্দেশ করে জাগপা সভাপতি ও ২০ দলীয় জোট নেতা শফিউল আলম প্রধান বলেছেন, হরতাল ডেকে ঘরে
বসে বিজয় অর্জনের স্বপ্ন দুরাশায় পরিণত হবে। সময় এসেছে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষায় সিনিয়র নেতাদের রাজপথে নেমে আসার। কর্মী ও জনগণ আখেরি
লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। এখন নেতাদের মাঠে নেমে আসতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে এ দেশের জনগণ একটা বড় ধরনের আন্দোলন দ্রুতই প্রত্যাশা
করছে। ঢাকা মহানগর বিএনপি তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হবে।
Discussion about this post