নির্বাচনের বছরে দলে আসা ‘সুযোগসন্ধানীদের’ বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন আওয়ামী লীগের ‘ত্যাগী’ নেতা-কর্মীরা। দেশের বিভিন্ন এলাকাতেই নানাভাবে দলের অন্তপ্রাণ কর্মীরা তাদের মনোভাব প্রকাশ করছেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজেদের পরিচয় গোপন করছেন তারা।
বাংলাদেশে এর আগেও দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলে নতুন নেতা কর্মীর অভাব হয় না। রাজনৈতিক ময়দানে ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের অবস্থান দৃশ্যত শক্তিশালী। তাদেরকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছে না মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। এই পরিস্থিতিতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সতর্কতার পরেও ভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্বাসের লোকদেরকে আওয়ামী লীগে নিয়ে আসার প্রবণতা ঠেকানো যাচ্ছে না।
বিভিন্ন এলাকাতেই নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীদেরও দলে টানছেন আওয়ামী লীগের নেতাদের একটি অংশ। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতা বা কর্মী হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে দলে আসা অনেকের বিরুদ্ধে
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি শ্রেণি আছে, যারা সবসময়ই সরকারি দলের লোক। সে কারণেই ক্ষমতাসীন দলে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা বাড়ে। আর এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। আগামীতেও ক্ষমতায় আসার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আওয়ামী লীগে আসতে চাইছে স্বার্থগোষ্ঠীরা।
তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট সচেতন বলে নানা বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে। ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন জেলা সফরে গিয়ে দল ভারী করতে লোক নিতে নিষেধ করে যাচ্ছেন।
এর মধ্যে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় সোচ্চার হওয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ অন্তপ্রাণরা। কাউয়া হিসেবে পরিচিতি অনুপ্রবেশকারীদেরকে সরিয়ে দেয়ার দাবি উঠেছে।
ঢাকার মোহাম্মদপুর ও টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে কাউয়ামুক্ত আওয়ামী লীগ চেয়ে বিলবোর্ড ও পোস্টার সাঁটানো হয়েছে যেখানে কাউয়ামুক্ত দল নিশ্চিত করার দাবি করা হয়েছে।
গত বছর ২২ মার্চ সিলেটে বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় সংগঠনে ‘কাউয়া’ ঢুকছে বলে মন্তব্য করেছিলেন ওবায়দুল কাদের। সেদিন তিনি বলেন, ‘প্রচার লীগ, তরুণ লীগ, কর্মজীবী লীগ, ডিজিটাল লীগ, হাইব্রিড লীগ আছে। কথা হাছা, সংগঠনে কাউয়া ঢুকছে। জায়গায় জায়গায় কাউয়া আছে। পেশাহীন পেশিজীবী দরকার নেই। ঘরের ভেতর ঘর বানানো চলবে না। মশারির ভেতর মশারি টানানো চলবে না।’
এরপর থেকেই কাউয়া শব্দটি ব্যাপক পরিচিতি পায় আওয়ামী লীগে। অনুপ্রবেশকারীদেরকে এই নামেই ডাকছেন ত্যাগী নেতা-কর্মীরা।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডির ২৭ সড়কের শঙ্কর আবাসিক এলাকার বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের সামনে ৩০ ফুটেরও বেশি দৈর্ঘ্যের বিলবোর্ডটি সাঁটানো হয়। এতে লেখা ছিল, ‘দাঁড় কাউয়ামুক্ত মোহাম্মপুর থানা আওয়ামী লীগ চাই’ লেখাটির ডান পাশেই বিশাল একটি দাঁড়কাকের ছবি দেওয়া হয়েছে। তখন এই বিলবোর্ডের ছবি ভাইরাল হয়ে যায়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে কোন ব্যক্তি বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থা্কলে সেটা লিখিত আকারে সাধারণ সম্পাদকের কাছে দিলে, আমরা তদন্ত করব। তদন্তে যদি কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
হানিফ এমনও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। এখানে সব শ্রেণিপেশার মানুষ থাকতে পারে। রাজনীতির মাঠে দাঁড় কাউয়া শব্দ উচ্চারণ করা যৌক্তিক নয়। এটা রাজনৈতিক ভাষা নয়।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এ সকল প্রচারণা আমাদের দলের বিরুদ্ধে যায়। তাহলে কি দল ঠিক মতো কাজ করছে না? আমরা অনুপ্রবেশ নিয়ে সবসময়ই সতর্ক আছি। যেখানেই আমরা প্রমাণ পাচ্ছি সেখানেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
Discussion about this post