নিজস্ব প্রতিবেদক: মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করা ‘সি উইন্ড’ এবং ‘সি ভিউ’ নামের মাছ ধরার জাহাজের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কাস্টমসের নেতৃত্বে কমিটি ৭ কিংবা ৯ সদস্যবিশিষ্ট হতে পারে। দু-একদিনের মধ্যে কমিটি ঘোষণা হবে।
আজ রবিবার সচিবালয়ে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় দুটি বিদেশি জাহাজের অনুপ্রবেশের বিষয়ে নীতিনির্ধারণী সভা শেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, দুটি মাছ ধরার ট্রলার মিথ্যা ডিক্লারেশন দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। আমরা সেটা ইনকোয়ারি করে ধরতে পারছি। আমরা এখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিং করেছি। এজন্য কাস্টমসকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা (দুটি জাহাজ) যে মিথ্যা ডিক্লারেশন দিয়ে ঢুকেছে এটার আইনগত ব্যবস্থা যা আছে নেবেন। সেটা (কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে) আমাদের জানানোর পর তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব যে আমরা এই ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মৎস্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, কী উদ্দেশ্যে তারা (জাহাজ) এসেছে সেটা কমিটি দেখবে। নামও সত্যিকারভাবে যা আছে তা কি না সেটা দেখা হবে। এছাড়া
ভবিষ্যতে যখন কোনো মাছ ধরার ট্রলার বাংলাদেশে ঢুকতে যাবে মেরামত কিংবা যেকোনো কারণেই, সেটা তারা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানাবে। এরপর আমাদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে তারা ঢুকবে কি ঢুকবে না।
জাহাজ দুটি কোন দেশের পতাকাবাহী- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওরা ক্যামেরুনের পতাকা নিয়ে আসছিল। সেটাও তারা নামিয়ে ফেলেছে। জাহাজ দুটি এখন চট্টগ্রামের কর্ণফুণী নদীতে কন্টিনেন্টালের (কন্টিনেন্টাল মেরিন ফিসারিজ লিমিটেড) জেটিতে আছে। তবে কোন দেশের মালিকানার জাহাজ তা তদন্তের পর জানা যাবে। সব ডিপার্টমেন্ট, সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস এ বিষয়ে অ্যাকশন নিচ্ছে।
দুটি জাহাজের অনুপ্রবেশ নিরাপত্তা দুর্বলতা বা হুমকির মধ্যে কি না- এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তা হুমকির মুখে নয়। তারা মিথ্যা ডিক্লারেশন দিয়েছে। আমরা যখন ধরতে পারছি তখন সেগুলো যাতে মুভ না করতে পারে, কোনো জিনিস আনলোড করতে না পারে সে জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও কাস্টমস তাদের পর্যবেক্ষণে রেখেছে।
জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নষ্ট ইঞ্জিন মেরামতের কথা বলে জাহাজ দুটি প্রবেশ করেছে। এছাড়া আরও অনেক কিছু তারা মিথ্যা ডিক্লেয়ার দিয়েছে, এ জন্য তাদের আটকানো হয়েছে। কোন দেশ থেকে তারা আসছে সেই বিষয়েও তারা মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। ইন্টারন্যাশনালিও আমরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রতিটি জাহাজে আটজন করে নাবিক ছিল। জাহাজে আরও কী ছিল সেটা এখনও পরিষ্কার না। তবে কিছু মাছ ধরার জালও ছিল।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, জাহাজ দুটির স্থানীয় এজেন্ট ‘ইন্টারমোডাল প্রাইভেট লিমিটেড’। ‘সি উইন্ড’ এর দৈর্ঘ্য ৪৬ মিটার ও ‘সি ভিউ’ এর দৈর্ঘ্য ৪৫ মিটার। গত ২০ আগস্ট জাহাজ দুটি চট্টগ্রাম বন্দরে বহির্নোঙর করে। স্থানীয় এজেন্ট জাহাজ দুটি মার্চেন্ট শিপিং অধ্যাদেশ অনুযায়ী এনেছেন বলে দাবি করেছেন। তবে আইন অনুযায়ী জাহাজ এভাবে আসার সুযোগ নেই।
আরও জানা গেছে, জাহাজ দুটি ইন্ডিয়ান ওশান টুনা কমিশনের (আইওটিসি) ইলিগ্যাল, আনরিপোর্টেড এবং আনরেগুলেটেড ফিশিংয়ের (আইইউইউ) তালিকাভুক্ত।
মৎস্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, জাহাজ দুটির কাগজপত্রে অনেক ত্রুটি আছে। পোর্ট ক্লিয়ারেন্স পরিবর্তন করা হয়েছে, অর্থাৎ এক জাহাজের পরিবর্তে এই জাহাজের নাম যোগ করা হয়েছে। পোর্ট ক্লিয়ারেন্স অনুযায়ী জাহাজের কম্বোডিয়া যাওয়ার কথা। সেখানে জাহাজ কীভাবে বাংলাদেশে এলো সেই বিষয়ে স্থানীয় এজেন্ট কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। মেরামতের কথা বলা হলেও জাহাজে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি।
সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রইছউল আলম মন্ডল, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব এম খোরশেদ আলমসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post