ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এনে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় সংসদ সদস্যের (এমপি) উপস্থিতিতে এক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কানে ধরে উঠবস করার ঘটনায় দেশজুড়ে বইছে সমালোচনার ঝড়; তার পদত্যাগও দাবি করছেন অনেকে।
তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও স্থানীয় ওই এমপি এ কে এম সেলিম ওসমান বলেন, ‘ঘটনাটির তদন্তে কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তদন্তাধীন বিষয়ে কথা বলা উচিত নয়। তদন্ত কমিটি ঘটনার সময় উপস্থিত জনতার সঙ্গে কথা বলবে; সবার সঙ্গে কথা বলবে। যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে দায় মাথা পেতে নেব।’
মঙ্গলবার রাতে টেলিফোনে সমকালকে একথা বলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমান।
গত শুক্রবার তার উপস্থিতিতে বন্দর উপজেলার কল্যান্দী এলাকায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে মারধরের পর কান ধরে উঠবস করানো হয়। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বইছে। সেলিম ওসমানের পদত্যাগও দাবি করেছেন অনেকে।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত-সমালোচিত ‘ওসমান পরিবারের’ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, ‘আমি যদি পত্রিকায় দেখতাম, কোনো এমপি একজন শিক্ষককে কানে ধরে উঠসব করাচ্ছে, তাহলে আমিও প্রতিবাদ করতাম।’
তবে শ্যামল কান্তিকে কানে ধরে উঠবস করানোর ‘যৌক্তিক কারণ’ ছিল বলে আবারও দাবি করেন তিনি।
ঘটনার পরপরই সেলিম ওসমান বলেছিলেন, প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ধর্ম সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন। এ কারণে স্থানীয় জনতা বিদ্যালয় ঘেরাও করে তাকে মারধর করে। উত্তেজিত জনতার হাত থেকে তাকে রক্ষা করতেই কানে ধরে উঠবসের মতো লঘু শাস্তি দিয়েছিলেন।
আগের বক্তব্যে অনড় রয়েছেন কি-না—এ প্রশ্নের জবাবে সেলিম ওসমান এমপি বলেন, ‘এ কথা তদন্ত কমিটি গঠনের আগে বলেছিলাম। এখন আমার আর কোনো বক্তব্য নেই। তদন্ত কমিটিই দেখবে, কে দায়ী।’
এদিকে, শ্যামল কান্তি ভক্তকে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে করা হয়েছে। সোমবার ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি মঙ্গলবার হাতে পেয়েছেন শ্যামল কান্তি।
প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে বরখাস্ত প্রসঙ্গে সেলিম ওসমান সমকালকে বলেন, ‘বরখাস্তের সিদ্ধান্ত স্কুলের পরিচালনা কমিটির। এখানে আমার কিছুই বলার বা করার নেই। আমি টিভিতে খবর দেখে জেনেছি।’
আলোচিত-সমালোচিত এমপি শামীম ওসমানের ভাই সেলিম ওসমান বলেন, ‘কমিটি শ্যামল কান্তির অপরাধ পেয়েছে।’
গত শুক্রবারের ঘটনা সম্পর্কে সেলিম ওসমান সমকালকে আরও বলেন, ‘দুটো ঘটনা ঘটেছিল। শ্যামল কান্তি ছাত্রকে মারধর করেছে; এটা অন্যায়। ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করেছে, এটাও অন্যায়।’
শ্যামল কান্তি ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন, তা নিজ কানে শুনেছেন কি-না—এ প্রশ্নের জবাবে সেলিম ওসমান সমকালকে বলেন, ‘আমি এলাকার এমপি। সে দিন যত লোক উপস্থিত ছিল, সবাই এ কথা বলেছে।’
তিনি সমকালকে আরও জানান, স্কুল কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসন উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তাকে ডেকেছিল। এ কারণেই তিনি পিয়ার সাত্তার লতিফ বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। শ্যামল কান্তিকে জনরোষ থেকে রক্ষা করতেই শাস্তি দিয়েছিলেন।
এদিকে, শিক্ষককে কানে ধরে উঠবস করানোর প্রতিবাদে মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা কানে ধরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিনোদন তারকাসহ হাজারো মানুষ কানে ধরা ছবি দিয়ে প্রতিবাদ জানান।
এ বিষয়ে সেলিম ওসমান সমকালকে বলেন, ‘তাদের আবেগ-প্রতিবাদ যৌক্তিক। যদি আমি তাদের জায়গায় থাকতাম, তাহলে আমিও হয়ত তাই করতাম। কিন্তু আসল ঘটনা কী, তা খুঁজে দেখতে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তের ফল আসলেই জানা যাবে, কে দোষী।’
Discussion about this post