সার্জারি অপারেশনের মাধ্যমে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জঙ্গিবাদ সমস্যা নির্মূল করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) আতিকুল ইসলাম।
রোববার (১৭ জুলাই) সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অবগত নই। কারণ আমি দীর্ঘ ৪০ বছর অস্ট্রেলিয়া থেকে ৬ মাস আগে দেশে এসে নর্থ সাউথের দায়িক্ত নিয়েছি। কিন্তু তাই বলে যে আমি জঙ্গিবাদ সমস্যা বুঝে উঠতে পারব না, তা কিন্তু না।’
তিনি বলেন, ‘যে সব শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত, তাদের প্রতি নর্থ সাউথের পক্ষ থেকে ঘৃণা জানাচ্ছি।’
গৃহীত পদক্ষেপ প্রসঙ্গে নর্থ সাউথের ভিসি বলেন, ‘সব শিক্ষকদের বলেছি, শিক্ষার্থীদের দিকে নজর রাখতে। নিয়মিত মোটিভেশনের ব্যবস্থা করেছি। লাইব্রেরি পরিষ্কার করেছি এবং নামাজের জায়গাতেও সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছি।’
অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বাসায় ফিরে সন্তান যেন দরজা বন্ধ করতে না পারে, সে দিকে নজর রাখুন। তাদের আচরণে কোনো পরিবর্তন দেখলে অবশ্যই পুলিশকে জানান।’
এর আগে শনিবার বিকেলে গুলশানের রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলায় জড়িতদের বাড়ি ভাড়া দেয়ার আগে তাদের নাম ঠিকানাসহ তথ্য না রাখায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত সহ-উপাচার্যসহ (প্রোভিসি) তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
মতবিনিময় সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘সরব রাজনীতি না থাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হচ্ছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আবশ্যই প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরব রাজনীতি শুরু করতে হবে।’
স্কলাস্টিকা স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল ব্রি. জে (অব.) কাওছার আহমেদ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থীকে মনিটরিং করা হয়। কিন্তু তারা যখন আমাদের কম্পাউন্ডের বাইরে চলে যায়, তখন তো আর তাদের মনিটরিং করা সম্ভব হয় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে একবার করে মোটিভেশন সভা আয়োজন করে, সেখানে যদি পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মাঝ থেকে এ ধরনের প্রবণতা দূর হবে।’
গত ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। ১২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর জিম্মি সংকটের সময় জঙ্গিরা ১৭ জন বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। তাদের বোমায় নিহত হোন দুই জন পুলিশ কর্মকর্তা। পরে জিম্মি উদ্ধার অভিযানে ওই রেস্তোরাঁর শেফ সাইফুল চৌকিদারসহ পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়।
গুলশান হামলায় অংশ নেয়া নিবরাস ইসলাম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। আবার জিম্মি অবস্থায় জীবিত উদ্ধার হওয়া হাসনাত রেজাউল করিম ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক।
এ ছাড়াও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে হামলার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত আবিরও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ওই তিন কারণে জঙ্গি হামলার মদদদাতা হিসেবে সন্দেহের তির যখন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে, ঠিক তখনই জানা গেল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসির বাসায় ভাড়া থেকেই পাঁচ জঙ্গি হামলা চালায় গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে।
Discussion about this post