জমির উদ্দীন চবি: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সবুজ পাহাড়ে ছাত্রীদের স্বাগত জানানোর প্রতীক্ষায় রয়েছে শেখ হাসিনা হল। ৩৪০ জন ছাত্রী থাকার ব্যবস্থা থাকা এ হলের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে সাজসজ্জার কাজ। চবির চলমান আবাসন সমস্যা কাটিয়ে তুলতে ছাত্রীদের জন্য ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত শেখ হাসিনা হল। গুণগত মান নিশ্চিত করে ত্রুটিমুক্তভাবে হলটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে এর তত্ত্বাবধান করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর। ৬৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের জমিতে চারটি স্বয়ংক্রিয় লিফট সিস্টেমসহ গড়ে তোলা চারতলা এ হল এখন উদ্বোধনের প্রহর গুনছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চবি উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে ছাত্রদের জন্য একটি এবং ছাত্রীদের জন্য একটি হল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩৪০টি আসন সমৃদ্ধ ছাত্রীদের জন্য শেখ হাসিনা হল এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। হলটি চালু হলে ছাত্রীদের আবাসন সমস্যা অনেকটা লাঘব হবে। হলটি উদ্বোধনের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানাব।’ জিরো পয়েন্ট থেকে নেমে সোজা পশ্চিমে শহীদ মিনার মোড়। শহীদ মিনার মোড় ডিঙিয়ে বামে গেলে শামসুন্নাহার হল। শামসুন্নাহার হলের প্রবেশপথের বামে গড়ে তোলা হয়েছে শেখ হাসিনা হল। আবাসিক দুটি ভবনের মাঝে রয়েছে ক্যান্টিন ও ডাইনিং। রয়েছে ১২০ জন ছাত্রীর ধারণ ক্ষমতার মসজিদ। এতে রয়েছে অজুর সুব্যবস্থা। স্থাপন করা হয়েছে দুই হাজার বর্গফুটের লাইব্রেরি। এরে পাশেই রয়েছে একই আয়তনের কমন রুম। ৯৫০ বর্গফুট আয়তনজুড়ে রাখা হয়েছে ইনডোর গেমের ব্যবস্থা। এ হলের প্রতি তলায় থাকছে আটটি গোসলখানা। প্রতিটি কক্ষে থাকতে পারবেন চারজন ছাত্রী। প্রতি ছয় রুম পরপর ছাত্রীদের রান্নার জন্য থাকছে দুটি চুলা। পড়ার টেবিলে রয়েছে এনার্জি সেভিং বাল্ব। প্রতিটি রুমের সামনে সুপরিসর বারান্দায় কাপড় শুকানোর জন্য স্থায়ীভাবে দেওয়া হয়েছে স্টেনলেস স্টিলের পাইপ। হলের চার পাশজুড়ে থাকবে বাহারি ফুল ও ফলের বাগান। বাগানে বসানো হয়েছে সুদৃশ্য গার্ডেন লাইট। হলের ছাদে ছাত্রীরা যাতে দলবদ্ধ হয়ে আড্ডা দেওয়ার মজা নিতে পারে সেজন্যও রয়েছে সুব্যবস্থা। পুরো হলটি থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সার্ভারের অধীনে ওয়াইফাই ইন্টারন্টে সংযোগের আওতায়। রাখা হয়েছে চারটি লিফট স্থাপনের ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে হলের প্রতিটি তলায়। হলে সার্বক্ষণিক পানি নিশ্চিত করতে থাকছে আলাদা পাম্প হাউস। দুটি উচ্চ ক্ষমতার মোটর হলটিতে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বতর্মান সরকার ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি হল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে শেখ হাসিনা হলের নির্মাণ কাজ শেষ। এ হলটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে সময় লেগেছে আড়াই বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নির্মাণকাজও চলছে দ্রুতগতিতে। শেখ হাসিনা হলটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের মাধ্যমে গুণগত মান নিশ্চিত করে নির্মাণ করা হয়েছে।’ এদিকে শেখ হাসিনা হলের কাজ শেষ হওয়ায় দারুণ খুশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাষ্টার্সের শিক্ষার্থী আমিনা ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য সাতটি হল থাকলেও ছাত্রীদের জন্য রয়েছে মাত্র তিনটি হল। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় অর্ধেকই ছাত্রী। শেখ হাসিনা হল চালু হলে ছাত্রীদের আবাসন সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।’
Discussion about this post