ফরিদ মিয়া, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি, বিডি ল নিউজঃ ২০ দলীয় জোট বিএনপির ডাকা অনির্দিষ্টকালের টানা অবরোধের কারনে ধস নেমেছে টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্পে। বিক্রেতাদের আনাগোনা থাকলেও দেখা মিলছেনা পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের।
যে হাটে দুই দিনে ক্রয় -বিক্রয় হয় কয়েক কোটি টাকার কাপড় সেখানে মাত্র কয়েক লাখ টাকার কাপড় বিক্রয় করেই বিক্রেতারা তাদের হাজার হাজার পিস শাড়ী ফেরত নিয়ে যাচ্ছে। আর তাই বিপাকে পরেছেন নিম্নবিত্ত ও মধ ̈বিত্ত তাঁতিরা।
যার ফলে অনেক তাঁতি এখন তাদের তাঁত বিক্রয় করার জন রাস্তার অলিগলীতে পোষ্টার লাগিয়েছেন। আর এখনও যারা তাঁতের হাতল ধরে আছেন তাদেরও ঘারে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঋণের বোঝা। সরকার চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সমাধান করার কোন উদ্যোগ না নেয়ায় ও ধারাবাহিক অবরোধ চলায় চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন টাঙ্গাইলের সর্বশ্রেনীর তাঁতিরা।
সরজমিনে এমনটিই জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ও সদর উপজেলার ধুলটিয়া গ্রামের বেশ কিছু তাঁত মালিক। তারা জানিয়েছেন হাট নির্ভর তাঁতিরা পরেছেন সবচেয়ে বিপাকে। কারন হাটে কাপড় বিক্রয় হোক বা না হোক, ঋন করে হলেও শ্রমিকদের মজুরি দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। চাহিদা অনুপাতে হাটে ও শপিং সেন্টারে শাড়ী বিক্রয় না হওয়ায় এরকম বিপাকে পরতে হচ্ছে তাদের।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার করটিয়া ও বাজিতপুরের হাটে কাপড় বিক্রয় করতে না পেরে শূন্য হাতে ফিরছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী। আবার যারা শাড়ী বিক্রয় করেছেন চাহিদার তুলনায় তা একেবারেই কম। অবরোধের কারনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহা সড়ক বন্ধ থাকায় জেলার বাইরের পাইকারি ক্রেতার করটিয়ার হাটে কাপড় μয় করতে আসতে পারছেন না। যার ফলে বন্ধ হয়ে পরেছে কয়েক কোটি টাকার কাপড় বেঁচা-কেনা।
অন ̈দিকে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ী মোট উৎপাদনের বড় একটি অংশের ক্রেতা হচ্ছে ভারত। অবরোধের কারনে সেখানেও টাঙ্গাইল শাড়ী প্রবেশে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।রফিকুল ইসলাম, কাসেম, আইনুদ্দিন, আব্দুর রহিম মিয়া, জয়নাল মিয়া সহ অনেক ব্যবসায়ীর সাথে কথা হয় দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি শাড়ী কাপড়ের সদর উপজেলার করটিয়া হাটে।
তারা জানান, তাঁত চালানো এখন দুঃসাধ্য ব্যাপার। এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে আমাদের তাঁত বন্ধ হয়ে যাবে। অর্ধহারে অনাহারে কাটবে আমাদের দিন। হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পরবে। সরকারকে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।
অন্য দিকে তাঁত শিল্পের প্রধান কাঁচামাল সুতার দাম কমিয়ে আনা ও ভারতীয় শাড়ী বাংলাদেশে প্রবেশের বিরুদ্ধে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেবে এমন দাবি এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের।
কিন্তু সরকারের অনিহার কারনে আর চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে টাঙ্গাইলের শাড়ীর চাহিদা থাকা সত্বেও টাঙ্গাইলের এতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প এখন হারিয়ে যাচ্ছে তাঁতিদের জীবন থেকে। আর মুষ্টিমেয় কিছু বিত্তবানদের কাছে চলে যাচ্ছে এ শিল্প।
অবরোধের কারনে আর তাঁত শিল্পে মন্দাবস্থা থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন যারা ব্যাংক, এনজিও ও স্থানীয় সমিতির কাছ থেকে সুদের বিনিময়ে টাকা ঋন নিয়েছেন। একদিকে কাপড় বিক্রয় করতে পারছেননা অন্য দিকে রাতারাতি বেড়ে যাচ্ছে সুদের টাকার পরিমান।
করটিয়া হাট কর্মকর্তা ও শাড়ী ব্যবসায়ী শাজাহান আনছারি জানিয়েছেন, করটিয়া হাটে প্রতি সপ্তাহে ২দিনে প্রায় ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার শাড়ী বিক্রয় হয়। হাটে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা আসতে না পারায় শাড়ী ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে পরেছে।
এমতবস্থায় রাজনীতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এ জেলার হাজার হাজার মানুষের রুজির একমাত্র অবলম্বন তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবেনা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Discussion about this post