গত কয়েক বছর ধরে গৌতম গম্ভীর ও ডিডিসিএ কর্তাদের মধ্যে যে তরজা চলছে, তার পর এখন এই প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক।
একে তো ২০১৩-র সেই ফিরোজ শাহ কোটলা থেকে রঞ্জি ম্যাচ জোর করে রোশনারা গ্রাউন্ডে সরিয়ে নিয়ে এসে পঞ্জাবের কাছে আড়াই দিনে হারার পর গম্ভীরের সঙ্গে তুমুল অশান্তি দিল্লির ক্রিকেট কর্তাদের।
তার উপর গত বছর খারাপ আবহাওয়ার জন্য গুজরাত ম্যাচ আমদাবাদে সরানোর আবেদন করার পরের দিনই তা প্রত্যাহার করা নিয়ে আর এক প্রস্থ ঝগড়া। গম্ভীরের আবেদন নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে তাদের রাজি করিয়েও শেষ পর্যন্ত তাঁর মত বদলে ডিডিসিএ কর্তাদের অপদ্স্থ হওয়ার জ্বালা সহ্য করতে হওয়া।এ সব নিয়ে কম হয়নি।
রাজেন্দ্র নগরের সেই গৌতম গম্ভীরকে এখন দিল্লির ঘরের ছেলে বলে সবাই মানে কি না, এই নিয়ে প্রশ্ন তুললে যে কোটলাসংলগ্ন ডিডিসিএ-তে সবার সম্মতি পাওয়া যাবেই তার কোনও গ্যারান্টি নেই বোধহয়।
রাজেন্দ্র নগরের সেই গৌতম গম্ভীর সোমবার যখন তাঁর ঘরের মাঠে আইপিএলের দল নিয়ে নামবেন, তখন যে তাঁর নামে জয়ধ্বনি উঠবেই ফিরোজ শাহ কোটলার গ্যালারিতে, তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই।
আর যা নিয়ে দু’পক্ষের আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক, সেই কোটলার বাইশ গজ গম্ভীরকে সোমবার কোন তিমিরে নিয়ে গিয়ে ফেলবে, তাও জানা নেই কারও।
কারণ, শনিবার দিল্লির ক্রিকেট কেল্লায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কোটলার বাইশ গজের সেই চিরপরিচিত চরিত্রে না কি বদল এসেছে। এখন সেই লো অ্যান্ড স্লো উইকেটের জমানা শেষ। যা বরাবরই চেয়ে এসেছেন গম্ভীর। কোটলার উইকেটে ম্যাচের ফয়সালা হোক, বরাবর এটাই ছিল তাঁর দাবি। যা নিয়ে কোনও দিনই আগ্রহ দেখাননি দিল্লির ক্রিকেট কর্তারা। অথচ বোর্ডের নির্দেশের এক খোঁচায়, তার চরিত্র কি না পাল্টে ফেলা হল। কোটলার বাইশ গজে ক্যারি ও বাউন্স দুইই রয়েছে। এই উইকেটে যারা খেলেছেন, সেই ডেয়ারডেভিল ক্রিকেটাররাই এই কথা বলছেন। কয়েক দিন আগেই এই উইকেটে চার উইকেট পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকান স্পিনার ইমরান তাহির যেমন বলছিলেন, ‘‘টার্নার নয়। তবে ক্যারি, বাউন্স দুটোই আছে। মাঠটাও ছোট। ব্যাটসম্যানদের ঝড় তোলার পক্ষে আদর্শ।’’ কিন্তু কেকেআরের সহকারী কোচ ও দিল্লির রঞ্জি দলের কোচ বিজয় দাহিয়া তো সেই পুরনো ধারণা নিয়েই বসে। রবিবার টিম হোটেলের লবিতে বসে যেমন বললেন, ‘‘সাধারণত কোটলার উইকেট লো আর স্লো হয়।’’ কিন্তু কোটলার কিউরেটর বদল যে বাইশ গজেও বদল এনে দিয়েছেন, তা জানেন না দাহিয়া!
তা হলে পুনের আন্দ্রে রাসেল ঝড় সোমবার কোটলাতেও ফের উঠতে পারে? দিল্লির এক কর্তা চুপি চুপি বললেন, ‘‘মনে রাখবেন, আমাদেরও কিন্তু যুবরাজ, মযঙ্ক, দুমিনি আছে।’’ যে বাইশ গজ নিয়ে নিজের শহরের ক্রিকেট প্রশাসনের উপর অভিমান গম্ভীরের, সেই বাইশ গজ এ দিন তাঁকে কী দিয়ে ফেরাবে, সেটাই বড় প্রশ্ন। কিন্তু পিচচরিত্র বদলালেও ঘরের ছেলে গম্ভীরের উপর রাগ কমেছে কি না দিল্লির, তা সোমবার রাতে তিনি টস করতে যাওয়ার সময়ই হয়তো বোঝা যাবে।
রবিবার পুনে থেকে শহরে আসার পরও অবশ্য একটি বারের জন্যও পিচ দেখতে কোটলায় গেলেন না নাইট অধিনায়ক। ঘনিষ্ঠ মহলে নাকি জানিয়েছেন, টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে পিচ, পরিবেশ এ সবের কোনও গুরুত্ব নেই। তাই সোমবার সকালে পিচ দেখলেই চলবে। দুপুরে নিজের শহরে ফিরেই সোজা গেলেন বাড়িতে। পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে দেখা করে মনটা চাঙ্গা করতে। উমেশ যাদব তো শ্বসুর বাড়িতেই গিয়ে বসে রইলেন সারা দিন। দাহিয়া বললেন, ‘‘লম্বা টুর্নামেন্ট। একই পরিবেশে থাকতে থাকতে ওদের মানসিক ক্লান্তি এসে যায়। তাই আজ সবাইকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।’’ বিকেলে কারিয়াপ্পা ও বীরপ্রতাপকে এক বন্ধুর সঙ্গে বাইরে বেড়াতে যেতে দেখা গেল। কারিয়াপ্পা বলে গেলেন, ‘‘কেকেআর শিবিরে থাকাটা খুব উপভোগ করছি। দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা।’’ আগের দিনের নায়ক আন্দ্রে রাসেল সারা দিন মূলত ঘুমের উপরই রইলেন। মাঝে বিকেলে লবিতে একটু বেড়াতে এসেছিলেন বলে শোনা গেল।
ডেয়ারডেভিলরাও আগের দিন বিশাখাপত্তনমে ম্যাচ খেলে হোমে ফিরেছেন। বিমানবন্দরের পাশে টিম হোটেল থেকে এদিনও বেরোলেন না কেউ। বিকেলে অবশ্য স্পনসরদের এক ‘মিট অ্যান্ড গ্রিট’ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন সবাই। তাঁরাও খোশ মেজাজে।
কোটলা পড়ে রইল ফাঁকাই। ২৪ ঘন্টা পর ঘরের ছেলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অপেক্ষায়।
ডেয়ারডেভিলসে চিয়ারলিডারদের ‘নো এন্ট্রি’
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
আইপিএল-কে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য যে উপায়গুলি বাতলেছিলেন জগমোহন ডালমিয়া, তার একটা ছিল চিয়ারলিডারদের বাদ দেওয়া। ডালমিয়া বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়ে আসার পরও অবশ্য তা বাস্তবায়িত করা যায়নি। তবে এ বার সেই পদক্ষেপ করতে চলেছে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। সোমবার কেকেআরের বিরুদ্ধে ম্যাচে তাদের পুরো দল নামলেও নামবেন না চিয়ারলিডাররা। রবিবার এ কথা জানিয়ে ডিডি-র সিইও হেমন্ত দুয়া বলেন, ‘‘চিয়ারলিডার নিয়ে হইচই তো অনেক হল। এ বার আমরা নতুন কিছু করতে চাই।’’ নতুন কী? হেমন্ত বলছেন, ‘‘এ বার থেকে আমরা দর্শকদের তাতিয়ে তোলার জন্য শহরের ড্রামারদের আনার কথা ভাবছি।’’ দিল্লিতে একটি ড্রামার সার্কল রয়েছে। যেখানে পেশাদার, অপেশাদার সব রকমের ড্রামারই রয়েছেন। তাঁরাই এ বার থেকে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের ম্যাচে ড্রাম বাজিয়ে স্টেডিয়াম সরগরম করে তুলবেন। আর অ্যাওয়ে ম্যাচে? সেখানে অবশ্য এই ড্রামারদের নিয়ে যাওয়া হবে না। থাকবেন না চিয়ারলিডাররাও।
সৌজন্যে আনন্দবাজার পত্রিকা
Discussion about this post