শারীরিক প্রতিবন্দ্বী মনসুরুজ্জামান খান (৫৬) উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া একটি মামলা চালাতে পারছিলেন না আর্থিক কারণে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধের ওই মামলা তাঁর বাবা চালিয়ে আসছিলেন ১৯৫৬ সাল থেকে।
নিম্ন আদালতের পর হাইকোর্টের রায়ও ওয়ারীর মনসুরুজ্জামানদের পক্ষে আসে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে আপিল করে প্রতিপক্ষ। আর্থিক সমস্যার কারণে আইনি সহায়তার জন্য তিনি গত বছরের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে আবেদন করেন। সংস্থাটি তাঁর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নিয়োগ দেয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগে প্রতিপক্ষের আবেদন (লিভ টু আপিল) খারিজ হয়। ফলে হাইকোর্টের রায়ই বহাল থাকে। ৬০ বছরের এই আইনি লড়াইয়ে মনসুরুজ্জামান সর্বশেষ বিনা মূল্যে সরকারি আইনি সেবার মাধ্যমেও জিতলেন।
সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, মনসুরুজ্জামানের মামলাটিসহ গত এক বছরে (চলতি বছরের জুন পর্যন্ত) জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সুপ্রিম কোর্ট ইউনিট ৩৫০টি মামলা নিয়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৯৬টি, অর্থাৎ নিষ্পত্তির হার ৫৬ শতাংশ। গত এক বছরে আবেদন পড়ে ৩৯৭টি। এর বেশির ভাগ জেল আপিল, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আপিল ও রিভিশন, রিট ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন)।
অসচ্ছল, সহায়সম্বলহীন ব্যক্তিকে বিনা মূল্যে আইনি সহায়তা দিতে ২০০০ সালের ২৬ জানুয়ারি আইনগত সহায়তা প্রদান আইন পাস হয়। এরপর সরকার জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে। তবে প্রয়োজনীয় প্রবিধানমালা ও জনবলের অভাবে সংস্থাটি ছিল অকার্যকর। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে সংস্থাটিকে ঢেলে সাজানো হয়। জেলা আদালতে সংস্থার কার্যালয় স্থাপনের পাশাপাশি স্থানীয় কমিটিও গঠন করা হয়। গত বছরের মাঝামাঝি সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। এই কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, মামলা পরিচালনায় বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগে ৭৭ ও আপিল বিভাগে ৬ জন আইনজীবী কাজ করছেন।
সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির তত্ত্বাবধানে লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের মাধ্যমে আইনগত পরামর্শ, মামলা দায়ের ও পরিচালনার জন্য আইনজীবী নিয়োগ, মামলার গুণাগুণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান ও মামলার আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারিভাবে বহন করা হয়।
আয়ের সীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব: ২০১৪ সালের আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালা অনুসারে সুপ্রিম কোর্টে কোনো মামলায় আইনগত সেবা পেতে হলে আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তির বার্ষিক গড় আয় দেড় লাখ এবং অন্যান্য আদালতের ক্ষেত্রে এক লাখ টাকার ঊর্ধ্বে হবে না। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের সভাপতিত্বে ২২ মে অনুষ্ঠিত সভায় বলা হয়, বর্তমান বাস্তবতায় আইনি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে এক ব্যক্তির গড় আয়সীমা বাড়ানো প্রয়োজন। সভায় লিগ্যাল এইড পাওয়ার ক্ষেত্রে বার্ষিক আয়ের সীমা বাড়িয়ে জাতীয় পরিচালনা বোর্ডে প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
১৪ জুলাইয়ের সভায় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড প্যানেল আইনজীবীর ফি, মামলা ফাইলিং এবং আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ মামলার ধাপ অনুসারে প্রস্তাবিত খসড়া ফি নির্ধারণ করে কাঠামো করা হয়। সভার ওই প্রস্তাব জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থায় পাঠানো হয়েছে।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সহকারী পরিচালক মাসুদা ইয়াসমিন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় পরিচালনা বোর্ডের সভায় আলোচনা হয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
/প্রথম আলো
Discussion about this post