ঘাতককে মানবিকতা দেখালেন…. পেছালেন ফাঁসির ক্ষণ। কথাগুলো নিজেই বললেন সংবাদ সম্মেলনে- ডালিম হোটেলে নির্মমভাবে নির্যাতিতদের পক্ষ থেকে একটি আবেদন আছে- শুনবেন, প্লিজ….
রাজাকার আলবদর খাজাঞ্চি ঘাতক কাশেমকে তার রাজসিক জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোতে অন্তত পেশাব আর ঝুটা কাঁটা হাড় গোড় মাখা ভাত খাওয়ানো হোক- যে বর্বরতা তার নেতৃত্বে ছাত্র সংঘ নেতারা একাত্তরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে করেছে। তাদের মতো বর্বরোচিত নির্যাতন না হয় নাইবা ফিরিয়ে দিলেন! কিন্তু,
মাননীয় আইজি প্রিজন ভেবে দেখবেন,
১৭ নভেম্বর ১৯২০। প্রচণ্ড শীতের রাত। যারা পরদিন ভোরে যুদ্ধক্ষেত্রে চলে যেতেন!
সেই রাতের শেষ প্রহরে পাকিস্তান রক্ষার শ্লোগান দিয়ে মীর কাশেম তার বর্বর বাহিনী নিয়ে আমার বাবাসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে আমাদের বাড়ি থেকে পশুর মতো ধরে দড়ি দিয়ে বাঁধলো ….সেবার ভয়ংকর শীত পড়েছিলো। মীর কাশেম বাহিনী প্রচণ্ড মারতে মারতে খোলা ট্রাকে করে নিয়ে গেলো তাদের টর্চার সেল ডালিম হোটেলে।
নিকষ রাত
অন্ধকার
গিলে খায় –
তীব্র শীত
দুই হাত পিছমোড়া করে বাঁধা-
নভেম্বর-ডিসেম্বর ১৯৭১
পাকিবীজ হায়েনার দল
চাবুক চালিয়ে যায়-
সপাং
সপাং
সপাং
সপাং
বল্- ‘ পাকিস্তান জিন্দাবাদ’
বুকে জয় বাংলা
ঘোলাটে রক্ত চোখে
চেয়ে
বাংলা মায়ের বীর সন্তান
সাইফুদ্দিন খান তার রক্তাক্ত লোনা জিভ থেকে
ঘৃণার থুথু ছিটিয়ে দেন ঘাতকের চোখে মুখে!
ঘাতক মীর কাশেম আলী ওরফে ‘বড়ো ভাই’ তার গোল কালো চশমার আড়ালে
ক্রুর হাসি হেসে ওঠে!
সাপের মতো হিসহিসিয়ে বলে ওঠে,
“রুশভারতের দালালেরা -মুক্তিবাহিনী করিস?”
জবাবে ঋজু সাইফুদ্দিন খানের
রক্তচোখ থির!
মাথায় জংধরা রডে আঘাত করে যায় বর্বর জারজের দল-
দরদর করে রক্ত ঝরছে ….
নিস্তেজ শরীরে সেই রক্ত শুকাতে না শুকাতেই
আবার সাক্ষাৎ যমদূত ‘বড়ো ভাই’ দাঁড়ায় এসে-
আবার বিরতিহীন অত্যাচার!
নির্যাতনে ক্লান্ত
তৃষিত কণ্ঠে বলে…..”পানি…..পানি….”!
ঘৃণ্য হায়েনা মীর কাশেম প্রস্রাব খাইয়েছে সেই বীর অকুতোভয় সন্তানদের!
এমনি একদিন এই বর্বর চাবুক হাতে দাঁড়ায়
কিশোর জসীমের সামনে!
সপাং সপাং সপাং…..
জসীমের ছোট্ট শরীর বেয়ে অবিরল রক্তধারা- ধীরে ধীরে নিষ্প্রাণ হয়ে গেলো!
জসীমের মতো অসংখ্য প্রাণের আত্মদানে আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বদেশ।
যে দেশে আজ আপনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল!
যে দেশ আপনাকে আইজি প্রিজনের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত করেছে।
ঘাতক জারজ সন্তানদের প্রতি মানবিকতা দেখান….তবে যাদের রক্তধারায় আপনার/ আপনাদের এ পদমর্যাদা এবং স্বীকৃতি- সেই বীর সন্তানদের আত্মদানকে যেন আমরা অবমাননা না করি।
মনে রাখতে হবে এদেশের প্রতিটি ধুলিকণা রক্তস্নাত!
পরিশেষে,
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দেশের সর্বোচ্চ আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আপনাদের সকলের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা এবং বিনম্র প্রণাম।
ভাষাসৈনিক এবং মুক্তিযোদ্ধা সাইফুদ্দিন খানের কন্যা সুমি খান
৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬
রাত আটটা
Discussion about this post