প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ জাতীয় ইস্যুতেও যখন দেখি আইনজীবীরা বিভক্ত তখন বিষয়টি আমাকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। আমরা আজকে রুল অব ল’ ভুলে গেছি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ইস্যুতেও আইনজীবীরা এক হতে পারেন না। আইনজীবীরা আজ স্পষ্ঠত দ্বিধাবিভক্ত। একজন একপক্ষে কথা বললে অন্যপক্ষ তার বিপক্ষে কথা বলেন। এভাবে চললে আইনের শাসনের ভবিষ্যত নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন হতে হয়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে সৈয়দ এ বি মাহমুদ হোসেন স্মৃতি সংসদ আয়োজিত সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদ হোসেনের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে বুধবার (২ আগস্ট) এসব মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘৮ম সংশোধনী মামলার সময় আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু আজ স্পষ্টত দ্বিধাবিভক্ত তারা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ইস্যুতে একজন একপক্ষে কথা বললে অন্যপক্ষ তার বিপক্ষে কথা বলেন’। এটা যদি চলে, তাহলে এদেশের আইনের শাসন কি রকম থাকবে?- সেটি নিয়ে আমি খুবই উদ্বিগ্ন’।
সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. কামাল হোসেন। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এম জমির।
বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদ হোসেনের ছেলে হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেনসহ বিচারপতি ও আইনজীবীরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচারককে ভালো রায় লিখতে সাহায্য করবেন আইনজীবীরা। কিন্তু সে ধরনের আইনজীবী দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছেন। এটি খুবই উদ্বেগের’।
‘দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আইনজীবীদের পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করতে হবে। তা না হলে যে সভ্যতা পেয়েছি, তা হারিয়ে মধ্যযুগের বর্বরতা ফিরে আসবে’।
তিনি বলেন, ‘লর্ড ডেনিং একজন প্রখ্যাত বিচারপতি। তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার মতো মানুষেরা ২০০-২৫০ বছর আগে যে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন, একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আজ আমরা সে সাহস দেখাতে পারছি না’।
‘আজ সারা পৃথিবীতে সবাই উগ্রবাদ, ক্ষমতার লড়াই, ব্যবসা, টাকার পাহাড় গড়ায় ব্যস্ত। কেউ আমার নিজের অবস্থান নিয়ে সন্তষ্ট নই’।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘১৯৮২ সালের আগে যে সুপ্রিম কোর্ট দেখেছি, আজ সেই সুপ্রিম কোর্ট নেই। এজন্য আইন পেশায় যারা আছেন, তারাই অনেকাংশে দায়ী। আজ সত্যিকারের দক্ষ আইনজীবী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দিনে দিনে দক্ষ আইনজীবী বিলীন হয়ে যাচ্ছেন। এক শ্রেণীর আইনজীবী শুধুই টাকার দিকে ছুটছেন। মক্কেলের কি হলো- সেদিকে তাদের খেয়াল থাকে না। তাদের টাকা হলেই হলো। তাদের ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গী, যেকোনোভাবে ক্ষমতায় যাওয়া বা টাকা কামানোর দিকে নজর’।
এ পথ পরিহার করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের কাজ করার আহ্বানও জানান সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
Discussion about this post