ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে আটক হওয়ার পরও আইনি দুর্বলতায় খালাস পেয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যরা। সাম্প্রতিক সময়ে দুদকের মামলায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাছান আলীসহ চাঁদাবাজির মামলায় ভাটারা থানার তিন পুলিশ সদস্যকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন ঢাকার পৃথক দুটি আদালত। এদের মধ্যে র্যাব-১ ভাটারা থানার তিন পুলিশ সদস্যকে হাতে-নাতে আটক করেন। রায়ে বিচারক বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত অভিযোগ সাক্ষ্য প্রমাণে প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেওয়া হলো।</p> তবে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেন এবং দুই মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা সাক্ষ্য প্রমাণে ঘটনার সত্যতা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলেও আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।</p> ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাছান আলীর বিরুদ্ধে দুদকের আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ঢাকার ৭ নং বিশেষ আদালত তাকে খালাস প্রদান করেন। রায়ে বিচারক বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন দায়ের করা মামলায় আনীত অভিযোগ সাক্ষ্য প্রমাণে প্রমাণিত করতে না পারায় হাছান আলীকে খালাস প্রদান করা হলো। মামলায় ৯ সাক্ষীর মধ্যে ৮ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন।</p> মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা যায়, ওসি হাছান আলী মেহেরপুর জেলার ডিবির পরিদর্শক (ওসি) থাকাকালে তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্বনামে ও বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিকানা অর্জনের তথ্য পায় দুর্নীতি দমন কমিশন। ওই তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর তাকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনে সম্পদের হিসাব দাখিল করতে নোটিশ প্রদান করেন দুদক। সাত কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় ২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর দুদকের সহকারী পরিচালক কমর কুমার রায় রমনা থানায় দুদক আইনের ২০০৪ সালের এর ২৬(২) ধারায় মামলা করেন।</p> ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ দুদকের উপ-পরিচালক ইসমাইল হোসেন সার্বিক তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রমাণে ঘটনার সত্যতা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন আদালতে। ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই ওসি হাছান আলীর বিরুদ্ধে দুদক আইনের ২০০৪ সালের এর ২৬(২) ধারায় অভিযোগ গঠন করেন।</p> >চাঁদাবাজির মামলায় ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার ৪ নং বিশেষ আদালত ভাটারা থানার তিন পুলিশ সদস্যসহ ৭ জনকে বেকুসর খালাস দেন। রায়ে বিচারক বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত অভিযোগ সাক্ষ্য প্রমাণে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে মামলার দায় থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হলো। আদালতে বিভিন্ন সময়ে ১৬ জন সাক্ষ্য দেন।</p> মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, আবু জাফর তার মামা শাহজাহান সামসু মহাখালীস্থ ফিলিপস বাংলাদেশ লিমিটেডে চাকরি করেন। আসামিরা যোগসাজশে ভাটারা থানার সাঈদনগরস্থ ২৫১২ লিটন মিয়ার বাসা থেকে ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোর ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলার ভিকটিম শাহজাহানকে আটক করে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।</p> ওই দিন তার ভাগনে জাফরকে ফোন করে বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য বলেন ভিকটিম শাহজাহান। শাহজাহানের আত্মীয়রা র্যাব-১ বিষয়টি অবহিত করেন। র্যাব তার আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে শাহজাহানকে উদ্ধার অভিযানে নামে। ইতোমধ্যে বাদীর মামা তাদের ফোন করে বলে এক লাখ টাকা না পারলে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আসতে। তারা টাকা নিয়ে র্যাবের সঙ্গে ভিকটিমের ঠিকানামতে ভাটারা থানার কুড়িল বিশ্বরোডস্থ প্রগতি সরণির উত্তরে সাদা মাইক্রোবাস ঘেরাও করে। মাইক্রোবাস থেকে ভাটারা থানার এএসআই মীর সিরাজুল ইসলাম, এএসআই কায়সার আহম্মেদ, কনস্টেবল আব্দুর রহমান, ড্রাইভার আসাদুজ্জামান ও হাজেরা খাতুনকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরদিন শাহজাহানের ভাগনে আবু জাফর বাদী হয়ে ভাটারা থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন।</p> ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভাটারা থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান ভাটারা থানার এএসআই মীর সিরাজুল ইসলাম, এএসআই কায়সার আহম্মেদ, কনস্টেবল আব্দুর রহমান, ড্রাইভার আসাদুজ্জামান ও হাজেরা খাতুন, সমীর ও সবিতা রদ্রীর বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৫ সালের ২৩ ফ্রেব্র“য়ারি আদালত তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করেন।</p> দুদকের আইনজীবী (পিপি) অ্যাডভোকেট কবির হোসেন বলেন, ‘সাক্ষ্য প্রমাণে ওসি হাছান আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে আমরা সম্ভব হয়েছি। আদালত কী বিবেচনায় তাকে খালাস প্রদান করলেন―তা আমার বোধগম্য নয়।’</p> ঢাকার ৪ নং বিশেষ জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারুক উজ্জাজামান বাইয়ান টিপু বলেন, ‘সাক্ষ্য প্রমাণে ভাটারা থানার তিন পুলিশসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আদালত কী বিবেচনায় তাদের খালাস প্রদান করেন―তা আমার জানা নেই।’ দ্য রিপোর্ট</p>
Discussion about this post