আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে দুই শিশুকে গ্রেফতার করায় তাদের পরিবারকে কেন ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই দুই শিশুকে গ্রেফতার করা শিশু আইনের কয়েকটি ধারার পরিপন্থী কেন ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
অপরদিকে গ্রেপ্তার দুই শিশুর মধ্যে ‘ক’ শিশুটির জামিন দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) ঢাকা শিশু আদালতের বিচারক মো. রুহুল আমিন ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় শিশুটির জামিন মঞ্জুর করেন।
শিশুটির আইনজীবী ফারুক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, শিশুটির জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। জামিন পাওয়ার পর শিশুটির মা বলেন, ছেলের জামিন হওয়াতে তিনি খুশি।
গত ২৪ নভেম্বর ‘লাশের পরিচয় মেলেনি, খুনি সন্দেহে ২ শিশু গ্রেপ্তার’ শিরোনামে শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিকে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই দুটি শিশুর মধ্যে একজনকে জামিন দেওয়া হলো মঙ্গলবার।
সাংবাদিকতার নীতিমালা ও শিশু আইন মেনে প্রতিবেদনে তাদের নাম-পরিচয় দেওয়া হচ্ছে না।
অপর শিশুর বাবা জানিয়েছেন, তার ছেলের জামিনের জন্য তিনি আদালতে আবেদন করবেন।
অন্যদিকে এই শিশু দুটিকে শিশু আইনের ১৩, ১৪, ৪৪ ও ৪৫ ধারা বিধান প্রতিপালন না করে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক এবং বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
রিটকারী আইনজীবী চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আইনজীবী আবদুল হালিম গণমাধ্যমকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘লাশের পরিচয় মেলেনি, খুনি সন্দেহে ২ শিশু গ্রেপ্তার’ এই শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত বৃহস্পতিবার তিনি আদালতে রিট আবেদন করেন। ওই রিটের শুনানি শেষে আদালত এই রুল জারি করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশের ব্যর্থতার জন্য এই দুটি শিশুর পরিবারকে কেন ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, যে শিশু আইনের ৫, ৮ ও ৯ ধারা মোতাবেক দেশের বিভিন্ন আদালতে এবং অন্যান্য স্থানে প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
রিটকারী আইনজীবী আবদুল হালিম আরও বলেন, লালবাগ জোনের উপকমিশনার (ডিসি) এবং কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আগামী ৪ জানুয়ারির মধ্যে এই ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে যে কীভাবে তারা শিশু দুটির বয়স নির্ধারণ না করে আটক করলেন।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এই তিনটি রুলের দিতে বলা হয়েছে।
রুলে বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্রসচিব, ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ডিএমপি কমিশনার, ডিসি লালবাগ, ওসি কামরাঙ্গীরচর, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং প্রবেশন কর্মকর্তা সিএমএম কোর্ট। রিটের পক্ষে শুনানি করেন আবদুল হালিম নিজে এবং সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।
Discussion about this post