নিজস্ব প্রতিবেদক
সম্প্রতি বিভিন্ন মিডিয়াতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে শিক্ষানবিশকে লাঞ্চিতের ঘটনায় সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শাহ আলমকে গ্রেফতারের খবর। খবরটি আদালতপাড়া সহ বিভিন্ন মহলে আলোচিত বিষয় হয়ে গেছে।
সংবাদ মাধ্যমগুলো হতে জানা যায়, এক শিক্ষানবিশ আইনজীবীর গলায় ‘আমি আইনজীবী নই, আমি টাউট’এমন লেখা ঝুলিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত ও সম্মানহানি করার অভিযোগে দায়েরকৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সাবেক এ সভাপতিকে ১৬ মে রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল সবুজবাগের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটাও জানা যায়। ঢাকা টাইমসে মামলাটির বিবরণ সংক্ষেপে তুলে ধরেন, “সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মানিকপুর গ্রামের ফজলুল হক গাজীর ছেলে লিয়াকত আলী ২০১২ সালে সাতক্ষীরা ল’কলেজ থেকে পাস করেন।
২০১৭ সালের ৯ এপ্রিল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল মজিদ (২) এর কাছ থেকে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন। ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সামনে শ্যামনগর সহকারী জজ আদালতে তার নিজেরই দেঃ ২৯/১৯ মামলার সাক্ষী দেওয়ার জন্য তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম (৫), অ্যাড. তারিক ইকবাল তপু, অ্যাড. শাহেদুজ্জামান শাহেদ, অ্যাড. ফুয়াদ হাবিব টিটো পূর্ব পরিকল্পিকভাবে তাকে ভীত সন্ত্রস্ত করে জাপটে ধরে তৎকালীন সভাপতি শাহ আলমের তিন তলার ল’ চেম্বারে নিয়ে যায়।
এ সময় অ্যাড. এম শাহ আলম শিক্ষানবিশ লিয়াকত আলীর গলায় ‘আমি আইনজীবী নই, আমি টাউট’ এমন একটি লেখা ঝুলিয়ে মোবাইলে ছবি তুলে তা নিজ ফেসবুক আইডিতে ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে চারজন আইনজীবী ওই লেখা শেয়ার করেন। কিল, চড় ও ঘুষি মেরে তাকে জখম করেন ওই আইনজীবীরা। পরবর্তীতে তাকে কোর্টে না আসার কথা বলে ও দেওয়ানি ২৯/১৯ মামলায় সাক্ষী দিতে পারবি না, এক কথা না মানলে তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হবে, খুন করা হবে বলে হুমকি দিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত করা হয়।
দেশ বিদেশের বন্ধু ও স্বজনরা ফেসবুকে দেখে তাকে জানানোয় তার চরম সম্মানহানি হয়। এ ঘটনায় গত ১২ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অ্যাড. শাহ আলম, অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম (৫), অ্যাড, তারিক ইকবাল তপু, অ্যাড. শাহেদুজ্জামান শাহেদ, অ্যাড. ফুয়াদ হাবিব টিটোর নামে মামলা করেন শিক্ষানবিশ লিয়াকত হোসেন”।
মামলার ঘটনার বিবরণ শুনে সত্যি-ই আইনজীবী ও আইনাঙ্গনের সেবক হিসেবে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। আজকের শিক্ষানবিশ যারা তারা তো আগামী দিনের আইনজীবী। আজ না হোক কাল সে বারের সদস্য হবে। প্রসঙ্গত কারনে বার কাউন্সিলের নিয়ম মেনে একজন সিনিয়রের সান্নিধ্যে শিক্ষানবিশ কাল অতিবাহিত করছে। একজন সাধারণ পাবলিকও আদালতের অনুমতি নিয়ে নিজের মামলা নিজে পরিচালনা করতে পারে।
আর এই শিক্ষানবিশ তার নিজের মামলায় সাক্ষী দিতে আদালতে দাড়িয়েছিলেন। এটা তো নিয়ম মেনেই সাক্ষী দেওয়ার জন্য আদালতে এসেছিলেন। সেখানে তাকে আইনজীবী দ্বারা ধরিয়ে টাউট সাজানো কতটুকু সম্মান বহন করে আইনজীবী সমাজে? এসব ঘটনা আইনাঙ্গনের জন্য সম্মান বয়ে আনে না বরং কোর্ট স্টাফ সহ সাধারাণ পাবলিক এসব বিষয়কে খুব খারাপ চোখে দেখবে।
যারা শিক্ষানবিশ তারা তো আমাদেরই ভাই, ভাতিজা ছেলে-মেয়ে কিংবা স্নেহাস্পদ। তাদেরকে সঠিক শিক্ষা দিয়ে যোগ্য আইনজীবী হিসেবে গড়ে তুলতে একজন সিনিয়র আইনজীবীর দায়িত্বও বটে। আজ তাদেরকে স্নেহ ভালবাসা দিতে না পারলে কাল যখন তারা সনদ নিয়ে বারের সদস্য হবে তখন সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে সম্মান পাওয়ার আশা করাটা নিরেট বোকামী ছাড়া কিছু-ই নয়।
ইদানিংকালে সারাদেশের অনেক বারে শিক্ষানবিশদের সাথে অসৌজন্য আচরনের কথাও শোনা যায় কিংবা নোটিশ দিয়ে বারে না আসার জন্যও বলা হয়। এমনকি আসল টাউট উচ্ছেদ অভিযানের নামে শিক্ষানবিশদের হয়রানীও করা হয় বলে অনেকের অভিযোগ। এহেন কর্মকান্ড বারের সম্মান ও আইনজীবীদের পেশাগত সদাচারনের মধ্যে পড়ে না। আইনজীবীদের পেশাগত সদাচারণ শুধু তার নিজের সম্মান বহণ করে না; বরং গোটা আইনজীবী সমাজ ও আইনাঙ্গনের সম্মান বয়ে আনে।
পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষানবিশদের লাঞ্চিত করা মানে পুরো আইনজীবী সমাজকে এই লাঞ্চনার দায় বহন করতে হবে। আসুন আমরা সবাই শিক্ষানবিশদের সাথে স্নেহশীল আচরণ করে আইনাঙ্গনের সম্মান সমুজ্জ্বল রাখি।
লেখক: জিশান মাহমুদ, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও হেড অব লেক্স ফার্ম এবং সুনয়না নিঝুম শান্তা, ছাত্রী, আইন বিভাগ, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও রিচার্স টীম, লেক্স ফার্ম।
Discussion about this post