চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহেদ বীরুকে লাঞ্ছিত করেছেন আওয়ামী লীগপন্থী একদল আইনজীবী। আইনজীবী সমিতির নতুন নির্মিত কয়েকটি ভবনের পার্কিং স্পেস গোপনে বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা চড়াও হন সাধারণ সম্পাদকের উপর।
আজ শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে এই ঘটনা ঘটেছে।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের সময় নির্ধারিত আছে। একদিন আগে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের নেতাদের এই ঘটনা নিয়ে আদালত পাড়ায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে বিকেল সাড়ে ৩টায় জরুরি বৈঠক ডেকেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী।
কার্যালয়ে ঢুকে সাধারণ সম্পাদককে লাঞ্চিত করার ঘটনায় সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেছেন কফিল উদ্দিন।
আর বীরু গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক ও প্রতীক কুমার দেব ছাড়াও ২০-৩০ জন সমন্বয় পরিষদের নেতা তার উপর চড়াও হন। তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালসহ শারিরীকভাবে নাজেহাল করেন।
‘তাদের অভিযোগ, আমরা নাকি নতুন ভবনের ২৬টি পাকিং স্পেস গোপনে লটারি ছাড়া বরাদ্দ দিয়ে দিচ্ছি। অথচ আমরা পার্কিং স্পেস বরাদ্দের জন্য কোন লটারির আয়োজন করিনি। তারা আরও অভিযোগ করেন, আমরা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মিলে নাকি গোপনে পার্কিং স্পেসের বরাদ্দ নিয়ে নিচ্ছি। অথচ আমরা পার্কিং স্পেসের জন্য কোন আবেদনও করিনি। তারপরও তারা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।’ বলেন বীরু।
ঘটনার সময় সভাপতি মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন বলে জানান বীরু। সমিতির কার্যালয়ে শুধু বীরু এবং অর্থ সম্পাদক ছিলেন বলে জানান কফিল উদ্দিন।
জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্রের বিধান এবং প্রচলিত রীতি হচ্ছে যেহেতু ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, তাই ডিসেম্বরের পর সমিতি নীতিনির্ধারণী কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন না। কিন্তু এই রীতি ও গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে গত বৃহস্পতিবারও সমিতি লটারি করে নতুন ভবনে চেম্বার বরাদ্দ দিয়েছেন। আজও (শনিবার) তারা লটারি করে চেম্বার বরাদ্দ দিচ্ছিলেন। আমরা গিয়ে প্রতিবাদ করেছি।
‘নিয়ম অনুযায়ী লটারি হতে হবে আবেদনকারীদের সামনে। অথচ আবেদনকারীরা জানেন না, কেউ জানেন না, তারা লটারি করে চেম্বার বরাদ্দ দিয়ে দিচ্ছেন এবং সেটা আবেদনকারীকে টেলিফোনে জানিয়ে দিচ্ছেন।’
সমিতির সাধারণ সম্পাদককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, সামান্য তর্কাতর্কি হয়েছে। অপ্রীতিকর কিছু হয়নি।
এদিকে নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনতে ভোট আদায়ের কৌশল হিসেবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চেম্বার বরাদ্দ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগপন্থী কয়েকজন আইনজীবী।
সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এবং এস এম জাহেদ বীরু আওয়ামী লীগের একাংশ ও বাম সমর্থিত সমমনা আইনজীবী সংসদ থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত বছর নির্বাচনে তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরেছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত সমন্বয়ের প্রার্থীরা।
কফিল উদ্দিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে মুজিবুল হক নামে একজন আইনজীবী অতীতে সমিতির সভাপতি হয়েছিলেন। তিনি সবসময় উত্তেজিত থাকেন। তার অভ্যাসই হচ্ছে সবসময় মাস্তানি করা। অথচ আমরা আইনজীবীরা যে একটি মর্যাদাপূর্ণ পেশায়, এই পেশাকে যে তিনি কলংকিত করছেন, এটি তিনি বুঝতে চান না। এবারও তিনি স্বভাব অনুযায়ী অশ্লীল, অশ্রাব্য, খারাপ ভাষায় সাধারণ সম্পাদককে আক্রমণ করেছেন।
সমিতির জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যুর বিষয় নিয়ে সভায় আলোচনা হবে।
বাংলানিউজ
Discussion about this post