বর্তমানে আমাদের দেশের যে পরিস্থিতি তাতে ঘড়ের বাইরে বের হতেই ভয় লাগে। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন বাসে আগুন দেয়া হচ্ছে। রাজনীতির আগুনে পুড়ে দগ্ধ হচ্ছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু তারপরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের বাইরে বের হতে হচ্ছে। এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের প্রতিদিনকার আয় রোজগার দিয়ে সংসার চলে। তাদের তো বাইরে বের হতেই হবে।
এতো গেলো দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা। এর বাইরেও আপনি বিভিন্ন ভাবে আগুনে পুড়তে পারেন যেমন, রান্নার চুলা, গরম পানি, গরম ছাই, ইস্ত্রি, গরম করার যন্ত্রপাতির ইত্যাদি।
পোড়া ও ঝলসানো আমাদের জীবনে একটি সাধারণ দুর্ঘটনা। আপনার একটুখানি অসর্তকতার কারণে এ ধরনের মারাত্মক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারেন।
মানুষের শরীর পুড়ে যাবার কিছু কারন-
- আগুনে পোড়া
- বর্তমান সময়ে সবচেয়ে মারাত্মক হল জ্বলন্ত বাসের ভেতরে থেকে পোড়া বা পেট্রোল বোমার আঘাতে।
- উত্তপ্ত বাষ্প বা ফুটন্ত তরলে পোড়া
- ইলেক্ট্রিক বা বৈদ্যুতিক প্রবাহে পোড়া – শুষ্ক উত্তপ্ত বস্তু যেমন,ইস্ত্রি
- কড়া রাসায়নিক দ্রব্য – এসিড বা ক্ষার
- রান্নার পরে গরম ছাই, তুষ ইত্যাদি
- বিকিরণজনিত দগ্ধতা – অতিরিক্ত সূর্যরশ্মিতে দীর্ঘক্ষণ বা বিকিরণ যন্ত্রের বিকিরণের জন্য হয়ে থাকে
আগুনে পোড়া রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা কিভাবে দিবেন-
- সর্বপ্রথম রোগী পোড়ার উত্স বা আগুন তার থেকে দূরে সরাতে হবে।
- পোড়া স্থানের আঁটসাট কাপড়, আংটি থাকলে সেটি খুলে ফেলতে হবে।
- স্বল্পমাত্রার পোড়ার ক্ষেত্রে পোড়ার অংশটিকে ঠাণ্ডা পানিতে কিছুক্ষণের জন্য ডুবিয়ে রাখতে হবে৷ (ঠাণ্ডা পানি ক্ষত বৃদ্ধি ও তার গভীরতা প্রতিহত করে অঙ্গটিকে বাতাসের সংস্পর্শ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে) শরীরের যে সকল অংশ পানিতে ডুবানো সম্ভবপর নয় সে সব অংশের জন্য বরফ শীতল পট্টি বা বরফ জড়ানো কাপড় দিয়ে আবৃত করে ফেলতে হবে কিছুক্ষনের জন্য। পোড়া অংশ কোনক্রমেই ডলাডলি করা যাবে না এবং ফোসকা ফাটানো বা তুলে ফেলা যাবে না।
- স্বল্প মাত্রার পোড়া হলে ক্ষত স্থানে হালকা করে মলম লাগানো যেতে পারে। আর ক্ষত বড় হলে পানি থেকে ওঠানোর পর মলম লাগিয়ে পরিষ্কার প্যাড বা কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজ করতে হবে যেন পোড়া অংশটি বায়ুর সংস্পর্শে আসতে না পারে।
- ফোসকা থাকলে সাবধানে ব্যান্ডেজ করা উচিত যেন ফোসকাগুলি গলে না যায়।
- পোড়া রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানো ভালো।
- হালকা পোড়া, মাথা ও মুখে পোড়ার ক্ষেত্রে ক্ষতস্থান খোলা রাখতে হবে।
কিছু পরামর্শ-
- রোগীর অবস্থা যদি বেশী খারাপ হয় তবে প্রয়োজনে তাকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে হবে৷
- পোড়া জায়গা বা ক্ষত স্থানটি পরিষ্কার রাখতে হবে৷
- পোড়া যায়গাতে যেন কোনোভাবেই ধুলো বালি বা মাছি বসতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷
সতর্কতা-
- অনেক সময় দেখা যায় আমারা নিজেরাই ডাক্তার বনে যায়। অনেকে তো আবার পোড়া ক্ষতে ডিম, পুরাতন ঘি, মাখন, বিশেষ ধরনের কবিরাজি তেল ব্যবহার করে থাকেন। মনে রাখবেন এগুলি ব্যবহার ভীষণভাবে ক্ষতিকর এমনকি এটি আপনার জীবননাশের আশংকা বহন করে থাকে।
- আমার ব্যক্তিগত মতামত হবে, নিজেরা ডাক্তার না সেজে কোন ঔষুধ সেবন বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই রেজিষ্টার চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।
সর্বোপরি সাবধানে থাকুন এবং আপনার পড়িবার কে সাবধানে দেখেশুনে রাখার চেষ্টা করুন।
Discussion about this post