কলকাতার এই সময় পত্রিকার সাংবাদিক রূপক বসু গতকাল লিখেছেন, ‘কিন্তু সাকিব মিয়াঁ, এদিনের পর নিশ্চয়ই বুঝবেন, ওয়ানডেতে দশ ওভার এবং আইপিএলে চার ওভার বোলিং করা আর টেস্টে ভারতীয় ব্যাটদের বিরুদ্ধে বোলিং এক নয়।’
আর সাকিবও যে বড্ড নচ্ছার! কথাটা ঠিকমতো মাটিতে পড়ার আগেই, ফতুল্লার নির্ভেজাল ব্যাটিং উইকেটের মাটি থেকেই বিদায় করে দিলেন ধাওয়ান, বিজয়, রোহিত আর রাহানের মতো ‘ভারতীয় ব্যাট’ দের! এমনকি জুবায়ের হোসেনে মতো জুনিয়র দলে অনিয়মিত বোলারও কিভাবে জানি গুগলি নামক এক অতি মামুলি ডেলিভারিতে বিরাট কোহলি আর হৃদ্ধিমানকে আলবৎ বোকা বানিয়ে ছাড়লেন!
দেড়শো পেরুনো ‘গব্বর’ এর উচ্ছ্বাসহীন উদযাপণ তার চোখে পড়েছে, আশা করি আজ সাকিবের বলে গড়বড় করা ‘গব্বর’দের এক একটা উইকেট নেবার পর সাকিবেরও ‘এ আর এমন কি’ ধরনের নির্লিপ্ত উদযাপণও তার নজর এড়িয়ে যায়নি!
আসলে, শুধু ফতুল্লা টেস্টের প্রথম দিনের বোলিং দেখেই ঐ ভদ্রলোক সাকিবের টেস্ট ম্যাচে বোলিংয়ের পারদর্শীতা সম্পর্কে সূক্ষ্ম খোঁচা দিয়েছেন! আর ব্যাপারটা খুব একটা অস্বাভাবিক কিছুও নয়। আইপিএল আর ওয়ানডে ম্যাচের দৌরাত্ম্যের এই যুগে তিনি নিজেই হয়তো টেস্ট ক্রিকেটটা দেখার খুব একটা সময় পাননা। পেলেও বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান নামক এক বোলারের বোলিং নিশ্চয়ই দেখেন না, হোক না সে আইসিসির টেস্ট র্যাংকিংয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার!
এমনকি ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোতে সাকিবের টেস্ট ক্রিকেটের পরিসংখ্যান ঘাটার মতো অপ্রয়োজনীয় সময়ও তিনি ব্যস্ততার মাঝে বের করতে পারেন না। তা নাহলে তিনি নিশ্চয়ই জানতেন, এই টেস্ট বোলিং না জানা ছেলেটাই এর আগে টেস্ট ক্রিকেটে ১৪ বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন! এর মধ্যে একবার আবার শেবাগ, লক্ষণ, যুবরাজ সিং এর মতো ভারতীয় ‘ব্যাট’রাও তার ৫ উইকেট শিকার আটকাতে পারেননি! আসলে ২০১০ এর এতো পুরনো ইতিহাস যে কেউ ভুলে যেতেই পারে!
টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র অস্ট্রেলিয়া (তাদের সাথে কোন টেস্ট এখনো সাকিব খেলেননি) বাদে সকল দেশের বিরুদ্ধেই যে ছেলেটার অন্তত একবার করে ৫ উইকেট শিকার করা আছে, এটাও বা কি এমন গুরূত্বপূর্ণ তথ্য?
সাউথ আফ্রিকার মাটিতে পর পর দুই টেস্টেই (দুই টেস্টেই মাত্র এক ইনিংসেই বোলিংয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন) যে তিনি জ্যাক ক্যালিস ও এবিডি ভিলিয়ার্স কে দুবার আউট করা সহ, দুবারই ৫ (একবার ৬ উইকেট) উইকেট নিয়েছিলেন, এমন তথ্য না জানাও নিশ্চয়ই অপরাধ নয়! এর মধ্যে দ্বিতীয় টেস্টে যে হাশিম আমলার উইকেটও ছিল, এসব কথা মনে করে আসলে কি লাভ? আর যাই হোক, টেস্ট ক্রিকেটে তারা নিশ্চয়ই ‘ভারতীয় ব্যাট’দের চেয়ে আহামরি কোন ব্যাটসম্যান নন! আর ২০০৮ এর এই ইতিহাসও যে বড্ড বেশি সেকেলে!
সাকিবের ‘যোগ্যতা’ নিয়ে আর কি বলবো! একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও দশ উইকেট শিকার—এই বিস্ময়কর কীর্তি ক্রিকেট ইতিহাসে সাকিবের আগে দু বার মাত্র ঘটেছে। সেই ১৯৮০ সালে ইয়ান বোথাম এবং ১৯৮৩ সালে ইমরান খান করেছিলেন কাজটা। সাকিব করেন গত বছর, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সেদিক থেকে সাকিব এখন টেস্ট অলরাউন্ডারদের এলিট ক্লাবের সদস্য। আর আপনি প্রশ্ন তোলেন তার যোগ্যতা নিয়ে। সিরিয়াসলি?
আসলে এসব পুরনো কাসুন্দি শুধুমাত্র আমার মতো বাংলাদেশের পাগলাটে ক্রিকেট সমর্থকদের জন্যই সংরক্ষিত। সবার এসব না জানলেও চলবে। আর কেউ যদি ভুলে জেনেই ফেলেন, তার নিশ্চয়ই এই উপলব্ধিটা হয়ে যাবে, ‘আগে ভাই নিজে বুঝি, এরপর না হয় সাকিবকে বোঝাবো!’-(অনুপম হোসেন পূর্ণম)প্রিয়
Discussion about this post