গত বছরের সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, হাইকোর্ট বিভাগে আরও আটজন অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগের। কিন্তু গত আট মাসেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। শুধু তাই নয় উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না গত দুই বছর ধরে।
সর্বশেষ ১০ জন অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি এদের মধ্য থেকে আটজনের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়। অপর দু’জনের মধ্যে বিচারপতি জেএন দেব চৌধুরী চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৫ ডিসেম্বর মারা গেছেন এবং বিচারক ফরিদ আহমেদ শিবলীকে স্থায়ী করা হয়নি।
এদিকে সাতজন বিচারকের মধ্যে একজন বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদ গত ২ জানুয়ারি অবসরে গেছেন। আরও ছয়জন অবসরে যাবেন। এর মধ্যে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা আগামী ৭ জুলাই অবসরে যাবেন। হাইকোর্ট বিভাগ থেকে বাকি পাঁচজন, যথাক্রমে বিচারপতি শামীম হাসনাইন ২৩ এপ্রিল, বিচারপতি মো. মিজানুর রহমান ভূঁঞা ৬ সেপ্টেম্বর, বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ২৯ মে ও বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হক ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন। তিনজন বিচারক কাজ করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। গুরুতর অসুস্থ রয়েছেন চারজন বিচারক। ফলে বিচারপতি সংকট দেখা দিয়েছে। উচ্চ আদালতে বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা সোয়া চার লাখের বেশি। এ কারণে আপিল বিভাগেও আরও বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
বর্তমানে আপিল বিভাগে সাতজন এবং হাইকোর্ট বিভাগে ৮৭ জন বিচারক রয়েছেন। এদিকে প্রতিদিন বাড়ছে মামলার সংখ্যা। আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক সংকট রয়েছে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। কেননা বাংলাদেশে বর্তমানে ১০ লাখ মানুষের জন্য রয়েছেন মাত্র ১০ জন বিচারক। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ না হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টে মামলা ও জনসংখ্যার অনুপাতের ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে। আইনজীবীদের মতে, বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমাতে দ্রুত বিচারক নিয়োগ করা প্রয়োজন।
সাধারণত হাইকোর্টের সিনিয়র বিচারপতিরাই আপিল বিভাগে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। ফলে আপিল বিভাগের এ শূন্যতা পূরণ করতে গেলে হাইকোর্টেও বিচারকের শূন্যতা দেখা দেবে। আইনজীবীরা তাই দুটি বিভাগেই দ্রুত বিচারপতি নিয়োগের দাবি করছেন। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আপিল বিভাগে ১১ জন বিচারপতি থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে রয়েছেন সাতজন বিচারপতি। সর্বশেষ গত ১৪ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম অবসরে যান এবং বিচারপতি বজলুর রহমান ছানা গত ১ জানুয়ারি মারা যান। আপিল বিভাগে বর্তমানে ১৩ হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন। চারটি পদ শূন্য। সংবিধানে উচ্চ আদালতে বিচারকের কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করা নেই। প্রধান বিচারপতির পরামর্শ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন সময় বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রধান বিচারপতির কার্যালয় থেকে আটজনের নাম প্রস্তাব করে সুপারিশ পাঠানো হয়। এ তালিকা আইন মন্ত্রণালয় হয়ে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলে শিগগিরই বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অনেক দিন উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ নেই। এখন বিচারক নিয়োগ করা দরকার। যতদূর জানতে পেরেছি, ইতিমধ্যেই নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।’
উল্লেখ্য, গত ২৪ ডিসেম্বর বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা জানিয়েছিলেন, আমেরিকায় ১০ লাখ মানুষের জন্য ১০৭ জন, কানাডায় ৭৫ জন, ইংল্যান্ডে ৫১ জন, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১ জন ও ভারতে ১৮ জন বিচারক রয়েছেন। অথচ বাংলাদেশে ১০ লাখ মানুষের জন্য মাত্র ১০ জন বিচারক রয়েছেন। জনসংখ্যা ও মামলার সংখ্যা অনুপাতে বিচারক নিয়োগ দেওয়া এখন সময়ের দাবি মাত্র।
Discussion about this post