বিডি ল নিউজঃ অনেকটা বাংলা সিনেমার কাহিনীর মত মনে হলেও ইহা সম্পূর্ণ সত্যি এবং বাস্তব ঘটনা। দেড় বছর আগে বিয়ে হয়ে রাজধানীর পল্লবীর টেকেরবাড়ি এলাকায় শ্বশুরবাড়ি এসেছিলেন চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার মেয়ে তানিয়া আক্তার (২২)।
বাহরাইন প্রবাসী স্বামী রতন মিজি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শিগগিরই তানিয়াকেও বাহরাইন নিয়ে যাবেন। কিন্তু তার আগেই তানিয়া চলে গেলেন না ফেরার দেশে। শুক্রবার সকালে শ্বশুরবাড়ি থেকে তানিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রাথমিকভাবে এ ঘটনাকে আত্মহত্যা মনে করা হলেও তানিয়ার পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি, তানিয়ার বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছিলেন না তার শাশুড়ি ও দেবর। তাই তারা তানিয়াকে খুন করেন।
তানিয়ার বাবা মো. বরকতউল্লাহ, মা নূরজাহান বেগম ও স্বজনরা জানান, তানিয়ার স্বামী রতনের আয়ে তার মা, স্ত্রী ও বেকার ভাই টুকুর সংসার চলত। তাই তানিয়া বিদেশ চলে গেলে রতন আর সংসারের খরচ বহন করবেন না বলে ভেবেছিলেন তারা।
তানিয়ার বিদেশ যাওয়া নিয়ে এর আগে একাধিকবার শাশুড়ি ও দেবরের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার তানিয়া বিদেশ যাওয়ার জন্য রতনের কাছে পাসপোর্টের ফটোকপি পাঠান। সে দিন রাতের কোনো এক সময় তানিয়াকে খুন করে লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ করেন তার পরিবার।
তানিয়ার মামাত ভাই কাউছার আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘যদি তানিয়াকে খুনই না করা হবে তাহলে শুক্রবার থেকেই তার শাশুড়ি ও দেবর পলাতক রয়েছেন কেন? তানিয়ার আত্মহত্যা করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। এটা হত্যাকাণ্ড। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’
এদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনও হাতে আসেনি। প্রতিবেদন পেলে বোঝা যাবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে মামলা করা হবে বলে কাউছার জানিয়েছেন।
এদিকে তানিয়ার আত্মহত্যা করার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন রতনের ভগ্নিপতি মো. রাসেল।
তিনি দ্য রিপোর্টকে জানান, তানিয়ার সঙ্গে তার স্বামীর ভালো বোঝাপড়া ছিল। রতন দেশে আসতে চেয়েছিলেন। এর মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেন তিনি আসবেন না তানিয়াকেই বিদেশ নিয়ে যাবেন।
রাসেল আরও বলেন ‘আমার শ্বশুর (রতনের বাবা) দুই বিয়ে করায় তিনি এই বাসাতে তেমন একটা থাকেন না। শাশুড়ি, শালা টুকু ও তানিয়াই বাসায় থাকতেন। টুকু প্রতিদিনই নেশা করে তানিয়ার বিদেশ না যাওয়ার ব্যাপারে ঝগড়া করত। আমার বাসা তাদের বাসার পাশে হওয়ায় আমি কয়েকবার আমার শাশুড়ি ও টুকুকে ব্যাপারটা বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, রতনের বউ রতন বিদেশ নিয়ে গেলে আপনাদের সমস্যাটা কী? শেষে কোনো না কোনোভাবে টুকুই তানিয়াকে খুন করেছে আমার ধারণা।’
এ ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুকুজ্জামান মল্লিক দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এখনই আমরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছি না। আমি আত্মহত্যারও কিছু নমুনা পেয়েছি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলেই বোঝা যাবে আসলে ঘটনাটা কী ঘটেছিল। এরপর মামলা করা হলে আমরা অবশ্যই মামলা নেব।’
সূত্রঃ দ্য রিপোর্ট
Discussion about this post