সন্দেহভাজন হিসেবে যেকোনো মুহূর্তে গ্রেপ্তার করার অধিকার দেয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারার পক্ষে সরকারের অবস্থান সুস্পষ্ট করলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনারও মৃদু সমালোচনা করেছেন তিনি। সাদা পোশাকে গ্রেপ্তার না করা, গ্রেপ্তারের পরপরই গণমাধ্যমের সামনে না আনার বিষয়ে আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল তা আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত বলে বর্ণনা করেছেন। এ নিয়ে হতাশাও প্রকাশ করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের একগুচ্ছ নির্দেশনার বিরুদ্ধে সরকারের করা আপিলের ওপর শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ইউনিফর্ম না পরে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তারের ঘটনা ভয়াবহ। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার করেই গণমাধ্যমের সামনে হাজির করছেন না। এটি গ্রহণযোগ্য নয়।
শুনানি শেষে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ্রিংকালে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জঙ্গিবাদ, গুপ্তহত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ শক্তভাবে না করা হলে সমাজে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি আরো ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, কয়েকদফা সুপারিশসহ হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করেছিলাম, আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে, ২৪ মে রায়ের জন্য রাখা হয়েছে। আমরা বলেছি যে অপপ্রয়োগের ব্যাপারে আদালত যদি কোনো রকম নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয় সেটা ঠিক আছে, কিন্তু আদালত আইন সংশোধনের জন্য ছক করে দিয়ে কোনো রকম অর্ডার দিতে পারেন না।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা আরো বলেন, ৫৪ ধারার মূল বক্তব্য হলো আসামিদের সুরক্ষার ব্যাপারে নানা রকম বক্তব্য। কিন্তু সমাজে সাধারণ মানুষ ও আসামি উভয়য়ে বসবাস করে। অপরাধের ফলে যারা নাকি ভিকটিম হয়, তাদেরও কিন্তু অধিকার আছে, আসামির একটি অধিকার আছে। আদালতের কাজ হলে এই দুটির ভেতর একটা ব্যালেন্স করা।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখন বর্তমানে যেমন জঙ্গিবাদ, মুক্ত চিন্তার বিরুদ্ধে অবস্থান ও নানা রকমভাবে গুপ্ত হত্যা-এগুলো যেভাবে হচ্ছে এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ শক্তভাবে না করা হয়, শুধুমাত্র আসামির অধিকার প্রকটভাবে দেখা হয় সমাজে আইন-শৃঙ্খলার অবনতিআরও ঘটবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, এপ্রিলে ওই রায় হওয়ার কয়েক মাস পরে হাই কোর্টে আরেকটি রায় হয়। এর লেখক বর্তমান প্রধান বিচারপতি। আমি বলেছি পরবর্তী যে রায়টি সঠিকভাবে নানা রকম সমস্যাগুলো বিবেচনা করে কিছু নির্দেশনামূলক আদেশ দেয়া হয়েছে। এটি হলো হাইকোর্টের এখতিয়ারের ভেতর থেকে রায়। ব্ল্যাস্টের দায়ের করা মামলায় যে রায় সেটি আইনসম্মত হয়নি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, হতাশার ব্যাপারটি হলো কতকগুলো নির্দেশনা- গ্রেপ্তার করার পর পুলিশ কী করবে, পুলিশ আসামিকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিয়ে যাওয়ার আগে কী করবে ইত্যাদি, ইত্যাদি বিস্তারিত নির্দেশনা ছিল। আদালত বলেছেন, এই নির্দেশনাগুলো এখন ঠিকমত পালন করা হচ্ছে না।
Discussion about this post