আদালতের নির্দেশ ও গণবিক্ষোভ সত্ত্বেও সাতটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসন অনড় অবস্থানে রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন, কেবল সর্বাধিক নিরাপত্তা নীতিমালা নিশ্চিত হলেই ভিসা দেওয়া হবে।
মুসলিমদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের অভিযোগ হোয়াইট হাউস অস্বীকার করেছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের ব্যাপক নিন্দা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৬টি অঙ্গরাজ্যের শীর্ষ আইন কর্মকর্তারা (অ্যাটর্নি জেনারেল) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওই নির্দেশকে অসাংবিধানিক বলেছেন। ট্রাম্প সরকার ভিসাধারী ব্যক্তিদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতে বলেছিলেন। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের বেশ কয়েকজন বিচারপতি ওই উদ্যোগ সাময়িকভাবে আটকে দিয়েছেন।
ট্রাম্প গত শুক্রবার ওই নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক শরণার্থী প্রকল্প ১২০ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। সিরিয়ার শরণার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন। পাশাপাশি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সাতটি দেশের সব নাগরিকের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ স্থগিত হয়ে পড়েছে। যাঁরা আকাশযাত্রার মধ্যপথে ছিলেন, বৈধ ভিসা ও অন্যান্য কাগজপত্র সঙ্গে থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে অবতরণের পরপরই তাঁদের আটক করা হয়।
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিমানবন্দরে গত শনিবার হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেন। তাঁদের মধ্যে আইনজীবীরাও ছিলেন। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে আইনি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের বাইরে এবং নিউইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারের সামনেও বিক্ষোভ হয়েছে।
শরণার্থীদের পাশাপাশি ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিকেরা ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাবেন না। এসব দেশের কারও দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকলে তিনিও ওই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত হবেন।
মার্কিন গ্রিন কার্ডধারী বৈধ নাগরিকেরা বর্তমান নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন না বলে হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ রেইন্স প্রিবাস আশ্বাস দিলেও ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়নের পরিপ্রেক্ষিতে সে রকম কয়েকজনকে আটক করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ট্রাম্প গত রোববার টুইটারে ‘চরম যাচাই-বাছাইয়ের’ কথা লিখলেও পরে এক বিবৃতিতে আশ্বাসমূলক কথাবার্তা বলেছেন: ‘এটা ধর্মের বিষয় নয়, এটা সন্ত্রাসের ব্যাপার এবং আমাদের দেশকে নিরাপদ রাখার জন্য। আমরা আগামী ৯০ দিনে সবচেয়ে নিরাপদ নীতিমালা বাস্তবায়নের পর আবার সব দেশকে ভিসা দেব।’
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়নে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে বলে যে সমালোচনা হচ্ছে, সেটা প্রত্যাখ্যান করে প্রিবাস রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ৩ লাখ ২৫ হাজার ভ্রমণকারীর মধ্যে মাত্র ১০৯ জনকে আটক করা হয়েছে। আবার তাদের অধিকাংশকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু প্রিবাসের ওই বক্তব্যে রিপাবলিকান পার্টির সবাই আশ্বস্ত হননি। পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক মার্কিন সিনেট কমিটির প্রধান বব কর্কার বলেন, নির্বাহী আদেশ ‘দুর্বলভাবে বাস্তবায়ন’ হয়েছে, বিশেষ করে গ্রিনকার্ডধারীদের ক্ষেত্রে। আর প্রশাসনকে সঠিকভাবে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
ডেমোক্রেটিক সিনেট মাইনরিটি নেতা চাক শুমার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে এখন ‘আগের তুলনায় কম মানবিক, কম নিরাপদ, কম আমেরিকান’ মনে হচ্ছে। এ অবস্থা উল্টে দিতে ডেমোক্র্যাটরা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেবেন।
Discussion about this post