গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামি হাজিরের বিধান না মানার অভিযোগ উঠেছে নগর পুলিশের বিরুদ্ধে। সুনির্দিষ্টভাবে এই অভিযোগের কথা উল্লেখ করে চট্টগ্রামের একটি আদালত সম্প্রতি তিনজন শিবির কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের করা রিমাণ্ড আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু আক্তার হত্যা মামলার আসামিদেরও গ্রেফতারের পর যথাসময়ে আদালতে হাজির না করার অভিযোগ উঠেছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট মো.ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, আসামিকে আনা-নেয়া বাদ দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজিরের বাধ্যবাধকতার কথা সুস্পষ্টভাবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারায় উল্লেখ আছে। এক্ষেত্রে পুলিশ যদি গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে আদালতে হাজির করতে ব্যর্থ হয় সেটা ফৌজদারি কার্যবিধির গুরুতর লঙ্ঘন। এক্ষেত্রে আসামি আদালতের কাছে বেনিফিট পায়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই বাকলিয়া থেকে গ্রেফতার পাঁচ শিবির কর্মীকে আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমাণ্ডে নেয়ার আবেদন করেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের এস আই আফতাব হোসেন।
বাকলিয়া থানার মামলায় (নম্বর: ১৩(০৭)২০১৬) এজাহারনামীয় তিন শিবির কর্মী হল, মো.আব্দুল মোতালেব, মো.আনোয়ার হোসেন, মো.মাহবুবুর রহমান সোহেল, মো.ছালাম সিদ্দিক এবং মিজানুর রহমান।
আদালতে আসামি চালানের নথিতে উল্লেখ করা হয়, নাশকতারমূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনার বৈঠক থেকে পাঁচ শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে ১৫ জুলাই রাত ১২টার সময়। অথচ চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী পত্রিকায় তাদের ১১ ও ১৩ জুলাই গ্রেফতারের কথা উল্লেখ করে ১৫ জুলাই সকালে প্রকাশিত পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নাজমুল হোসেন আজাদীতে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে যথাসময়ে আসামি হাজির না করার কারণ দেখিয়ে এবং আসামিদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (২) ও (৩) ধারায় সুনির্দিষ্ট কোন অপরাধের কথা এজাহারে উল্লেখ না করায় তাদের রিমাণ্ড নামঞ্জুর করেন।
আসামি চালানের নথিতে অগ্রবর্তী প্রতিবেদনে স্বাক্ষর আছে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি কমিশনার (দক্ষিণ) মো.কামরুজ্জামানের।
জানতে চাইলে কামরুজ্জামান বলেন, অভিযান যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আসামি পুলিশ হেফাজতে রাখা বেআইনি নয়। এক্ষেত্রে সংবাদপত্রে খবর আসতেই পারে। সেটা ধর্তব্যের বিষয় বলে মনে করিনা।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী বলেন, অভিযানের ধারাবাহিকতার একটা বিষয় আছে। পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হলে তিনজন আগে কিংবা দুজন পরে হতেই পারে। এক্ষেত্রে আসামি চালানের সময় অভিযানের ধারাবাহিকতার কথা উল্লেখ থাকে। রিমাণ্ড কিংবা জামিন শুনানিতে আমরাও বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করি।
এর আগে গত ৪ জুলাই পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু আক্তার হত্যা মামলার অন্যতম সন্দেহভাজন কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার সংবাদ সম্মেলন করেন।
পান্না অভিযোগ করেন, ২২ জুন মুছা ও তার ভাই সাইদুল ইসলাম সিকদারকে পুলিশ পান্নার সামনে থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এর ১০ দিন পর সাইদুলকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করে পুলিশ আদালতে হাজির করে। মুছার এখনও কোন খোঁজ মেলেনি।
গ্রেফতার অভিযানে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বন্দর থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম এবং পুলিশ পরিদর্শক নেজাম উদ্দিনকে (বতর্মানে ইমিগ্রেশনে কর্মরত) পান্না আক্তার চিনতে পেরেছিলেন বলে জানিয়েছেন।
তবে মহিউদ্দিন সেলিম এবং নেজাম উদ্দিন উভয়েই বলেছেন, তারা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নন। তদন্তের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং তাদের গ্রেফতার অভিযানে যাওয়ার প্রশ্নই আসেনা।
এছাড়া মুছাসহ গ্রেফতার হওয়া কয়েকজনকে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে নিয়ে বাবুল আক্তারের মুখোমুখি করার কথাও গণমাধ্যমে এসেছিল। কিন্তু এরপর চারজনকে আদালতে হাজির করা হয় এবং দুজনের ক্রসফায়ারে মৃত্যু হলেও মুছার খোঁজ এখনও মেলেনি।
জানতে চাইলে মিতু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি কমিশনার মো.কামরুজ্জামান বলেন, আগে-পরে গ্রেফতারের বিষয়ে গণমাধ্যমে যেসব তথ্য এসেছে সেগুলো সত্য নয়। আর মুছাকে আমরা এখনও গ্রেফতার করতে পারিনি। গ্রেফতার করতে পারলে অবশ্যই তাকে আদালতে হাজির করতাম।
গত ৫ জুন সকালে নগরীর ও আর নিজাম রোডে নিজ বাসার অদূরে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মিতু আক্তার।সুত্র বাংলানিউজ
Discussion about this post